এস.ইসলামঃ
রাজধানীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দোয়েল চত্বর এলাকায় অবস্থিত প্রাচীন হাজী শাহবাজের সমাধি ও মসজিদ। মোঘল শাসনামলে শাহজাদা আযমের সময়কালে ১৬৭৯ খ্রিস্টাব্দে এটি নির্মিত হয়। মসজিদটি হাইকোর্টের পিছনে এবং তিন নেতার মাজারের পূর্ব পার্শ্বে অবস্থিত। এর চত্বরে হাজী শাহবাজের সমাধি অবস্থিত। এতে তিনটি গম্বুজ রয়েছে। তিনটি গম্বুজ আছে বিধায় অনেকে মসজিদটিকে তিন গম্বুজ মসজিদও বলেন। রাস্তা থেকে এই গম্বুজগুলোই দৃষ্টিগোচর হয়।এখন থেকে প্রায় চারশ বছর আগের কথা। এ জায়গাটির ওপর মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনা করেন জনৈক সুফি সাধক ও ধনী ব্যবসায়ী। নাম হজরত হাজী খাজা শাহবাজ। তাঁর নামেই বেশি পরিচিত মসজিদটি। শোনা গেছে কোনো এক সময় এই মসজিদে জ্বীনেরাও নামাজ আদায় করতো।
ঐতিহাসিক মুনতাসীর মামুনের মতানুসারে, হাজী শাহবাজ ছিলেন একজন অভিজাত ধনী ব্যবসায়ী, যিনি কাশ্মীর হতে সুবা বাংলায় এসে টঙ্গী এলাকায় বসতি স্থাপন করেন। তৎকালে এখানকার সুবাহদার ছিলেন শাহজাদা মুহম্মদ আজম।
মসজিদের কয়েক জায়গাতেই সাইনবোর্ডে লেখা আছে, “১৬৭৯ সালে তিনি জীবিত থাকাকালেই এই মসজিদ ও নিজের মাজার নির্মাণ করেন।”মসজিদ ভবনটির স্থাপত্যে উত্তর ভারতীয় মোগল-রীতি লক্ষ্য করা যায়। কালো পাথর দিয়ে তৈরি করা হয়েছে এর মিম্বর এবং চৌকাঠ। মসজিদটি নির্মাণ করা হয় শায়েস্তা খানের আমলের স্থাপত্যশৈলীর অনুকরণে। মসজিদটি দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থে যথাক্রমে প্রায় ৬৭ ফুট দীর্ঘ এবং ২৭ ফুট চওড়া।চারটি অষ্ট কোণাকৃতির মিনার চোখে পড়ে মসজিদটির চারকোণে। তিনটি প্রবেশপথ আছে পূর্ব পাশের দেয়ালে। আর একটি করে দরজা দেখতে পাওয়া যায় দক্ষিণ ও উত্তর দেয়ালে। প্রতিটি দরজার চৌকাঠ কালো পাথর দিয়ে তৈরি করার কারণ আছে। যাতে জলবায়ুর আর্দ্রতা এগুলোর কোনো ক্ষতি বা সমস্যা করতে না পারে। এজন্য পাথরের আবরণ দেয়া হয় দেয়ালে। তিনটি আকর্ষণীয় মেহরাব দেখতে পাওয়া যায় ভেতরের পশ্চিম দেয়ালে। দেখতে বেশ সুন্দর প্রধান মেহরাবের অলংকরণ। মুসা খাঁ মসজিদ কিংবা লালবাগ কেল্লার মসজিদের মতোই মসজিদটির স্থাপত্য নকশা। খাজা শাহবাজের সমাধি দেখতে পাওয়া যায় মসজিদের আঙিনাতেই। অবশ্য এখন আর কেবল সমাধি নেই। সমাধির উপরে সবুজ রঙের মখমল কাপড় বিছিয়ে নিয়ে মাজার হয়ে গিয়েছে। লোকে ওখানে গিয়ে ফুল দিচ্ছে, প্রার্থনা করছে। অবশ্য হাজী শাহবাজ জীবিত অবস্থাতেই নিজের মাজার তৈরি করে গিয়েছেন।
স্থানীয়রা নানা নামে চেনেন এ মসজিদটিকে। মসজিদটি লাল মসজিদ নামে পরিচিতি পায় কোনো এক সময় এর দেয়ালের রং লাল ছিল বলে। এখানে জ্বীনেরা নামাজ পড়তো বলে কথিত আছে, তাই কেউ একে চেনেন জ্বীনের মসজিদ বলে। কেউবা চেনেন জোড়া মসজিদ নামে।
মসজিদটিকে মানুষ যে নামেই চিনুক না কেন, এটি হাজী খাজা শাহবাজ নামেই বেশি পরিচিত। এর পরিবেশ খুবই নিরিবিলি। মসজিদটি একদম নির্জন না হলেও সুনসান নিরবতা । রাজধানীর শব্দ দূষণের প্রকটতা এখানে নেই।পুরান ঢাকাসহ অনেক দূর-দূরান্ত থেকে এসেও অনেকে এখানে নামাজ আদায় করেন।
কালের বিবর্তনে মসজিদটির ঐতিহ্য ও জৌলুস হারিয়ে যাচ্ছে । অযত্ন-অবহেলায় স্থাপনাটির এখন প্রায় জীর্ণদশা। যদিও এটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আওতাধীন একটি মসজিদ, তারপরও এর তেমন সংস্কার কাজ চলে না। অনেক জায়গার চুন-সুরকি খসে পড়ছে। অনেক স্থানে দেখা দিয়েছে ফাটল। আসল লাল রঙ তো হারিয়ে গেছে বহু আগেই। তবে পুরনো স্থাপনার জন্য এই রংটিই আমার বেশি পছন্দ।