সিএনএম ডেস্কঃ
রাজধানীতে প্রকাশ্য দিবালোকে মাদকের হাট অবশ্য নতুন কিছু নয়। কিন্ত আশ্চর্য লাগে তখন, যখন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর ও আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী সেগুলো দেখেও না দেখার ভান করে চোখে কাঠের চশমা লাগিয়ে চলে।
সারাদেশে মাদকের বিষাক্ত ছোবল শেষ করে দিচ্ছে তারুণ্যের শক্তি ও সম্ভাবনা। শুধু শহরেই নয়, গ্রামেও ছড়িয়ে পড়েছে মাদক। মরণ নেশার বিস্তারে সমাজে একদিকে যেমন অপরাধ বাড়ছে, তেমনিভাবে তৈরি হচ্ছে বিশৃঙ্খলা। ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনের অবক্ষয়, প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তির অসামঞ্জস্যতা, হতাশা এবং মূল্যবোধের অভাবের সুযোগ নিয়ে মাদক তার বিষাক্ত হাত বাড়িয়ে দিয়েছে তরুণ সমাজের প্রতি।
যতই দিন যাচ্ছে ততই নেশাগ্রস্থদের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। এ নেশা ছড়িয়ে পড়ছে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ব বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে। মাদকের আগ্রাসনে আমাদের তরুণ সমাজ আজ বিপর্যস্ত। মাদকের করাল গ্রাসে দিনে দিনে ফুরিয়ে আসছে আমাদের জাতীয় অস্তিত্ব। সক্রিয় মাদক সিন্ডিকেটগুলো বাংলাদেশেরর বিভিন্ন সীমান্ত থেকে সীমান্তরক্ষীদের দৃষ্টি ফাঁকি দিয়ে কিংবা সীমান্তরক্ষীদের ম্যানেজ করে মদ, গাঁজা, ফেনসিডিল, ইয়াবা, রেকটিফাইড স্পিরিট, হেরোইন ও নেশাজাতীয় ট্যাবলেট দেদারছে নিয়ে আসছে দেশের অভ্যন্তরে। এর মধ্যে সিংহভাগই ভারতীয় ফেনসিডিল ও ইয়াবা।
সমসাময়িক বছরগুলোতে একটি রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা নগরীর বস্তি, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীদের বিষয়ে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন তৈরি করে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে দাখিল করে।
এই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মূলত বস্তিগুলো থেকেই রাজধানীর মাদক ব্যবসার বিস্তার ঘটছে। সংঘবদ্ধ মাদক সিন্ডিকেটের সদস্যগণ রাজধানীর ঘনবসতিপূর্ণ বস্তি এলাকাগুলোকে ব্যবহার করছে নিরাপদ জোন হিসেবে।
বস্তিগুলোতে মদ, গাঁজা, ফেনসিডিল, ইয়াবা, হেরোইন, প্যাথেডিন, চরশ সহ সব ধরনের মাদক পাওয়া যায়। মাদক ব্যবসায়ীরা বস্তিতে অবস্থান করে বিভিন্ন ধরনের অবৈধ কর্মকান্ডের মাধ্যমে নগরীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিরও বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। পর্দার আড়ালে থেকে দেড় শতাধিক গডফাদার ঢাকার মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে। যাদের নেতৃত্বে কয়েক হাজার নারী-পুরুষ সহযোগী সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নগরীর বিভিন্ন স্পটে প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য বিক্রি করছে।
মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের তালিকা অনুযায়ী রাজধানীতে পাঁচশ’রও বেশি মাদক স্পট রয়েছে। এসকল স্পটগুলো মাদক বিক্রেতা, মাদক সেবী, সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজদের অভয়ারণ্যে পরিনত হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশ সদর দফতরের এক তালিকা অনুযায়ী, ডিএমপির বিভাগ অনুযায়ী রমনায় ৫৩টি, লালবাগে ৫৭টি, ওয়ারীতে ৭৭টি, মিরপুরে ৫৬টি, গুলশানে ২৫টি, উত্তরায় ৪০টি, মতিঝিলে ২২টি, তেজগাঁওয়ে ২৫টি চিহ্নিত মাদক স্পট রয়েছে।
রাজধানীর উল্লেখযোগ্য মাদকস্পটগুলো হচ্ছে- রমনা জোনের রমনা মডেল থানা এলাকার দিলু রোডের পশ্চিম মাথা, মগবাজার রেলক্রসিং-সংলগ্ন কাঁচাবাজার, আমবাগানের চল্লিশঘর বস্তি, পেয়ারাবাগ বস্তি, মধুবাগ ঝিলপাড়, মালিবাগ রেলক্রসিং থেকে মগবাজার রেলক্রসিং পর্যন্ত এলাকা, শাহবাগ থানার ফুলবাড়িয়া, সেক্রেটারিয়েট রোডের আনন্দবাজার বস্তি, ওসমানী উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মল চত্বর, টিএসসি, তিন নেতার মাজার, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আশপাশ এলাকা, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, কাঁটাবন এলাকার ভাসমান বিক্রয় স্পট, লালবাগের শহীদনগর ১ থেকে ৬ নং গলি, মৌলভীবাজার কাঁচাবাজার ও বলিয়াদী হাউস এলাকা, বালুরঘাট বেড়িবাঁধ, ঢাকেশ্বরী মন্দির-সংলগ্ন পিয়ারী বেগমের বাড়ি, শহীদনগর পাইপ কারখানা, বুয়েট স্টাফ কলেজের পেছনে, নবাবগঞ্জ পার্ক, রসুলবাগ পার্ক, আজিমপুর কবরস্থানের আশপাশ এলাকা,
আজিমপুর মেটার্নিটি হাসপাতাল-সংলগ্ন এলাকা, কোতোয়ালি থানা এলাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে এবং কর্মচারীদের স্টাফ কোয়ার্টারের আশপাশ এলাকা, সামসাবাদ এলাকার জুম্মন কমিউনিটি সেন্টারের আশপাশ, কসাইটুলি কমিউনিটি সেন্টারের আশপাশ, বাবুবাজার ব্রিজের ঢালে, বুড়ির বাগান, স্টার সিনেমা হলের সামনে, নয়াবাজার ব্রিজের ঢালে, নয়াবাজার ইউসুফ মার্কেট, চানখারপুল ট্রাকস্ট্যান্ড, নিমতলী মোড়, আরমানিটোলা স্কুলের আশেপাশের ২০ টি স্পট, কামরাঙ্গীরচর থানা এলাকার ট্যানারি পুকুরপাড়, পাকা পোল, কয়লাঘাট বেড়িবাঁধসহ বিভিন্ন এলাকার ১৮টি স্পট, সূত্রাপুরের রেললাইন সামাপাড়া বস্তি, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের পরীক্ষাগার অফিসের পশ্চিম পাশে, কাপ্তানবাজার মুরগিপট্টি, ধূপখোলা মাঠ, মুন্সিরটেক কবরস্থান, যাত্রাবাড়ী থানা এলাকার ধলপুর সিটি পল্লী, ওয়াসা বস্তি, আইডিয়াল স্কুল গলি, নবুর বস্তি, বউবাজার গলি, লিচুবাগানসহ ২৮ টি স্পট, শ্যামপুর থানা এলাকার জুরাইন রেলগেট, ব্রাদার্স ক্লাব সংলগ্ন মাঠ, ধোলাইখাল, নোয়াখালী পট্টি, মুরাদপুর মাদ্রাসা লেন, বেলতলা, শ্যামপুর বাজারসহ ৩০টি মাদক স্পট।
