ডিএমপি পুলিশ কমিশনারসহ একাধিক পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নির্যাতিতা এক নারীর অভিযোগ প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে
বিশেষ প্রতিবেদকঃ
নির্যাতিতা এক নারী ন্যায় বিচার না পাওয়ায় ডিএমপি কমিশনার সহ একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা ও ধর্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন প্রধান উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, মহা-পুলিশ পরিদর্শক এর কাছে।ঐ নারী যে অভিযোগটি দায়ের করেছেন অভিযোগে উল্লেখিত সূত্র নির্যাতিত নারী বলেন, আমি আমার ছেলে শান্ত বয়স-৬ কে নিয়ে অভাব অনটনে দুঃখে কষ্টে দিনাদিপাত করিতেছি। আমার বর্তমান ঠিকানায় বসবাস করাকালীন আমার স্বামী সাথী নামে এক মেয়েকে বিয়ে করে আমার সন্তান শান্ত (৬) সন্তানকে সহ আমাকে ফেলে চলে যায়। পরবর্তীতে আমি আমার ছেলেকে নিয়ে অসহায় হয়ে পরি। এরিমধ্যে বাড়িওয়ালাকে দুই মাসের বাসা ভাড়া দিতে না পারায় বাড়ি ওয়ালা আমার প্রায় ৪ লক্ষ টাকার মালামাল বাসায় রেখে বাসা হতে এক কাপড়ে আমাকে মারধর করে এবং আমার সন্তানকে সহ আমাকে বাসা হতে বের করে দিয়ে রুমে তালা মেরে দেয়।
তখন আমি কোথায় যাব কান্নাকাটি করলে বাড়িওয়ালার ছেলে এনামুল ইসলাম ইনুর দয়া হলে সন্তান সহ আমাকে শনিআখড়া শেফালী নামক এক ভাড়াটিয়া মহিলার বাসায় আমার ছেলে সহ আমাকে থাকার ব্যবস্থা করে দেয় শেফালীর বাসার সকল কাজকর্ম আমি করে দিলে আমাকে ও আমার সন্তানকে থাকা খাওয়া সহ ও মাসিক ৩ হাজার টাকা আমাকে বেতন দিবে বলিয়া শেফালী শনিআখড়া ডিশগলি, বাবু হাজীর বাড়ি, হোল্ডি-অজ্ঞাত, থানা-যাত্রাবাড়ি তার ছয়তলা ভাড়াটিয়া বাসায় আমাকে নিয়ে যায় সেখানে গিয়ে বেশ কিছুদিন থাকা অবস্থায় মাঝে মধ্যে দেখতে পাই উক্ত ফ্ল্যাটে চারটি রুমে প্রায় সময়ই বহিরাগত লোকজন এসে তিনটি রুমে মাদক সেবন করে আর শেফালী ও তার স্বামী স্বপন ঘরে ইয়াবা ট্যাবলেট মাদক রাখিয়া ঐ লোকদের কাছে বিক্রি করে।
এমতাবস্থায় আমি বুঝতে পারি শেফালী ও তার স্বামী একজন মাদক বিক্রেতা তখন আমি গত ইংরেজি ০৮/০৫/২০২৫ তারিখ শেফালীর কাছে আমার দুই মাসের বেতন চাই এবং বলি আপনাদের এখানে আমি থাকব না আমি আমার সন্তানকে নিয়ে গ্রামে চলে যাবো। তখন শেফালী বলে তোমাকে যে দিয়ে গেছে তাকে খবর দিতেছি সে আসলে তুমি চলে যেও। এরপর ঐ দিন আনুমানিক বেলা ৫ ঘটিকার সময় ১ হতে ২৯ নং এবং ৩০নং বিবাদীরা উক্ত ফ্ল্যাটে এসে ফ্ল্যাটের রুমগুলোত মাদক সেবনের আড্ডা বসায়। ঐ সময় শেফালীর কাছে আমি জানতে চাই রুমে এতো লোক কেন?। শেফালী বলে বাসায় আজকে অনুষ্ঠান আছে তাই আমার বান্ধবীরা ও তোমার ভাই স্বপনের বন্ধুরা এসেছে।
ধর্ষকদের ফাঁদে যেভাবে আটকা পড়ল
এক পর্যায় আমাকে একটি রুমে ডেকে নিয়ে কথাবার্তার এক পর্যায়ে বিবাদীরা আমার শরীরের স্পর্শ কাতর জায়গায় হাত দেয়। তখন আমি ঐ রুম থেকে দৌড়ে বের হয়ে যাই।
ঐ মুহুর্তে বিবাদীরা আমার চুলের মুঠি ধরে চড় থাপ্পর দিয়ে রুমের ভিতরে ঢোকায় এবং আমার ব্যবহৃত সিম সহ মোবাইল সেটটি কেড়ে নিয়ে যায় এক পর্যায়ে শেফালী রুমের দরজার ছিটকারী লাগিয়ে দেয়। এরপর আমাকে সেখানে থাকা বিবাদীরা বলে তাদের সাথে আমাকে যৌন মেলামেশা করতে আমি তাদের কথায় রাজি না হইলে বিবাদীগণরা আমাকে ও আমার সন্তানকে হত্যা করার ভয় দেখায়। এরপর আমি তাদের সাথে শারীরিক সম্পর্ক করতে না চাইলে বিবাদীরা আমার শারীরিক, মানসিক নির্যাতন পূর্বক আমাকে বিবাদীরা সকলে মিলে টানা হেচড়া করে পরিহিত জামা কাপড় খুলে ফেলে
