নকল অস্বাস্থ্যকর ঘি উৎপাদনকারী কে এই মামুন?
মোঃ আলমগীর সেলিমঃ
ঘি কে বলা হয় বাঙালি বাড়ির অবিচ্ছেদ্য অংশ। বাঙ্গালিয়ানায় ঘি থাকবে না এটা হতেই পারে না। একটা সময় ঘি ছিলো প্রাচীন রাজা বাদশাহদের খাবার। তবে সময়ের সাথে সাথে অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে। ঘি এখন আমাদের প্রায় সকলের হাতের নাগালে পৌছে গিয়েছে। ঘি এর নানাবিধ উপকারিতা জানার পর থেকে দিন দিন ক্রমশই এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। ঠিক এই কারণেই কিছু অসাধু ব্যবসায়ি এটির সুযোগ নিয়ে নকল ঘি তৈরি করছে যা আমাদের শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। তাই আমাদের সকল কে সচেতন থাকতে হবে।
বর্তমান সময়ে বাজারে নকট অস্বাস্থ্যকর ঘি এর ছড়াছড়ি। নিত্য প্রয়োজনে মানুষ যখন হাট-বাজার, পাড়া, মহল্লার ওলি গলি পাইকারী ও খুচরা মুদি দোকান হতে একটু ভালো মানের গাঁওয়া ঘি খোঁজে তখন ভালোর নামে আসল ঘি এর পরিবর্তে বেশির ক্ষেত্রেই নকল ঘি কাস্টমারকে দোকানদাররা দিয়ে থাকেন। দোকানদাররা বাজারের নকল ঘি এ বেশি লাভ হয় বলে আসল ঘি এর পরিবর্তে মানহীন নকল ঘি বিক্রি করেন যাহা খাঁটি বলে চ্যালেঞ্জ ও করেন দোকানিরা। আর ঐ সকল ঘি তৈরি করছেন একটি সিন্ডিকেট। ঐ সিন্ডিকেটের গডফাদার মামুন রাজধানীর যাত্রাবাড়ি এলাকায় বিভিন্ন ফ্ল্যাট বাসা বাড়ি ভাড়া নিয়ে ভাড়াকৃত রুমটিকে কারখানা বানিয়ে প্রস্তুত করেন নামী দামী ব্রান্ডের প্রতিষ্ঠানের বোতল, কৌটা, বইরম ও ব্রান্ডের সাথে তাল মিলেয়ে হুবহু লেবেল ব্যবহার করে তাদের তৈরিকৃত ঘি ঐ সকল পাত্রে ঢুকিয়ে বাজারজাত করছে। আসল গাঁওয়া ঘিতে দুধের মিশ্রণের দেখা মিলে নকল ঘিতে শুধু পাম ওয়েল, ডালডা, সয়াবিন তেল এর মিশ্রন দিয়ে তাতে ঘি এর কালার রং ও ঘ্রাণ জাতীয় কেমিক্যাল মিশ্রন করে নামী দামী ব্রান্ডের কৌটায় ঢুকিয়ে তাহা দেশের বাজারগুলোতে সরবরাহ করে নকল খাদ্যদ্রব ঘি আসল গাঁওয়া ঘি এর দামে বিক্রি করছে। যাহা সাধারণ মানুষের চেনার উপায় থাকে না। ঐ সকল নকল খাদ্যদ্রব্য ঘি এর চাহিদা বাড়াতে বিভিন্ন এলাকার পাকুশি বাবুর্চি দালাল রয়েছে। ঐ সকল বাবুর্চি দালালরা যে এলাকায় পাকের কাজ করেন সেই এলাকাতে চুক্তিবদ্ধ কোম্পানীর নকল মাল আসল বলে দেখিয়ে দেন। তাদের দেখানো মতে মানহীন খাদ্যপণ্য বেশির ক্ষেত্রে অনুষ্ঠানগুলোতে সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে করে তারা গোপনে পারসেন্টেস ও পেয়ে থাকেন। এ রকম সারা দেশে শত শত দালাল রয়েছে। নাম গোপন রাখা স্বত্তে¡ বাবুর্চি জলিল মিয়া, হাসান আলী, করিম মিয়া, ওবায়দুল, সালাম, রাসেল, মনির সহ অনেকেই অভিযোগ তুলে বলেন, বাজারে নকল ঘি এর জন্য মানসম্মত খাদ্যদ্রব্য মানহীন হয়ে পরে। এবং তাহারা পারসেন্টেজ পায় বলে কোম্পানীর বানানো নকল ঘি প্রচার করে চাহিদা বাড়ান। তবে মামুন যে কোম্পানী গুলোর পণ্য নকল করেন কোম্পানীগুলোর মধ্যে রয়েছে আসল রাধুনী, আসল বাঘাবাড়ি, পাকুয়ান ও গ্রেড, মামুন বাঘাবাড়ি, রেডকাউ, মিল্কভিটা, আড়ং সহ ইত্যাদি ব্রান্ডের সাথে তাল মিলিয়ে মামুনের প্রতিষ্ঠানে প্রস্তুত হচ্ছে নকল ঘি। তাহা সারা বাংলাদেশে সরবরাহ করা হচ্ছে। মামুনের নকল প্রতিষ্ঠানের খাদ্যদ্রব্য তৈরিতে গোপনে সহায়তা করে যাচ্ছেন স্থানীয় আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর অসাধু কর্মকর্তারা। নকল ঘি তৈরি করায় মামুনের বিরুদ্ধে বিগত দিনে ভোক্তা অধিকার এর ভেজাল বিরোধী অভিযানে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেড এর হাতে জেল, জরিমানা ও হয়েছিল মামুনের। কিছুদিন তার অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও বর্তমানে যাত্রাবাড়ি থানাধীন ধোলাইপাড় সহ বিভিন্ন এলাকায় মানহীন ভেজাল ঘি খাদ্য দ্রব্য তৈরির প্রতিষ্ঠান চালু করেছে।
