সিএনএম প্রতিনিধিঃ
উত্তরবঙ্গের ঐতিহ্যবাহী বৃহত্তম রেলওয়ে জংশন স্টেশন সান্তাহার। নওগাঁ ও বগুড়া এই জেলার মোহনায় অবস্থিত রেলওয়ে স্টেশনটি। ১৮৮০সালে স্থাপিত হলেও নানা জটিলতার কারণে এখনো স্টেশনে আধুনিকতার তেমন কোন ছোঁয়া স্পর্শ করেনি। কিন্তু রেলের জায়গা অবৈধ ভাবে ভাড়া দিয়ে মাসে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিরা।
বৃটিশ আমলে নির্মিত স্থাপত্যের ক্ষতবিক্ষত চিহ্ন নিয়ে যাত্রীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে এই সান্তাহার স্টেশনটি। স্টেশনের অধিক গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে রেল গেইট। অবৈধ ভাবে জনগুরুত্বপূর্ণ রেলগেট, প্লাটফরমের আশেপাশে এবং রেললাইনের উপড়সহ বিভিন্ন জায়গায় গড়ে তোলা হয়েছে প্রায় ৩শতাধিক অবৈধ দোকানপাট ও স্থাপনা। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহযোগীতায় এক শ্রেনীর প্রভাবশালী রাজনৈতিক মহলের ছত্রছায়ায় গড়ে তোলা হয়েছে এসব অবৈধ দোকান ও স্থাপনা। রেলগেটের উত্তরে স্বাধীনতা মঞ্চ ঘেঁষে রেললাইনের উপড় গড়ে তোলা হয়েছে পুরাতন কাপড়ের বিশাল মার্কেট ঢাকা পট্টি।
রেললাইনের উপর বসে কলা, ডিম, ফলমূলসহ বিভিন্ন ফেরিওয়ালার দোকান। প্রতিদিন এসব অবৈধ প্রতিটি দোকান ও স্থাপনা থেকে প্রকার ভেদে ৩০-৪০টাকা অবৈধ ভাবে চাঁদা আদায় করা হয়। আর এ চাঁদা আদায় করেন স্থানীয় মতি নামের এক ব্যক্তি। তার হাত দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ১০হাজার টাকা চাঁদা আদায় করা হয়। আবার চাঁদার টাকা দিতে কারো দেরি হলে মতি এসে হুমকি দেয় শুধু চাঁদা নয় এখন থেকে দোকানের ভাড়াও দিতে হবে। অস্বীকৃতি জানালে রেলওয়ে থানায় ধরে নিয়ে যায়। এখানে জোর যার মুল্লুক তার। এমনই অভিযোগ করেন এক ভুক্তভোগী। মাস শেষে এই সব আদায়কৃত অর্থ সংশ্লিষ্ট কিছু কর্তৃপক্ষসহ প্রভাবশালী ব্যক্তিদের পকেটে যায় বলে স্থানীয় দোকানদারদের অভিযোগ।
জানা যায়, প্রতিদিন এই স্টেশনের উপর দিয়ে ব্রড ও মিটার গেইজের যাত্রীবাহী ও মাল ট্রেন মিলে প্রায় অর্ধশতাধীক ট্রেন দেশের বিভিন্ন স্থানে চলাচল করে। ফলে মারাত্মক ঝুঁকিতে চলছে ট্রেন। ঝুঁকিতে থাকে সাধারন মানুষ ও অন্যান্য যানবাহন। যে কোন মুহুর্তে ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের দূর্ঘটনা। রেলওয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ স্টেশন পরিদর্শনে আসার আগেই
কৌশলে এসব অবৈধ অস্থায়ী দোকানগুলো সরিয়ে রেলগেটসহ আশে পাশের এলাকা ফাঁকা করেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও স্থানীয় কিছু প্রভাবশালি মহল। পরিদর্শন শেষে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ ফিরে যাওয়ার পর পুনরায় বসানো হয় ওই সব স্থানে অবৈধ দোকান ও স্থাপনা। অর্থাৎ “যেই লাউ সেই কদু” এমন কথাই বলেন সাধারণ মানুষ। সচেতন মহল বলছেন, জনগুরুত্বপূর্ণ এলাকায় এসব অবৈধ দোকান ও স্থাপনা বসিয়ে একদিকে যেমন রেলওয়ের জায়গা দখল হয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে লেভেল ক্রসিং বা রেলগেটের ভিতর দিয়ে ট্রেন, সাধারন মানুষ ও অন্যান্য যানবাহান চলাচলে মারাত্বক ঝুঁকিপূর্ন হয়ে পড়েছে। ইতিপূর্বে কয়েক দফায় ট্রেন দূর্ঘটনার কবলে পড়লেও অবৈধ স্থাপনা স্থায়ীভাবে উচ্ছেদের ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি। বর্তমানে আরও বেশি আকারে অবৈধ দোকান বসানোর কারনে ট্রেন ও পথচারী চলাচলে ভয়াবহ আকার ধারন করেছে। তাই অবিলম্বে এসব গড়ে উঠা অবৈধ দোকান ও স্থাপনা স্থায়ীভাবে উচ্ছেদ করে ফাঁকা করার জন্য স্থানীয়রা দাবী জানিয়েছেন উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট। চাঁদা আদায় কারী মতি নামের ব্যক্তির সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি ব্যস্ত আছি বলে ফোন কেটে দেয়। পরে আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
সান্তাহার রেলওয়ে থানার ওসি মনজের আলী জানান, থানায় কাউকে ধরে নিয়ে আসার অভিযোগ সত্য নয়। রেলের জায়গা থেকে অবৈধ দোকান উচ্ছেদের ক্ষমতা রেল কর্তৃপক্ষের। আমরা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে আইনগত সহায়তা করবো মাত্র। তবে রেল কর্তৃপক্ষ চাইলে এই সব অবৈধ দোকান ও স্থাপনা ইচ্ছে করলেই স্থায়ী ভাবে উচ্ছেদ করতে পারেন।
সান্তাহার স্টেশন মাস্টার হাবিবুর রহমান হাবিব জানান, আমি এখানে নতুন এসেছি। এই চাঁদা তোলার বিষয়ে আমার জানা নেই। অনেক আগে থেকে এটা চলে আসছে। এখানকার স্থানীয়, প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিরা বিষয়টা নিয়ন্ত্রণ করছেন। তবে এইসব দোকানের উচ্ছেদের পক্ষে আছি। দোকান তুলে নেওয়ার জন্য তাদেরকে নোটিশ করা হয়েছে।
পাকশী বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি উপ-সচিব (ম্যাজিস্ট্রেট) মোস্তাক জানান, আগামী ২/৩ দিনের মধ্যে একটা নোটিশ দেওয়া হবে। যারা বড় ব্যবসায়ী তাদের রাজস্ব আদায়সহ অবৈধ স্থপনা উচ্ছেদের আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বাংলাদেশ রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন জানান, অবৈধ দোকান বসানো সম্পর্কে আমার জানা ছিলো না। যদি রেল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে লিজ না নিয়ে থাকে তাহলে বিষয়টি দেখে পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।