যেভাবে নির্যাতন করা হলো ধর্ষণের জন্য
বিবাদীরা সিগারেটের আগুনে আমার যৌন অঙ্গে ছেকা দিয়ে ব্যাপক শারীরিক নির্যাতন করে। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে বিবাদীরা আমাকে ধর্ষণ করে ।
আমাকে ঘটনাস্থলের রুমে আটক রেখে একের পর এক বিবাদীরা পালাক্রমে প্রায় ৩০-৩৫ লোকে বিভিন্ন সময়ে ধর্ষণ করে। আর বিভিন্ন সময় ঐ ধর্ষকদের রুমে এসে তাদের সহায়তাকারী চারজন নারী ধর্ষণের ভিডিও চিত্র মোবাইল ক্যামেরায় ধারণ করে বিভিন্ন সময় ধর্ষকদের আমি বাধা দিলে ঐ ভিডিও ইন্টারনেট যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক, ইউটিউব এ ছেড়ে দেওয়ার ভয় দেখায় একেক জন বিবাদী আমাকে ধর্ষণ করার পর ঐ ধর্ষণের তোলা ভিডিও চিত্র তাদের ব্যবহৃত মোবাইল সীমের হোয়াটস অ্যাপের মাধ্যমে অজ্ঞাতনামা তাদের পরিচিত ব্যক্তিদের দেখায় ও নেটের মাধ্যমে তাদের কাছে পাঠায়। এবং বারবার আমার শিশু সন্তান আমার কাছে আসতে চাইলে আমার সন্তান শান্তকেও
মারধর করে।
ধর্ষকদের হাত থেকে যে ভাবে মুক্তি পেল
এমতাবস্থায় ০৯/০৫/২০২৫ইং তারিখ আমি বিবাদীদের নির্যাতন সহ্য করতে না পারায় হঠাৎ করে রুমের জানালার কাছে গিয়ে জানালা দিয়ে ডাক চিৎকার দিয়ে আশে পাশের বাড়ির লোকজনদের ডাকি। আমার চিৎকারের আওয়াজ পাশের বাড়ির লোকজন শোনার পর তারা তাদের ভবন হতে নিচে নেমে এসে বাড়িওয়ালা বাবুকে বিষয়টি জানায়।
বাড়িওয়ালা বাবু ও তার ভাইয়ের স্ত্রী ঘটনা জানার পর তাৎক্ষণিক তারা ৬ তলায় শেফালীর ফ্ল্যাটে এসে আমাকে উদ্ধার করে আমার সন্তানসহ আমাকে মুক্ত করে ঐ বাসা থেকে বের করে দেয়।
ঐ মুহুর্তে আমি অসুস্থ থাকায় চিকিৎসা নেওয়ার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাই। হাসপাতালে যেয়ে কাউন্টারে গিয়ে আমি টিকিট কাটার সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঘটনা জানতে চায় আমার ঘটনা শোনার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাকে ঘটনাস্থল এলাকার থানার পুলিশ নিয়ে চিকিৎসা নিতে যেতে বলে। এমতাবস্থায় বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে প্রতিকার না পেয়ে আমার সুচিকিৎসা, আমার ধর্ষণের ঘটনায় ন্যায় বিচার পাওয়ার জন্য উল্লেখিত বিষয় আইজিপি মহোদয়, পুলিশ কমিশনার, উপ-পুলিশ কমিশনার ওয়ারী বিভাগ এ আবেদন করি।
গ্রেফতারের পর যেভাবে আসামী ছেড়ে দিল
পরবর্তীতে একটি এজাহার লিখে যাত্রাবাড়ি থানার অফিসার ইনচার্জকে দেই। অফিসার ইনচার্জ এজাহার পাওয়ার পর তার অধিনস্ত কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেন। তার অধিনস্ত ইন্সেপেক্টর অপারেশন, ইন্সেপেক্টর তদন্ত কে সহ এক এসআইকে দায়িত্ব দেন। দায়িত্বপ্রাপ্তরা ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযোগে উল্লেখিত কয়েকজন আসামীকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসেন। থানায় আনার পর আসামীদের সাথে টাকা পয়সার লেনদেন ও মোটা অংকের ঘুষ গ্রহণ করার পর যাত্রাবাড়ি থানায় উল্টো আমাকে দুই দিন আটকে রেখে ১২/০৫/২০২৫ইং তারিখ একজন আসামীর নামে মানব পাচার আইনে মামলা দিয়ে আর ঐ মানব পাচার মামলায় আমাকে পতিতা বানিয়ে আদালতের মাধ্যমে আসামী জেল হাজতে পাঠায়। যার মানব পাচার মামলা নং-৩৬, তারিখ-১২/০৫/২০২৫ই, ধারা-১২/১৩ মানব পাচার প্রতিরোধ দমন আইন।
যাত্রাবাড়ি থানায় গিয়ে যেভাবে ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হলো
আমাকে দুই দিন যাত্রাবাড়ি কৌশলে আটকের পর আমার শারীরিক এবং ধর্ষণের কোন চিকিৎসা না করায় আমার দুই রানের ধর্ষকদের সিগারেটের আগুনে ঝলসে যাওয়া অবস্থার অনেক অবনতি হওয়ায় আমি যাত্রাবাড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ ও তদন্ত কর্মকর্তাদের অনেক অনুরোধ করি আমার চিকিৎসা করানোর জন্য সেখানকার পুলিশ বলে, যে তোর চিকিৎসা করাতে নিতে হবে ঢাকা মেডিকেল আর সেখানে গিয়ে চিকিৎসা করলে তোর এই ঘটনায় ধর্ষণ মামলা নিতে হবে। এতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে আমাদের বিভিন্ন জবাবদিহি হতে হবে। এই বলে, ওসি সাহেব আমাকে ১ হাজার দিয়ে বলে যে তুই সোজা গ্রামের বাড়ি চলে যাবি আর এই ধর্ষণের বিষয় কোথাও গিয়ে বলা বলি করবি না চুপ থাকবি। থানা থেকে বের হয়ে গত ১২/০৫/২০২৫ইং সন্ধ্যা ৭ ঘটিকার সময় স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেয়ে জরুরী বিভাগে চিকিৎসা নেওয়ার টিকেট চাইলে টিকেট কাউন্টার হতে আমার ঘটনা শুনে তারা আমাকে চিকিৎসার কোন ব্যবস্থা না করে ঢাকা মেডিকেল যেয়ে চিকিৎসা নিতে বলে, পরবতীতে আমি ঢাকা মেডিকেল যেয়ে সেখানেও কোন চিকিৎসার ব্যবস্থা না পেয়ে আমার ৬ বছর বয়স্ক সন্তানকে নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ন্যায় বিচার পাওয়ার জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছি।
এমন অবস্থায় বুঝতে পারি আইন শৃঙ্খলার উন্নয়ন দেখাইতে যাত্রাবাড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ কামরুজ্জামান তালুকদার, বিপি নং-৭৭০৪১১৩২৬০, ইন্সেপেক্টর অপারেশন, ইন্সেপেক্টর তদন্ত, ওয়ারী বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার ও ডিএমপির পুলিশ কমিশনার সবকিছু জানার পরেও আমার ঘটনার বিষয় কোন পুলিশ কর্মকর্তা আমার সু-চিকিৎসা ও ন্যায় বিচার হতে আমাকে বঞ্চিত করছে তাই উক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করিলাম।
যাতে আমার মতো, কোন নারী গণ ধর্ষণের স্বীকার হয়ে আমার মতো সন্তান নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে না হয়। এ বিষয়ে নির্যাতিতা ঐ নারী মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা, মাননীয় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, মাননীয় আইন উপদেষ্টা, মহা-পুলিশ পরিদর্শক বরাবরে লিখিত অভিযোগ পত্র জমা দিয়েছেন বলে ক্রাইম নিউজ মিডিয়াকে জানান।
যাত্রাবাড়ি থানার ওসি, ওয়ারী বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার এর মোবাইল ফোনে না পাওয়ায় তাদের বক্তব্য দেওয়া গেল না। তবে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাব ইন্সেপেক্টর নিরস্ত্র শতরূপা কুন্ডু এর মোবাইল ফোনে কথা বললে ক্রাইম নিউজ মিডিয়াকে তিনি বলেন, গতকাল যাত্রাবাড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ তার নামে একটি মানব পাচার আইনের মামলার তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন কিন্তু অন্য একটি হত্যা মামলা নিয়ে কাজ করায় ব্যস্ত থাকায় মানব পাচার আইনের মামলার বাদীর সাথে তিনি দেখা করতে পারেন নি।
তবে ঐ নারী যদি ধর্ষণের অভিযোগ দিয়ে থাকে থানায় তাহলে মানব পাচার মামলা কেন হয়েছে তা আমার জানা নেই। একদিন পর আমি একটু ফ্রি হয়ে বাদীর সাথে দেখা করে কথা বলবো। আর যেহেতু মানব পাচার মামলায় বেশ কিছু অজ্ঞাতনামা আসামী রয়েছে তাই গ্রেফতার হওয়া আসামীর আগামীকাল আদালতে রিমান্ড চাইব।