সম্প্রতি মাঠের বাইরে ঘটে যাওয়া ঘটনায় টালমাটাল চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। মেহেদী হাসান মিরাজকে অধিনায়ক থেকে সরোনা নিয়ে বেশ জলঘোলা হলে গত দুদিন। রোববার সন্ধ্যায় কাগজকলমে ওই নাটকের ইস্তফা হলেও ড্রেসিংরুমের পরিবেশ যে মোটেও স্বাস্থ্যকর নয়, সেটি মাঠের ক্রিকেটে খেলোয়াড়দের শরীরী ভাষাতেই স্পষ্ট। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থেকে কুমিল্লা ভিক্টোয়ান্সের মুখোমুখি হলেও সোমবার দল হিসেবে খেলতে পারল না চট্টগ্রাম।
বল হাতে নাসুম আহমে আর ব্যাটিংয়ে উইল জ্যাকস, এই দুনজেই যা একটু লড়লেন। তবে ‘বিধ্বস্ত’ দলে তাদের দুজনের পারফরম্যান্স কোন কাজে আসল না। চট্টগ্রামে আজ (সোমবার) দিনের প্রথম ম্যাচে কুমিল্লার মুখোমুখি হয় স্বাগতিকরা। এ ম্যাচে চট্টগ্রামের বোলারদের শাসন করে স্কোরবোর্ডে ১৮৩ রানের বিশাল পুঁজি পায় কুমিল্লা। ১৮৪ রানের লক্ষ্য টপকাতে নেমে মাত্র ৩১ রানে থামে চ্যালেঞ্জার্সের ইনিংস। এতে ৫২ রানের জয় পায় কুমিল্লা। এটি কুমিল্লার তৃতীয় জয়।
এবারের বিপিএলে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচ খেলতে নামা কুমিল্লা পেয়েছে হ্যাটট্রিক জয়ের স্বাদ। এতে ম্যাচের আগে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থেকে খেলতে নামা চট্টগ্রামকে নিয়ে আবার এক নম্বর জায়গা নিজেদের দখলে নিয়েছে বিপিএলের দুই বারের চ্যাম্পিয়নরা।
টার্গেট টপকাতে নেমে দলীয় রান দুই অঙ্ক ছুঁতেই ওপেনার কেনার লুইস ও তিনে নামা আফিফ হোসেনকে হারিয়ে বিপদে পড়ে চট্টগ্রাম। ৪ রানে থাকা কেনারকে ফেরান অফ স্পিনার নাহিদুল। সমান ৪ রানে মুস্তাফিজে কাটা পড়েন আফিফ। পরে দলের হাল ধরেন উইল জ্যাকস। তার ঝড়ো ব্যাটিংয়ের কল্যাণে পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে ৫০ রান তোলে চট্টগ্রাম। তবে তার আগেই সাজঘরে সাব্বির রহমান। নাহিদুলের দ্বিতীয় শিকার হন ৫ রানে।
নাহিদুলের টানা ৪ ওভারের স্পিলেই চট্টগ্রামের ব্যাটিং অর্ডারের মেরুদণ্ড ভেঙে যায়। নিজের কোটার শেষ ওভারে মিরাজকে স্টাম্পিংয়ের ফাদে ফেলে ফেরান তিনি। মিরাজ ১০ রান করে আউট হলে অধিনায়ক নাঈম ইসলাম (৮), হার্ডহিটার বেনি হাওয়েল (২) এবং মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরীও (১৩) সুবিধা করতে পারেননি। তবে অপর প্রান্তে রান তোলার গতি ঠিক রাখেন জ্যাকস। ঝড়ো ব্যাটিংয়ে তুলে নেন ফিফটি।
ইনিংসের ১৬তম ওভারে জ্যাকস ৪২ বলে ৬৯ রান করে আউট হলে কার্যত শেষ হয়ে যায় চট্টগ্রামের জয়ের আশা। প্যাভিলিয়নে ফেরার আগে নিজের ইনিংসটি ৭টি চার ও ৩ ছক্কায় সাজান এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। এরপর দ্রুতই বাকি দুই উইকেট হারিয়ে ১৩১ রানে গুটিয়ে যায় চট্টগ্রামের ইনিংস। এতে ৫২ রানের জয় পায় কুমিল্লা। এটি কুমিল্লার তৃতীয় জয়। কুমিল্লার হয়ে নাহিদুল সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নামে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। দলে ফেরা লিটন দাসেরর সঙ্গে ইনিংসের গোড়াপত্তন করতে নামেন মাহমুদুল হাসান জয়। তবে সুবিধা করতে পারেননি জয়। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে নাসুম আহমেদের বলে সাব্বির রহমানের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ১ রান করে। দলীয় ৪ রানে প্রথম উইকেট হারানোর পর দ্বিতীয় উইকেটে ৮০ রানের পার্টনারশিপে দলকে টেনে তোলেন লিটন আর ফাফ ডু প্লেসি।
দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ফিফটির দিকে ছুঁটছিলেন লিটন। তবে ইনিংসের ১১তম ওভারে নাসুমের বলে ধরা পড়েন সাব্বিরের হাতে। ৫টি চার ও ১টি ছয়ের মারে ৩৪ বলে ৪৭ রানে থামেন লিটন। চারে নেমে সুবিধা করতে পারেননি অধিনায়ক ইমরুল কায়েস। বেনি হাওয়েলের বলে বোল্ড হন ১ রান করে। এরপর ব্যাট হাতে ধ্বংসলীলা চালিয়ে ফিফটির স্বাদ পান ফাফ। তার সঙ্গে যোগ যেন তারই স্বদেশী দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যান ক্যামেরুন ডেলপোর্ট।
শরিফুলের করা ইনিংসের শেষ ওভারে ২৩ রান তুলে মাত্র ২২ বলে অর্ধশতক ছুঁয়েছেন ডেলপোর্ট। ৪৮ বলে দুজনে অবিচ্ছেদ্য ৯৭ রানের পার্টনারশিপে নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ৩ উইকেট হারিয়ে স্কোরবোর্ডে ১৮৩ রানের বিশাল সংগ্রহ পায় কুমিল্লা। যেখানে ৫৫ বলে ৮টি চার ও ৩ ছয়ে ৮৩ রানে অপরাজিত থাকেন ফাফ। ডেলপোর্ট অপরাজিত থাকেন ৫১ রানে। ২৩ বল খেলে ৪টি চার ও ৩টি ছক্কা হাঁকান তিনি। চট্টগ্রামের হয়ে নাসুম আহমেদ ৪ ওভারে ২৩ রান দিয়ে নেন সর্বোচ্চ ২ উইকেট।