টিপকাণ্ডে সারাদেশে উত্তেজনার রেশ কাটতে না কাটতেই টিপ নিয়ে ফের বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন অপর এক পুলিশ কর্মকর্তা। এ ঘটনায় সিলেট জুড়ে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। আপত্তিকর ওই পোস্টের পর ক্ষুব্ধ হয়েছেন সুশীল সমাজের লোকজন। অবস্থা বেগতিক দেখে ওই পুলিশ কর্মকর্তা নিজের ফেসবুক আইডি থেকে পোস্টটি ডিলেট করে দেন।
যদিও তার আগেই এই পোস্ট ভাইরাল হয়ে গেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ঘটনার নায়ক ওই পুলিশ কর্মকর্তা নাম লিয়াকত আলী। তিনি সিলেট জেলা কোর্ট পুলিশে পরিদর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
জানা যায়, সিলেট জেলা কোর্ট পুলিশে পরিদর্শকের দায়িত্বে থাকা লিয়াকত আলী সোমবার (৪ এপ্রিল) তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি থেকে টিপ ইস্যু নিয়ে প্রতিবাদ করা পুরুষদের নিয়ে তীর্যক মন্তব্য করেন। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে তাকে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব থেকে অপসারণের দাবিও তোলা হয়েছে।
সোমবার দুপুরে লিয়াকত তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি লেখা পোস্ট করেন। সেখানে তিনি টিপ ইস্যুতে প্রতিবাদ করা পুরুষদের নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন।
লিয়াকত আলীর ফেসবুক পোস্টটি ঢাকা পোস্টের পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো- ‘প্রসঙ্গ : টিপ নিয়ে নারীকে হয়রানী।
ফালতু ভাবনা : (18+) টিপ নিয়ে নারীকে হয়রানি করার প্রতিবাদে অনেক পুরুষ নিজেরাই কপালে টিপ লাগাইয়া প্রতিবাদ জানাচ্ছে। কিন্তু আমি ভবিষ্যৎ ভাবনায় শংকিত। বিভিন্ন শহরে অনেক নারীরা যেসব খোলামেলা পোষাক পরে চলাফেরা করেন তার মধ্যে অনেকেরই ব্রায়ের ওপর দিকে প্রায় অর্ধেক আনকভার থাকে। পাতলা কাপড়ের কারণে বাকি অর্ধেকও দৃশ্যমান থাকে। এখন যদি কোনো পুরুষ এইভাবে ব্রা পরার কারণে কোনো নারীকে হয়রানী করে তবে কি তখনও আজকে কপালে টিপ লাগানো প্রতিবাদকারী পুরুষগণ একইভাবে ব্রা পড়ে প্রতিবাদ করবেন ???
পুলিশের এ কর্মকর্তার এমন মন্তব্যে হতবাক সিলেটের সুশীল সমাজ। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, টিপ নিয়ে একজন পুলিশের আপত্তিকর মন্তব্যে যেখানে বিক্ষুব্ধ সারাদেশ সেখানে সিলেটের মতো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির শহরে দায়িত্ব পালন করা একজন পুলিশ সদস্যের এমন মন্তব্য উদ্দেশ্য প্রণোদিত।
এমন চিন্তা-চেতনার লোক রাষ্ট্রের মূলনীতি বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। তাই পুলিশের মতো সংবেদনশীল বিভাগ থেকে লিয়াকত আলীর মতো ব্যক্তিদের অপসারণ করতে হবে।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য লিয়াকত আলী বলেন, আমি কথা বলেছি প্রতিবাদের ধরণ নিয়ে। পুরুষ কপালে টিপ পরে প্রতিবাদ করবে কেন? মূলত এই বিষয়টিকে মানতে পারিনি বলেই এমন পোস্ট প্রদান করেছি।
কোর্ট পরিদর্শক লিয়াকত আলীর ফেসবুক স্টেটাস সম্পর্কে জানতে চাইলে সিলেট জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এডিসি মিডিয়া) লুতফুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি এবং তা খতিয়ে দেখছি। এটি একান্তই তার ব্যক্তিগত ব্যাপার।তবে তার এই স্টেটাস যদি কাউকে অবমাননার হয় তাহলে আমরা অবশ্যই তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিব।