নিজেকে বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সিইও, মার্কেটিং ম্যানেজার ও মার্চেন্ডাইজার পরিচয়ে গার্মেন্টস এক্সেসরিজের ক্রয়পত্র বিতরণ করতেন সালাউদ্দিন ভূইয়া। এক্সেসরিজ ডেলিভারি পাওয়ার পর পাওনা টাকা পরিশোধ করতেন না তিনি। নিজেকে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা, আইজিপি ও সংসদ সদস্যদের আত্মীয় পরিচয়ে ভয়ভীতি-হুমকি দিতেন।
প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, এভাবে তিনি কোটি টাকার অধিক আত্মসাৎ করেছেন। প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে আদালতে ৩টি মামলা বিচারাধীন।
এসব অভিযোগে রাজধানীর মহাখালী এলাকা থেকে ভুয়া সেনা কর্মকর্তা পরিচয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া প্রতারক ও অর্থ আত্মসাৎকারী সালাউদ্দিন ভূইয়াকে (৫৫) গ্রেপ্তারের পর এ তথ্য জানিয়েছেন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, ঢাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে দেশের বিভিন্ন গার্মেন্টস এক্সেসরিজ কোম্পানির নিকট থেকে ওয়ার্ক অর্ডার দিয়ে টাকা পরিশোধ না করে প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করছিলেন সালাউদ্দিন ভূইয়া। তিনি নিজেকে বিভিন্ন কোম্পানির সিইও, মার্কেটিং ম্যানেজার ও মার্চেন্ডাইজার পরিচয় দিয়ে গার্মেন্টস কোম্পানির পণ্য ক্রয়ের জন্য ক্রয়পত্র বিতরণ করেন। ভুয়া ক্রয়াদেশ প্রাপ্ত হয়ে গার্মেন্টস এক্সেসরিজ কোম্পানিগুলো ক্রয়াদেশ অনুযায়ী সম্পূর্ণ পণ্য ডেলিভারি করেন। পরবর্তীতে সালাউদ্দিন ভূইয়া পণ্য ডেলিভারি পাওয়ার পর তাদের টাকা পরিশোধ না করে বিভিন্ন কোম্পানির নিকট বিক্রি করে দেন।
ভুক্তভোগীরা তার নিকট থেকে পাওনা টাকা ফেরত চাইলে টাকা না দিয়ে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা, আইজিপি ও সংসদ সদস্যদের আত্মীয় পরিচয়ে ভয়ভীতি ও হুমকি দিতেন।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি ভুক্তভোগী বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান র্যাব-১ এর নিকট আইনি সহায়তা কামনা করে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে র্যাব ছায়াতদন্ত শুরু করে এবং গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।
এরই ধারাবাহিকতায় গত রাতে র্যাব-১ এর একটি দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাজধানীর মহাখালী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে প্রতারক এ এম এম সালাউদ্দিন ভুইয়াকে গ্রেপ্তার করে।
অভিযানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইউনিফর্ম পরিহিত বাঁধাইকৃত একটি ফটোফ্রেম, সেনাবাহিনীর ব্যবহৃত একটি করে গেঞ্জি, ক্যাপ, মানিব্যাগ ও মেডেল, ৪টি জাল লেটার প্যাড, একটি জাল সিল, ২টি জাল ক্রয়াদেশ, ২টি জাল সোয়াচ প্যাড, ২টি চেক বই, ৩টি মোবাইল ফোন ও বিভিন্ন কন্টেন্ট জব্দ করা হয়।
গ্রেফতার সালাউদ্দিন ভূইয়া বিগত প্রায় ৫ বছর ধরে এ ধরনের প্রতারণা করছিলেন। এভাবে তিনি কোটি টাকার অধিক আত্মসাৎ করেছেন। বর্তমানে তিনি মহাখালীর একটি অফিসে সাবলেট ভাড়া নিয়ে বিগত তিন মাস যাবত প্রতারণামূলক এসব কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন।
সালাহউদ্দিন র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, প্রতারণার কৌশল হিসেবে তিনি একই ঠিকানায় ৬ মাসের বেশি অবস্থান করতেন না। এছাড়া ফটোশপের মাধ্যমে বিভিন্ন ছবি এডিট করে মূলত প্রতারণার কাজে ব্যবহার করেন। ইতোপূর্বে তার নামে প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে আদালতে প্রতারণার মামলা ও বিভিন্ন থানায় ৩টি অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া বেশ কয়েকটি ভুক্তভোগী প্রতিষ্ঠানের মামলা প্রক্রিয়াধীন।