চাঁদপুর প্রতিনিধি:
চুল ও দাড়ির ‘বখাটে কাট’ বন্ধ করতে সেলুন মালিক ও নরসুন্দরদের সচেতন করার পাাশাপাশি চুল কর্তন করানোর কার্যক্রমে নেমেছে চাঁদপুর পুলিশ।
শহরের পুরান বাজার এলাকায় অভিভাবক, স্কুল কলেজ পড়ুয়া ছাত্রী ও এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে বখাটে-ইভটিজারদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছে পুরানবাজার পুলিশ ফাঁড়ি। নিজস্ব অর্থায়নে পুরান বাজারের বিভিন্ন সেলুনে বড় চুল ছোট এবং রঙিন চুল কালো করার এ কার্যক্রম হাতে নিয়ে প্রশংসিত হয়েছে পুলিশ।
গত ১ সপ্তাহ ব্যাপী সতর্কতামূলক হিসেবে বখাটে ইভটিজারদের বড় ও রঙিন চুল কর্তন করা হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় ২ শতাধিক বখাটেদের বড় ও রঙিন চুল কর্তন করা হয়। এসময় বখাটেদের অভিভাবকদের সন্তানের ওপর নজর রাখতে ফাঁড়িতে ডেকে এনে সর্তক করে দেন পুলিশ।
অভিভাবকরারা বলছেন, ছেলেরা কথা শুণে না, মনগড়া জীবন-যাপন করে। তারা পরিবারের অমতে চুল কালার করেছে। আবার অনেকের চুলের জন্য তার চেহারা দেখা যায় না। এ নিয়ে প্রায়শাই বাক-বিতন্ডা বাঁধে পরিবারে। কিন্তু কোন ফলাফল না পেয়েই ফাঁড়িতে মৌখিক অভিযোগ করেছি।
চাঁদপুর শহরের এক সেলুন মালিক বিক্রম শীল সময়ের কন্ঠস্বরকে বলেন, “এক শ্রেণীর যুবক আছে যারা তাদের নিজস্ব স্টাইলে চুল কাটাতে পছন্দ করে। এরা একেকজন একেক ধরনের স্টাইলে চুল কাটে। যেখানে আমাদের নিজস্ব কোনো মতামত থাকে না।”
তিনি বলেন, কেউ দুই কানের উপর দিয়ে চুল পুরো চেঁছে ফেলতে বলে। আবার কেউ কপালের দুই পাশ থেকে ঘাড়ের পেছন পর্যন্ত চুল ছেঁটে শুধু মাথার মাঝখানে উপরে চুল বড় রাখে। আবার অনেকে আছে ছোট করে চুল কাটিয়ে মাথার বিভিন্ন স্থানে চেঁছে রাস্তা বানিয়ে দিতে বলে।
দাড়ির ক্ষেত্রেও নানা ধরনের স্টাইল করে বলে অসিত জানান।
তিনি বলেন, বিভিন্ন সিনেমা, নাটক, মিউজিক ভিডিও কিম্বা বিভিন্ন নামি-দামি ফুটবলার কিংবা ক্রিকেটারের মতোও অনেকে হেয়ার স্টাইল করে চুল কাটতে বলে। “শুধু চুলের স্টাইল বা দাড়ির ডিজাইন পরিবর্ত নয়, অনেকে আছে চুল দাড়িতে নানা রঙ করতেও পছন্দ করে।”
বিক্রম বলেন, যে যেমন বলে তারা তাদের সেভাবেই চুল দাড়ি কেটে দেন। কারণ এটা তাদের পেশা। রুটি, রুজির কারণেই তারা কাস্টমারকে খুশি রাখার চেষ্টা করেন। তবে চুল, দাড়ি কাটার বিষয়ে পুলিশী উদ্যোগের ফলে বর্তমানে এ ধরনের হেয়ার স্টাইলে চুলকাটার সংখ্যা অনেকটা কমে গেছে। পুলিশের গৃহীত এ উদ্যোগ সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
পুরানবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জাহাঙ্গীর আলম জানান, ‘উদ্দেশ্য হচ্ছে বিশেষ করে উঠতি বয়সের যুবকদের সংযত আচরণ ও স্বাভাবিক জীবনযাপনে উদ্বুদ্ধ করা। সম্প্রতি মাগুরায় কিশোর ও উঠতি বয়সের যুবকদের হাতে খুনসহ নানা অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। যেটির পেছনে তাদের অস্বাভাবিক জীবনযাপন ও আচরণের যোগসূত্র পেয়েছে পুলিশ। এ কারণে এ শ্রেণির নতুন প্রজন্মকে সচেতন করতে এ কার্যক্রম চালানো হচ্ছে, বলেন ওসি।
ওসি বলেন, এর উদ্দেশ্য হচ্ছে বিশেষ করে উঠতি বয়সের যুবকদের সংযত আচরণ ও স্বাভাবিক জীবনযাপনে উদ্বুদ্ধ করা। সম্প্রতি মাগুরায় কিশোর ও উঠতি বয়সের যুবকদের হাতে খুনসহ নানা অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। যেটির পেছনে তাদের অস্বাভাবিক জীবনযাপন ও আচরণের যোগসূত্র পেয়েছে পুলিশ। এ কারণে এ শ্রেণির নতুন প্রজন্মকে সচেতন করতে এ কার্যক্রম চালানো হচ্ছে, বলেন ওসি।
ওসি আরও বলেন, মানুষের লাইফ স্টাইলের সঙ্গে তার আচরণের নানা যোগসূত্র রয়েছে। কেউ যদি উদ্ভট পোশাক পরে, উদ্ভট স্টাইলে চুল কাটে, যা দৃষ্টিকটূ ও অস্বাভাবিক, সেটি তার জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব অবশ্যই ফেলে। এ কারণে এটি প্রতিরোধ করা প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে সবার আগে দরকার সচেতনতা। সে কাজটিই চাঁদপুর পুলিশের পক্ষ থেকে তারা করছেন বলে জানান।
এসব বখাটেদের ব্যপারে অভিভাবক, স্কুল কলেজ পড়ুয়া ছাত্রী ও এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে অভিযান চালিয়ে নিজেদের অর্থায়নে প্রায় ২ শতাধিক জনের চুল ছোট করে দেয়া হয়েছে। এটা সর্তকতামূলক ভাবে করা হয়েছে। সন্ধ্যার পর কোন শিক্ষার্থী ও উঠতি বয়সি কিশোর রাস্তায় পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
পুলিশ জানায়, শুধু হেয়ার স্টাইল নয়, সম্প্রতি এক শ্রেণির যুবক ও কিশোর শহরে বেপরোয়াভাবে মোটরসাইকেল নিয়ে ঘোরাঘুরি করে আসছিল। বিশেষ করে স্কুল, কলেজগামী কিছু কিশোর ও যুবককে তিনজন করে এক মোটরসাইকেলে চেপে শহরে আঁকা-বাঁকা স্টাইলে চলাফেরা করতে দেখা গেছে। পুলিশ এ সকল অপ্রাপ্তবয়স্ক বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালকদের বিরুদ্ধে আইগত ব্যবস্থা নিয়েছে। অনেককে আটক করে তাদের অভিভাবকদের থানায় ডেকে সর্তক করার পাশাপাশি মুচলেকা নিয়ে ছাড়া হয়েছে।