এ বিষয়ে ব্যবসায়ী মামুন-এর মোবাইলে কথা হয়, তিনি জানান আমি বাঘাবাড়ি, রাধুনীসহ অন্যান্য ঘি কিনে এনে বিক্র করি।
নকল ঘি চেনার উপায় জানতে হবে। আজকের এই লেখার মাধ্যমে আপনারা কীভাবে নকল ঘি চিনবেন এবং নকল ঘি কীভাবে আমাদের শরীরের ক্ষতি করে থাকে এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
নকল ঘি চেনার ১২ টি উপায়
বাজারে গেলে হাতের নাগালেই এখন বিভিন্ন ব্যান্ড এর ঘি পাওয়া যায়। এমনকি দোকানিদের কাছে আপনি হোম মেইড ঘি ও পাবেন। তবে মনে প্রশ্ন থেকেই যায়, এই ঘি কতটুকু খাটি। ঘি সম্পর্কে পর্যাপ্ত ধারনা না থাকার কারনে আমরা অনেকেই এসব অসাধু ব্যবসায়ীর নকল ঘি এর জালে জরিয়ে পরি এবং নিজ হাতে নিজের স্বাস্থ্য কে ক্ষতির মুখে ফেলি। তবে কিছু নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরন করেই আপনি বুঝতে পারবেন আপনার কেনা ঘি টি আসল নাকি নকল! চলুন জেনে নেওয়া যাক-
বিশেষ গন্ধ
ঘি এর একটি নির্দিষ্ট সুঘ্রান রয়েছে। বিশেষ করে খাটি গাওয়া ঘি এর গন্ধ এবং স্বাদের জন্যই এটি সকলের এতো পছন্দ। ঘি কেনার সময় ঘি এর উপরিভাগের কৌটা বা ঢাকনা খুলে এর গন্ধ যাচাই করে নিন। আসল ঘি থেকে সুন্দর মিষ্টি ঘ্রান পাবেন। তবে নকল বা ভেজাল মিশ্রিত ঘি এর মাঝে আপনি ডালডা এবং আর্টিফিশিয়াল গন্ধ পাবেন।
স্বাদ
ঘি এর স্বাদ নির্ভর করে এটির তৈরি পদ্ধতির উপর। ঘি সাধারনত নিরপেক্ষ্য স্বাদের হয়ে থাকে। এটি খুব বেশী মিষ্টি স্বাদের না আবার একেবারে নোনতা ও না। তবে বাজার থেকে কিনে আনা ঘি তে যদি আপনি অতিরিক্ত মিষ্টি স্বাদ অনুভব করেন তাহলে বুঝে নিবেন সেটি ভেজাল মিশ্রিত ঘি। সাধারনত ঘি তে চিনি বা হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড মেশানো হলে সেটি খেতে তুলনামুলক বেশী মিষ্টি মনে হয়।
রং বা কালার
খাটি ঘি সাধারনত দুইটি কালারের হয়ে থাকে।
· হলুদ ঘি- এটি গরুর দুধের তৈরি ঘি।
· সাদা ঘি- মহিষের দুধের তৈরি ঘি।
খাঁটি গাওয়া ঘিয়ে রং সাধারণত সোনালি বা গোল্ডেন ইয়েলো হয়ে থাকে। তবে আর্টিফিসিয়াল ঘিয়ে কিন্তু এই বিষয় থাকে না। আসল ঘি দেখা মাত্রই লোভোনীয় এর ভাব আসে।
ঘনত্ব
আসল ঘি চেনার একটি প্রধান উপায় হলো ঘিয়ের ঘনত্ব। যার মাধ্যমে খুব সহজেই আসল ঘি সম্পর্কে জানা যায়। ঘি হল খুবই মসৃণ ও ক্রিমি জাতীয় খাবার। যা ঘরের তাপমাত্রায় খুব তারাতারি গলে যাবে আবার ফ্রিজে রাখলে চট করে জমে যাবে। চামচে নিলে গলে যাবে এবং এর মধ্যে কোন চিটচিটে ভাব থাকবে না। কিন্তু নকল ঘিয়ে চিটচিটে ভাব থাকবে হাতে নিলে আঠালো ভাব অনুভব হবে। এতেই বুঝা যাবে ঘি টা নকল।
পরিস্কার বা স্বচ্ছতা
ঘি দেখতে মূলত ক্লিয়ার বা স্বচ্ছ। খাটি ঘি তে কোনো রকমের ময়লা থাকে না। এটি একদম পরিষ্কার হয়ে থাকে। যদি ঘি এর মাঝে কোনো নোংড়া আবরন দেখতে পান বুঝবেন এটি অস্বাস্থ্যকত পরিবেশে তৈরি হওয়া নকল ঘি ।