সম্প্রতি ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) যেন বিরোধী দলগুলোর গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর ক্ষমতাসীনদের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি তো ইভিএমের নামই শুনতে নারাজ। দলটি বলছে, ইভিএম সরকারের নতুন ফন্দি। এটি ডিজিটাল ফাঁদ ও ‘স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভোট চুরির যন্ত্র। নতুন এ ফাঁদে পা দেবে না তারা। তাই দলটির এক স্লোগান ‘ইভিএমের বদলে ব্যালট পেপার’।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ ইভিএমে হবে, দুদিন আগে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে এমন ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তিনশ আসনে ভোট হবে ইভিএমে। এরপর থেকেই নতুন করে আলোচনায় ইভিএম।
মঙ্গলবার আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের এক যৌথ সভায় বলেছেন, তাদের দল ৩০০ আসনেই ইভিএম চায়। যদিও এ বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
ইসি বলছে, ইভিএম নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে যে সন্দেহ ও অবিশ্বাস রয়েছে, তারা আগে সেটা দূর করতে চান। তারপর ভোটে ইভিএমের ব্যবহার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বিএনপিসহ বিরোধীদলগুলো ভোটে ইভিএমের ব্যবহারের বিরোধিতা করছে বহুদিন ধরে। সর্বশেষ নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর বিএনপি নেতা তৈমূর আলম (স্বতন্ত্র প্রার্থী) অভিযোগ করেছিলেন, ইভিএম কারসাজিতে তিনি হেরেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, প্রধানমন্ত্রী কীভাবে বলেন তিনশ আসনে নির্বাচন হবে ইভিএমে। এই সরকার যে পুরোপুরিভাবে নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত থাকে এবং নির্বাচন প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে তার প্রমাণ হচ্ছে এটি। ভোট প্রক্রিয়ার সম্পূর্ণ দায়িত্ব হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের। এই থেকে প্রমাণিত হয়, সরকার সচেতনভাবে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে এদেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করছে। ইভিএম নিয়ে বিএনপির বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইভিএম নিয়ে তো ইলেকশন কমিশনই জবাব দিয়ে দিয়েছে। আমার তো বলার আর কিছু আছে বলে মনে হয় না।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এবার ‘শেখ হাসিনার বদলে নির্দলীয় সরকার’ এবং ‘ইভিএমের বদলে ব্যালট পেপার’- এই স্লোগান নিয়ে বিএনপি আন্দোলন করছে। ভোট চুরির মেশিন নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই।
অন্যদিকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় নেতা জিএম কাদের বলেন, নিরক্ষরতার জন্য আমাদের দেশে এখনও প্রার্থীর নামের পাশে প্রতীক ব্যবহার করতে হয়। এমন বাস্তবতায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে ভোটগ্রহণ কতটা যৌক্তিক তা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক আছে। নির্বাচনে পদ্ধতিগত কোনো পরিবর্তন আনতে নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে মতামত নেবে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করার বিষয়ে সরকারের ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, ইভিএম ক্ষমতা ধরে রাখার চক্রান্ত। জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়া নয়; বরং ক্ষমতা ধরে রাখতে সরকারের নতুন ফন্দি এটি। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের মাধ্যমে নির্বাচনকে কেবল ক্ষমতায় যাওয়ার উপায় হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাইয়ের পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ইভিএম আন্তর্জাতিকভাবে প্রত্যাখ্যাত। আর ইভিএমের মাধ্যমে সারা দেশে ভোট অনুষ্ঠিত হবে- এমন কথা প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দেওয়ার এখতিয়ার রাখেন না। নির্বাচন কোন প্রক্রিয়ায় অনুষ্ঠিত হবে, তা নির্ধারণ করবে নির্বাচন কমিশন। দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতেই নির্বাচন কমিশন তা ঠিক করবে, এটিই জনগণের প্রত্যাশা।
আর গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মতে, আওয়ামী লীগ সরকার আগামী নির্বাচনে ভোট কারচুপির হ্যাটট্রিক করতে যাচ্ছে। প্রথমবার বিনাভোটে, দ্বিতীয়বার রাতের ভোটে আর এবার ইভিএমে। ইভিএমে ভোট যে প্রতীকেই দেন না কেন, ভানুমতির খেলায় তা গিয়ে নৌকায় পড়বে।