এছাড়াও ডেমরা থানা এলাকায় ছয়টি, মিরপুর মডেল থানা এলাকায় আটটি, পল্লবী থানা এলাকায় ২৪টি, কাফরুল থানা এলাকায় ১০টি, শাহআলী থানায় চারটি, বাড্ডায় ১৪টি, ভাটারা থানা এলাকায় তিনটি, খিলক্ষেত থানা এলাকায় পাঁচটি, ক্যান্টনমেন্ট থানা এলাকায় তিনটি, উত্তরা মডেল থানায় নয়টি, বিমানবন্দর থানা এলাকায় তিনটি, তুরাগ থানা এলাকায় আটটি, উত্তরখান থানা এলাকায় ১১টি ও দক্ষিণখান থানা এলাকায় ১৩টি স্পটে নির্বিঘ্নে মাদক ব্যবসা চলছে।
মোহাম্মদপুর থানা এলাকায় জজ মিয়ার বস্তি রাজধানীর সবচেয়ে বড় মাদক স্পট বলে কথিত। এই বস্তির ৩০-৪০টি ঘরের সব কটিতেই হেরোইন, ফেনসিডিল, মদ, গাঁজা, ইয়াবাসহ সব ধরনের মাদক পাওয়া যায় বলে জানা যায়। রাজধানীর প্রধান প্রধান স্পটগুলোর মধ্যে আনন্দবাজার বস্তি অন্যতম।
মাদকের উপর তথ্য অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সারা দেশে বিস্তৃত মাদক সিন্ডিকেটের মূল লগ্নিকারীরা মাদকদ্রব্য ধরেনা, ছোঁওয়োনা, তারা কেবল মধ্যস্থানে অবস্থানকারী লোকের মাধ্যমে মাদক ব্যবসায় কোটি কোটি টাকা পূঁজি বিনিয়োগ করে। তাই তারা বরাবরই ধরাছোঁয়ার বাহিরে থাকে। মধ্যস্থানীয় ব্যবসায়ীরাও পর্দার আড়ালে থেকে সুকৌশলে মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রন করে। তারাই প্রশাসন ও রাজনৈতিক ক্ষতাধরদের ম্যানেজ করে। একেবারে নিম্ন পর্যায়ে অবস্থান করে স্থানীয় পাইকারী ও খুচরা বিক্রেতারা।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, মিরপুর টি আশুলিয়া বেড়ীবাধসহ গোটা এলাকা মাদকের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রন করছে শামসুন্নাহার বুচী নামের একজন কথিত যুবমহিলালী নেত্রী। তার নেতৃত্বে এই এলাকায় হাতেম, পারুল, আলী আকবর, মাহবুব, ন্যাটা মনির সহ প্রায় তিরিশ জন মাদক ব্যবসায়ী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বীরদর্পে। নগরীর বিভিন্ন অলি-গলিতে জম-জমাট মাদক বানিজ্যের মধ্যে পুরান ঢাকা মাদক ব্যবসায়ীদের নিরাপদ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত। লালবাগের আলোচিত মাদক সম্রাজ্ঞী মনোয়ারা আর ইসলামবাগের ছাফির সাথে সহযোগী হিসেবে কাজ করে মুন্নি, টগর, তামান্না ও ময়ূরীর বিশাল নেটওয়ার্ক।
রাজধানীর অন্যতম স্পট- আনন্দবাজার বস্তির প্রধান হচ্ছে মাদক সম্রাজ্ঞী বানু। বানুর সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে নিমতলী বস্তির সাবিনা ও পারুল, পাইন্যা সর্দারের বস্তির রেণু, গণকটুলির মনোয়ারা রহমান নাছিমা, শ্যামপুরের ফজিলা, রানী বেগম ও পারুলী, শাহীনবাগের পারভীন, তেজকুনিপাড়ার সনি, হিরা, নাসিমা, হাজারীবাগের স্বপ্না, কলাবাগানের ফারহানা ইসলাম তুলি, চানখাঁরপুলের পারুল, বাড্ডার সুমি, রামপুরের সীমা ও শাহজাহানপুরের শামীম হক মুক্তা।
