সিএনএম প্রতিনিধিঃ
শেরপুর সদর উপজেলার কামারিয়া ইউনিয়নের আন্ধারিয়া সুতিরপাড় এলাকায় সমাজে হিজড়া হিসেবে পরিচিত তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর আর্থ সামাজিক উন্নয়ন, সেই সঙ্গে তাদের আবাসন ব্যবস্থা, ভিক্ষার হাতকে কর্মের হাতে পরিণত করার লক্ষ্যে শেরপুরে নানা ধরণের বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সোমবার (৭ জুন) সদর উপজেলার কামারিয়া ইউনিয়নের আন্ধারিয়া সুতিরপাড় এলাকায় ২ একর জমির ওপর নির্মিত ৪০ জন হিজড়ার স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্যে প্রত্যেককে ১টি করে বসতঘর, রান্নাঘর, ১টি শৌচাগারসহ প্লট হস্তান্তর করা হয়।
শেরপুরের জেলা প্রশাসক আনারকলি মাহবুব আনুষ্ঠানিকভাবে এসব প্লট তাদের বুঝিয়ে দেন। ভূমি মন্ত্রণালয় ৬৯ লাখ ৪ হাজার টাকা ব্যয়ে এ আবাসন প্রকল্প তৈরি করেছে।
এখানে হিজরাদের থাকার জন্য শুধুমাত্র আবাসনের ব্যবস্থাই করা হয়নি। তাদের সুন্দর ভাবে বেঁচে থাকার জন্যে মাছ চাষের নিমিত্তে ৪০ শতাংশ আয়তনের ১টি পুকুর, ৬০ শতাংশ জমিতে সবজি চাষ ও হাঁস মুরগি পালনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদের ৬ মাসের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী প্রদান এবং প্রত্যেক বসতঘরে চৌকি বিছানাসহ প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র প্রদান করা হয়েছে। বিনোদনের জন্য ১টি মিলনায়তনের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ৩ বছর আগে শেরপুরের সামাজিক সংগঠন জন উদ্যোগ তাদের সীমিত সামর্থ্যের মধ্যেও হিজরাদের ভাগ্য উন্নয়ন ও তাদের মূল জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পৃক্ত করার জন্য হিজড়াদের কল্যাণ সমিতি গঠনসহ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। পরে জেলা প্রশাসককে এ ব্যাপারে অবহিত করলে তিনি সক্রিয় উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
ইতোমধ্যে স্থানীয় হিজড়াদের পোশাক সেলাইয়ের কাজ, হাঁস মুরগি পালন, ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। কয়েকজনকে সেলাই মেশিন প্রদান করা হয়েছে। মহিলা পরিষদ প্রত্যেক হিজরাকে ১০ হাজার টাকা করে আর্থিক অনুদান প্রদান করে।
শেরপুর জেলা হিজড়া কল্যাণ সংস্থার সভাপতি, শেরপুর সরকারি কলেজে অনার্স পড়ুয়া নিশি সরকার বলেন, বর্তমান জেলা প্রশাসন তাদের সকল প্রকার সহযোগিতা প্রদান করেছেন। গুচ্ছগ্রামের মাধ্যমে তাদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করায় জেলা প্রশাসকের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে তৃতীয় লিঙ্গের বিষয়গুলো জনসম্মুখে তুলে ধরার জন্য সামাজিক সংগঠন জন উদ্যোগ শেরপুর কমিটির প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেন, গুচ্ছগ্রামের মাধ্যমে আমাদের বাসস্থানের বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে। এখন আমাদের কর্মসংস্থানের জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করছি।
নিশি সরকার বলেন, আমরা ভিক্ষাবৃত্তি চাই না, চাঁদাবাজি করে জীবন চালাতে চাই না। আমরা মানুষের মতো বাঁচতে চাই। কর্ম করে খেতে চাই।
শেরপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফিরোজ আল মামুন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সহায়তায় ও জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নির্দেশনায় আমরা এই কাজটি শেষ করতে পেরে আনন্দিত। আমরা চাই তৃতীয় লিঙ্গের এই মানুষগুলো আমাদের সঙ্গে বাস করে আমাদের জনশক্তিতে রূপান্তরিত হোক।
তিনি বলেন, কেবল জমিসহ ঘরই নয়, ওই গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পে সমাজের অবহেলিত ও অপাংক্তেয় তৃতীয় লিঙ্গ জনগোষ্ঠীর জীবনমান এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণও প্রদান করা হবে। যাতে তারাও সমাজের মূলস্রোতে একীভূত হতে পারেন।
শেরপুরের জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব বলেন, সমাজে সম্মানের সঙ্গে মাথা উঁচু করে বাঁচার অধিকার তৃতীয় লিঙ্গের এই মানুষগুলোরও আছে। তারা আমাদেরই স্বজন। প্রধানমন্ত্রী এই বিষয়ে আন্তরিক থেকে আমাদের কাজ করতে নির্দেশনা দিয়েছেন। তাদের বাসস্থানের পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টির চেষ্টাও আমরা করছি। আশা করি, তাদের সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধান করতে পারব।
জেলা প্রশাসক হিজরাদের সঙ্গে সবাইকেই মানবিক আচরণ করতে তিনি আহ্বান জানান। প্রকল্পের জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতার প্রশংসা করে হিজড়া ও স্থানীয়দের সাবধান করে বলেছেন, এখন থেকে হিজড়ারা কোনো মানুষের বিরক্তির কারণ হতে পারবে না এবং হিজড়াদেরও বিরক্ত করা যাবে না। করলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।