সোমবার, ২৬ মে ২০২৫, ০১:২৫ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ
"ফটো সাংবাদিক আবশ্যক" দেশের প্রতিটি থানা পর্যায়ে "ক্রাইম নিউজ মিডিয়া" সংবাদ সংস্থায় ১জন রিপোর্টার ও ১জন ফটো সাংবাদিক আবশ্যক। আগ্রহী প্রার্থীরা  যোগাযোগ করুন। ইমেইলঃ cnm24bd@gmail.com ০১৯১১৪০০০৯৫

ঝালমুড়ি বিক্রি করেই চলে মর্জিনার সংসার

  • আপডেট সময় শনিবার, ১৩ মার্চ, ২০২১, ১০.৪৪ এএম
  • ৩৯৩ বার পড়া হয়েছে
ঝালমুড়ি বিক্রি করেই চলে মর্জিনার সংসার

সিএনএম প্রতিবেদকঃ
মাদারীপুরের জীবন সংগ্রামী এক নারী মর্জিনা বেগম (৩৫)। শহরের পথে পথে ঝাল মুড়ি বিক্রি করে চলে তার অভাবী সংসার। দারিদ্রতার নির্মম কষাঘাতে ক্ষত-বিক্ষত মর্জিনা। স্বামীর মৃত্যুর পর সংসারের হাল ধরেছেন নিজেই। স্বল্পপুজি নিয়ে নিজেই পথে নেমেছেন ঝালমুড়ি বিক্রি করতে। শহরের বিভিন্ন স্থানে ঝালমুড়ির বাটি হাতে তাকে দেখা যায় অলি-গলিতে।
খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেছে, সদর উপজেলার মস্তফাপুর ইউনিয়নে মেলগেট এলাকায় মর্জিনার বসবাস। বিয়ে হয়েছিল মুন্সিগঞ্জের ছালাম বেপারীর সাথে। মর্জিনার স্বামী ছালাম বেপারী পেশায় ছিলেন একজন বেলুন বিক্রেতা। রাস্তায় হেঁটে হেঁটে বেলুন বিক্রি করতেন তিনি। এক ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে ছিল তাদের অভাবের সংসার। ভিটে মাটি হীন স্বামীর সংসারে একটি ভাড়া বাড়িতে টেনেটুনে চলছিল তাদের ৫ সদস্যের সংসার। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে স্বামী মৃত্যুরবণ করেন। এরপর মর্জিনা বেগমের সংসারে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার। নিরুপায় হয়ে ছেলে মেয়েদের নিয়ে চলে আসেন বাবার বাড়ি মস্তফাপুরে। এখানে এসেও দারিদ্রতা পিছু ছাড়েনি তাকে। বাবার বাড়িতে ভিটে ছাড়া সহায় সম্পদ বলতে আর কিছু নেই। মর্জিনার বড় ছেলে শাওন (১৩) দিন মজুরের কাজ করলেও তাতে চলে না সংসার। জীবিকার তাগিদে পথে নামতে বাধ্য হয় মর্জিনা। অবশেষে স্বল্পপূঁজি নিয়ে নিজেই নেমে পড়েন ঝালমুড়ি বিক্রি করতে। লোকলজ্জার ভয়ে ঝালমুড়ি বিক্রি করতে নিজ এলাকা ছেড়ে চলে আসেন মাদারীপুর শহরে। এখানে এসে ডিসি ব্রিজ ২ নং শকুনি এলাকায় একটি টিনের বাসায় ভাড়া থাকেন তিন সন্তান নিয়ে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন স্থান ঘুরে ঘুরে ঝালমুড়ি বিক্রি করেন জীবন সংগ্রামী এই নারী। ঝালমুড়ি বিক্রি করে দিনে আয় ২শ থেকে ৩শ টাকা। তা দিয়েই কোনো রকমে ঘুরছে মর্জিনার অভাবী সংসারের চাকা।
শহরের এক গলির মোড়ে কথা হয় মর্জিনার সাথে। জানতে চাইলে অসহায় মর্জিনা বেগম বলেন, ‘সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আমি ঝাল মুড়ি বিক্রি করি। অনেক কষ্ট হয় সংসার চালাতে। আমার সংসার চালানোর মত কোন পুরুষ মানুষ নেই। তিনটা বাচ্চা নিয়ে আমি খুবই অসহায়। পরি না মানুষের দ্বারে-দ্বারে ভিক্ষা করতে। ভিক্ষা চাইলে মানুষ আমাকে লজ্জা দিবে। তাই আমি রাত নেই দিন নেই ছেলে মেয়েদের বাসায় রেখে পথে পথে ঘুরে ঝাল মুড়ি বিক্রি করি। নানান মানুষে নানান কথা বলে; তাতে আমি মনে কিছু করি না। আমার ছেলে-মেয়েদের জন্যই তো করি। যদি কেউ আমার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় অথবা কেউ যদি সম্মানজনক একটা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেয় তাহলে হয় তো এ অবস্থা থেকে মুক্তি মিলবে।’
মর্জিনার কাছে ঝালমুড়ি কিনতে আসা এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমি আজ পর্যন্ত দেখিনি কোন মহিলা ঝালমুড়ি বিক্রি করে। সমাজের বিত্তবান যারা আছেন তাদের কাছে আমার অনুরোধ এই অসহায় মহিলার পাশে এসে দাঁড়ালে হয় তো মর্জিনার অসহায় জীবনে একটু স্বচ্ছলতা ফিরে আসতে পারে।’ একই আহবান জানালো ঝালমুড়ি ক্রেতা রাসেল হাওলাদার, ওয়াহিদুজ্জামান কাজল নামের দুই যুবক।
মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুদ্দিন গিয়াস বলেন, ‘মর্জিনা বেগমকে আত্মকর্মসংস্থান তৈরি করে দেয়ার মত কোন প্রকল্প আমাদের হাতে নেই। তবে সবাই যদি এগিয়ে আসে তাহলে আমি ব্যক্তিগত ভাবে তাকে সাহায্য করবো। পরবর্তীতে সরকারি কোন প্রকল্প আমাদের হাতে আসলে তার বিষয়টি বিবেচনায় রাখবো।’

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2015-2025
Theme Developed BY ThemesBazar.Com