এদের নানাভাবে সহযোগিতা করে মাদক সম্রাট দাঁইত্যা বাবু, ডাইল আশরাফ, মতি, মিন্টু, দস্যু ইব্রাহিম, নুরনবী মুকুল আলম, রুবেল, সাত্তার সাহাবুদ্দীন, সন্ত্রাসী জলিল, কানা সেলিম, ন্যাটা মাসুদ। রাজধানী ফুলবাড়িয়া টার্মিনালে ইয়াবা ব্যবসায়ী শাহিন, কাপ্তান বাজারের রাজু, দোলাইখালের মিজান, ভিক্টোরিয়া-জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সবুজ, শনিরআখড়ায় সুমন অবাধে মাদকদ্রব্য বিক্রি করছে। সূত্রাপুর এলাকায় মাদক ব্যবসা করছে আনসারী বেগম, রহিমা বেগম, কামাল ওরফে সিটি কালাম, রবিন ওরফে জনি, লিটন ওরফে জাবেদ, বাপ্পী, লাল খান, খলিল, মোহাম্মদ আলী। রায়েরবাজারে নিমতলী এলাকায় হেরোইন ও ফেনসিডিল সাপ্লাই করছে জাকির। জেমি, জয়, দুলাল ও জাহাঙ্গীরকে সঙ্গে নিয়ে জাকির কলাবাগান, এলিফ্যান্ট রোড, ধানমন্ডি লেক, ডলফিন গলি, বাটা সিগন্যাল, সায়েন্স ল্যাব মোড়, হাতিরপুল ও বাংলামটরসহ গোটা ধানমন্ডি এলাকায় মাদক বিক্রি করে। হাজারীবাগের ট্যানারি মোড়, লালবাগ, কামরাঙ্গীরচর এলাকার মাদক বাণিজ্য চালাচ্ছে শামীম।
যাত্রাবাড়ী বউবাজার এলাকার ফেনসিডিল বাণিজ্য যুবলীগ নেতা সাইদুল নিয়ন্ত্রণ করছে। ধলপুরের সাগর জেলে যাওয়ার পর ওই এলাকার ফেনসিডিল স্পট নিয়ন্ত্রণ করছে এইচ বাবু। মির হাজারীবাগ এলাকায় আমীর হোসেন চালাচ্ছে বাংলা মদের স্পট। সায়েদাবাদ ব্রিজ এলাকায় ফেনসিডিল ও হেরোইন বাণিজ্য চালায় সেন্টু-লিটন, আবু বকর ও তার স্ত্রী শাহজাদী। বধূয়া কমিউনিটি সেন্টার, করাতিটোলা রিকশার গ্যারেজ, গোলাপবাগ পাম্পের পেছনে, ধলপুর নারকেল বাগান, সেবাপট্টি, আকবর আলী গার্মেন্টসের পেছনে, মাজারওয়ালার বাড়ির পাশে ও মানিকনগর স্পটে ছোট ছোট বিকিকিনি চলছে। সায়েদাবাদ টার্মিনাল এলাকায় ওয়াসার বস্তি, ভিআইপি কাউন্টারের পেছন, আজু শাহার গলিতে ফেনসিডিল, গাঁজা ও বাংলা মদের স্পট নিয়ন্ত্রণ করছে সালাউদ্দিন ও তার সহযোগী চানমিয়া ও কালা। সিটি পল্লী নগরীর সবচেয়ে বড় হেরোইনের বাজার। ১৫০- ২০০ জন বিক্রেতা এখানে কাজ করে। এখানে হক্কা মহাজনের মৃত্যুর পর মোকসা ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছিল।
পরে নিয়ন্ত্রণ যায় হক্কার মেয়ে হোসনে আরা ও শ্যালিকা শাহনাজের হাতে। বর্তমানে জুরাইন রেলগেট এলাকাকে কেন্দ্র করে তাদের হিরোইন ব্যবসা চলছে বলে জানা যায়। জুরাইন রেলগেট এলাকার আরেক মাদক নেতা সবুর। সবুরের স্পটের নিরাপত্তাকর্মীর দায়িত্বে আছে নয়ন ও রফিক। শ্যামপুর ও জুরাইন এলাকার মাদক বাণিজ্য চালাচ্ছে ইয়াবা ব্যবসায়ী জুয়েল, রবিউল, আনিস, সাইদুল ও রানা। টিটিপাড়ার মাদক স্পট বন্ধ হয়ে গেলে গোপীবাগের মাদক বিক্রেতারা অন্তত ৫০টি স্পট চালু করে।
