সাভারের একটি গার্মেন্টসে ডিজাইনের কাজ করতেন আলমগীর। দুই বিয়ের কারণে তার পারিবারিক জীবনে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। এ কারণে সাভার থেকে তিন মাস আগে দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে চট্টগ্রামের হালিশহরে বসবাস শুরু করেন। দ্বিতীয় স্ত্রীও ছিলেন গার্মেন্টসকর্মী। কাজ হারিয়ে সারাক্ষণ বাসায় অবস্থান করতেন আলমগীর।
রোববার (১৩ মার্চ) পাশের বাসার এক কিশোরীকে (১৩) কৌশলে ডেকে নিজের ঘরে নিয়ে যান আলমগীর। সেখানে প্রথমে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন। ওই কিশোরী সবাইকে জানিয়ে দেওয়ার হুমকি দিলে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। ঘটনার পর পালিয়ে প্রথমে ধামরাই পরে সাভার, মানিকগঞ্জ ও রাজবাড়ী এলাকায় আত্মগোপন করেন আলমগীর।
তিনি বলেন, রোববার চট্টগ্রামের হালিশহরে এক কিশোরীকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যার ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনার পরদিন ভুক্তভোগীর বাবা বাদী হয়ে হালিশহর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায় র্যাব।
র্যাব সদরদপ্তর গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-৭ এর অভিযানে মঙ্গলবার রাতে মানিকগঞ্জে অভিযান চালিয়ে ধর্ষণ ও হত্যার সঙ্গে জড়িত প্রধান আসামি ৪৯ বছর বয়সী আলমগীর মিয়াকে গ্রেপ্তার করে। তার বাড়ি নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের সাতগ্রামে, তার বাবা রফিকুল মিয়া। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার আলমগীর ধর্ষণের পর হত্যার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।
ঘটনার দিন কিশোরীটি কোচিং শেষে বাসায় আসে। তখন আলমগীর কৌশলে তাকে নিজের বাসায় ডেকে নেন। এরপর জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। ওই কিশোরী বাধা দেওয়ার এক পর্যায়ে আলমগীরের হাতে কামড় দেয় এবং বাবা মাকে জানিয়ে দেবে বলে হুমকি দেয়।
এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আলমগীর কিশোরীর গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে মরদেহ খাটের নিচে রেখে দেন। এর পর স্ত্রী যে গার্মেন্টসে কাজ করেন সেখানে যান। আলমগীর স্ত্রীকে জানান, তার সঙ্গে এলাকার একজনের সাথে মারামারি হয়েছে। এ অজুহাত দেখিয়ে তিনি স্ত্রীকে নিয়ে এলাকা ছাড়েন।
প্রতিদিনের মতো ভুক্তভোগীর মা সকালে পোশাক কারখানায় চলে যান এবং বাবাও রিকশা নিয়ে বেরিয়ে যান। দুপুরে তার মা বাসায় খাবার খেতে আসেন। পরে কিশোরীটির দুই সহপাঠী তার মাকে জানায়, সে প্রাইভেট পড়ার পর স্কুলে যায়নি।
এরপর তারা ভুক্তভোগী কিশোরীটিকে খুঁজতে শুরু করেন। কিন্তু কোথাও সন্ধান পাওয়া যায়নি। অন্য দিনের মতো আলমগীরের স্ত্রী দুপুরে খাবার খেতে বাসায় আসেননি। তার বাসা তালাবদ্ধ দেখা যায়, তার মোবাইল ফোনটিও বন্ধ পাওয়া যায়। তবে আলমগীরের বাসার লাইট ফ্যান চালানো দেখে ভুক্তভোগীর বড় ভাইয়ের সন্দেহ হয়। বিষয়টি বাড়ির মালিককে জানালে তিনি ঘটনাস্থলে আসেন। রাত সাড়ে ৯টার দিকে দরজার তালা ভেঙে আলমগীরের ঘরের ভেতর প্রবেশ করে খাটের নিচে ওই কিশোরীকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ও ধর্ষণের আলামত দেখতে পায়।
গ্রেপ্তার আলমগীর জিজ্ঞাসাবাদে জানান, তিনি আগে সাভারের একটি গার্মেন্টসে ডিজাইনের কাজ করতেন। তিনি দুটি বিয়ে করেছেন। পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে তিন মাস আগে তিনি সাভার থেকে দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে চট্টগ্রামের হালিশহরে বসবাস শুরু করে। সেখানে দ্বিতীয় স্ত্রী গার্মেন্টসে চাকরি করলেও নিজে ছিলেন বেকার। সারাক্ষণ বাসায় অবস্থান করতেন। এর আগেও তার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছে।
ঘটনার পর তিনি পালিয়ে প্রথমে ধামরাই পরে সাভার, মানিকগঞ্জ ও রাজবাড়ী এলাকায় আত্মগোপন করেন। ইতোপূর্বে মিরপুর, সাভার, আশুলিয়াসহ বিভিন্ন গার্মেন্টসে চাকরি করেছেন। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানায় র্যাব।