এখানকার গডফাদার নাসির। গোপীবাগের গোবেনপুর স্পট নিয়ন্ত্রণ করছে জিয়া আর আয়শা ও ম্যাগী নামের দুই বোন। ধলপুর এলাকার ফেনসিডিল বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে সাগর। শহীদ ও মাসুম চালাচ্ছে আশপাশের স্পটগুলো। কমলাপুর রেলস্টেশন এলাকায় রাজত্ব করছে মান্নান। রেলওয়ে পুলিশের সঙ্গে মান্নানের আঁতাত রয়েছে। ১০টি স্পটে রেলপথে আশা ফেনসিডিল খালাস ও বিক্রি হয়।
ডেমরা এলাকায় মাদক বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করছে লিটন সিন্ডিকেট। ডেমরা এলাকার মাদক ব্যবসায়ীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- ডেমরা এলাকার পারুল, খোদেজা, রাজেয়া, পারভীন, ফারজানা, মর্জিনা, রহিমা, সারুলিয়া এলাকার পুস্প, রুপা, ইকবাল, শাহীন, নাসির, হানিফ, দর্শন, ফরিদ, সালাউদ্দিন, সুমন, শরীফ, কাজল, বাবুল, হাসান, মোয়াজ্জেম হোসেন, অজয় সাহা, জজ মিয়া, মুন্না, বাবলু, আমীর, রবি, রঞ্জু, ইব্রাহিম, রাসেদ, দেলোয়ার, মেহেদী, সুমন, সরওয়ার বেপারি এবং লিটন ওরফে কাটা লিটন।
রাজধানীর অন্যতম অভিজাত এলাকা গুলশানে মাদকের ছড়াছড়ি থাকলেও সেখানে মাদক বিরোধী কোন অভিযান হয়না বলা যায়। তাই এখানে এসে মাদকসেবিরা মাদক গ্রহনে স্বাচ্ছন্দ ও নিরাপদ বোধ করে। দামী দামী বিলাসবহুল গাড়িতে করেও গুলশানের রাজপথে মাদকের ব্যবসা চলে।
গোয়েন্দা সূত্র মতে, ২৮ জন প্রথম শ্রেণীর ডন গুলশান এলাকার মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে। এদের করে। অতি পরিচিত মাদক সম্রাজ্ঞী মৌ, রিনা, ময়না, রানী, বানু, সীমা, লিলি, খোরশেদী বেবী, রুবেল, যুবরাজ, আল-আমিন ওরফে জয়, আরিফ, রনি, সোহেল, শহীদ, আবুল কালাম, লালচান, রানু, স্বপন, রুহুল আমিন, কাঞ্চন, রাজু, ফটিক, মিজান, মোমিন, বশির আহমেদ, সাইফুল, লিটন, মানিক, বারিধারার নাদিয়া ও যুথীর নাম উল্লেখযোগ্য। গুলশান ২ নম্বরের ৮২ নম্বর সড়কের আমাজান কাব, ঢাকা বিলিয়ার্ড কাব, (বিবিসি কাব), গুলশান কাবের ৫৩ নম্বর রোডে ‘সুরা’, গুলশান ১ নম্বরের কোরিয়ানা রেস্টুরেন্টসহ ৭০-৭৫টি কাব ও রেস্টুরেন্টে খাবারের পাশাপাশি অনুমোদনহীন ভাবে সব ধরনের বিদেশি মদ ও বিয়ার বিক্রি হয় । অনেকে স্থানে বিক্রিত বিদেশি মদ নকল বলেও অভিযোগ পাওয়া যায়।
মাদক সিন্ডিকেটের ২০ ডন তেজগাঁও এলাকার মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে। এর মধ্যে মাকসুদা, মাহফুজা, সালমা, নাসিমা, সখিনা, কারওয়ানবাজারের মোমিন, কাশেম, এবাদুল, মনির, মনোয়ারা, সেকান্দর, ও আবদুল করিম অন্যতম। চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন ও মাসদু রানা নিয়ন্ত্রণ করছে ভাওয়ালবাগ এলাকার মাদক ব্যবসা। লালমাঠ বস্তির মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে বানু, মনি, মুন্নী, আমেনা ও মনু।
ক্যান্টনমেন্ট এলাকার মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণকারীদের মধ্যে প্রধান ৬ জন হচ্ছে আঁখি, ললিতা, পারভীন আক্তার, জাহাঙ্গীর আলম, রফিক ও মোশরাউদা। বনানী ও মহাখালী থানা এলাকায় মাদকের সর্বোচ্চ ঘাঁটি গড়ে উঠেছে ইদানীং। এ দুই অঞ্চলের শীর্ষ মাদক সম্রাজ্ঞী আইরিন ওরফে ইভা ও তার অন্যতম সহযোগী হচ্ছে জাকিয়া ও রওশন আরা বানু।
হালে মহাখালী-বনানীর সাততলা বস্তিতে মাদক ব্যবসা বেশ জমজমাট। এ এলাকায় জামরুল, কামরুল, সীমা, পিংকু, রুমা, রুবেল, জামাই নাজিমুদ্দিন, সোহেল বেশ জমিয়ে মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। মহাখালী রেলগেট, ঘিটুর বস্তি এলাকা, মহাখালী টার্মিনাল এলাকার সবচেয়ে আলোচিত মাদক ব্যবসা হলো শীর্ষ সন্ত্রাসী কালা সুমন, ল্যাংড়া কাজল, আতা তাদের মাদক ব্যবসায় সহযোগিতা করে। মহাখালী বন ভবন এলাকায় মাদক ব্যবসা পরিচালনা করে হাসান ও তার ভাই হোসেন। মহাখালী বাসস্ট্যান্ড পয়েন্টে পাইকারি মাদক সরবরাহ করে রিজু, মানিক ও গেন্দা বাবু।
উত্তরায় গুলবাহার, নাদিয়া এবং মাহমুদা ওরফে মুক্তির রয়েছে বিশাল সিন্ডিকেট। অন্যান্য মাদক ব্যবসায়ীরা হচ্ছে বিউটি বেগম, রাশেদুল কবীর দীপু, আল আমিন, মিজানুর রহমান, লাল খান ও চাঁন খান, উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকার ইয়াবা ব্যবসায়ী বিলকিস, উত্তরা পূর্ব থানাস্থ বিডিআর কাঁচাবাজারের হাবিব, দক্ষিণখান থানাস্থ ফায়দাবাদের মাদক সম্রাট মাঈনউদ্দিন, উত্তরখান থানাধীন কাঁচকুড়ার তমু। কড়াইল বস্তির প্রথম শ্রেণীর মাদক ব্যবসায়ীরা হচ্ছে রিনা, জোসনা, মাস্টার আলমগীর, জলিল, বেলতলার ফুল মিয়া, বিউটি, নূরু। টঙ্গীর মাদক ব্যবসায়ীরা হচ্ছে- ময়না, সাইফুল, আল আমিন, শফি, জামাল, নবীন, সালাম, রফিকুল, রণজিত, ইউসুফ, তুরাগ থানার পাটুরীয়া মনির, কামার পাড়ার মদ ব্যবসায়ী নিতাই।
মিরপুর এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীরা হচ্ছে- নাসিমা, হাওয়া খাতুন, শাহানুর, লাদেন ওরফে বাচ্চু, জটআলী, আবদুল হক, আবুল কাশেম, মাদক সম্রাট লিটন, সুমন, মনির মামা, কামাল, দুলাল, নয়ন, নজরুল, জনি মিয়া, নাসির, রাসেল, বাবুল ও আলমগীর। পল্লবী এলাকায় মাদক ব্যবসা করছে- ময়না, সালমা, রহিমা, হাছিনা, হাজেরা, জাহাঙ্গীর, শহীদ, ফজলা, ইদ্রিস ও মনির।
সুকৌশলী মাদক সিন্ডিকেট অত্যন্ত চতুরভাবে মাদক ব্যবসায় মেয়েদেরকে ব্যবহার করছে। শিশু থেকে বৃদ্ধা সব বয়সী মহীলাদেরকে ব্যবহার করছে তারা। এ ব্যবসায় অনেকে মাদক সম্রাজ্ঞী হিসেবে ইতোমধ্যেই বেশ পরিচিতি অর্জন করেছে। গোয়েন্দা সূত্র মতে, রাজধানীর ৭০ টি মাদক স্পট নিয়ন্ত্রণ করে মাদক সম্রাজ্ঞীরা। এসব সম্রাজ্ঞীর একেকজনের বাহিনীতে রয়েছে ১০-১২ সদস্য এবং রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা নিয়ন্ত্রণকারী প্রায় ২০০ সক্রিয় মহিলা মাদককর্মী রয়েছে এসব বাহিনীর সঙ্গে।
উল্লেখযোগ্য এই মাদক সম্রাজ্ঞীরা হলো- লালবাগের আলোচিত মাদক সম্রাজ্ঞী মনোয়ারা, আনন্দবাজার বস্তির মাদক সম্রাজ্ঞী বানু, নিমতলী বস্তির সাবিনা ও পারুল, গণকটুলির নাছিমা, শ্যামপুরের রানী, শাহীনবাগের পারভীন, তেজকুনিপাড়ার সনি ও হিরা, হাজারীবাগের স্বপ্না, কলাবাগানের ফারহানা ইসলাম তুলি, চানখাঁরপুলের পারুল, বাড্ডার সুমি, রামপুরের সীমা ও শাহজাহানপুরের শামীম হক মুক্তা, ডেমরা সারুলিয়ার রুপা ও পুস্প, গুলশানের মৌ, রিনা, ন্যান্সি, কুমকুম ও লিলি, ক্যান্টনমেন্ট এলাকার আঁখি ও ললিতা, বনানীর আইরিন ওরফে ইভা, উত্তরার গুলবাহার, নাদিয়া ও মাহমুদা, কড়াইল বস্তির রিনা ও জোসনা, মীরপুর এলাকার নাসিমা, পল্লবীর ময়না। শাহজাহানপুরের শামীম হক মুক্তা বিশেষভাবে ড্রাগ কুইন বা মাদক সম্রাজ্ঞী হিসেবে চিহ্নিত।
রাজধানীর জিয়া উদ্যান ও সংসদ ভবন ঘিরে চলে মোবাইল ফোনে মাদক ব্যবসা। জিয়ার মাজারের আশপাশের এলাকা সন্ধ্যার পরেই ভাসমান পতিতাদের দখলে চলে যায়। ভাসমান পতিতাদের মাধ্যমে মাদক ব্যবসা পরিচালনা করে মাদকসম্রাজ্ঞী পারুল এবং অজুফা। তবে এদের মধ্যে এখন অনেকেই কাঁধে একাধিক মামলা বহন করে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। কেউ কেউ মাদক মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে জেলহাজতেও রয়েছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক বলেন, ‘আমরা অভিযান পরিচালনা করলে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত মানুষেরা অনুরোধ করে ছেড়ে দেয়ার জন্যে। কিন্তু বড় পর্যায় থেকে এখন পর্যন্ত তদবির আসেনি। বড় মাদকের স্পট ২০০ থেকে ৩০০ টি। আর সমগ্র ঢাকা শহরে মোট ৬০০ থেকে ৭০০ মাদকের স্পট রয়েছে।
অন্যদিগে এই মানিক মুন্সিগঞ্জ জেলার লেীহজং থানার বাসিন্ধা দেখলে টেগরা হলে কি হবে কাজে কামে টেগরা নয় পদ্ধা নদিতে ডাকাতি সহ একসময় গরু চুরির সাথে জড়িত ছিল যদিও সে আর এফবিতে নিজেকে সৌদি আরব প্রবাসি বলে দাবি করে। বর্দমানে সে মাওয়া এলাকায় বিভিন্ন বাসা বাড়ীতে একং নৌকাতে মেয়ে দিয়ে ব্যবসা করে আর এই মানিক নিয়ে আসছে বিস্তারিত প্রতিবেদন।
আইন শৃঙ্খলাবাহিনী বলছে, ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশে মাদকের ঝুঁকি সব সময়ই ছিলো, তবে তারা তৎপর রয়েছেন। এক্ষেত্রে বাহিনীর কোনো সদস্যের গাফিলতি সহ্য করা হবে না বলে জানান তিনি।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উপ কমিশনার বলেন, ‘আমরা চাইনা মাদক বিক্রেতা ও মাদক সেবীদের সঙ্গে পুলিশের কোন সংশ্লিষ্টতা থাকুক। যদি এমন তথ্য পায় আমরা তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।’