সিএনএমঃ
নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র অর্থ সরবরাহকারী ২ সদস্যসহ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
বুধবার (৯ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীতে কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকা থেকে নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ এর অন্যতম অর্থ সরবরাহকারী আব্দুল হাদি ওরফে সুমন ওরফে জন, মো. আবু সাঈদ ওরফে শের মোহাম্মদ, মো. রনি মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। জন সুনামগঞ্জের একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন। তিনি এক থেকে দেড় বছর আগে সংগঠনের শূরা সদস্য সৈয়দ মারুফ ওরফে মানিকের মাধ্যমে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়। তিনি ছিলেন সংগঠনের ‘ক’ শ্রেণির অর্থদাতা। তিনি গত ৩ মাস আগে সংগঠনের শূরা সদস্য ও অর্থ শাখার প্রধান রাকিবকে সাংগঠনিক কার্যক্রমের জন্য ৯ লাখ টাকা দেয়। ইংল্যান্ডে অবস্থানরত তার দুজন প্রবাসী ভাইয়ের কাছ থেকে বিভিন্ন মসজিদ/মাদ্রাসায় সহায়তার কথা বলে টাকা সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, তিনি প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা সংগঠনে চাঁদা দেন। তিনি ২ মাস আগে হিজরতের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হন এবং অন্যান্য প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে পাহাড়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। কিন্তু পাহাড়ে র্যাবের অভিযান চলতে থাকায় তিনি চট্টগ্রামসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় কিছুদিন অবস্থান করে নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ডে এসে রনির মাধ্যমে পার্বত্য অঞ্চলে হিজরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন। সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর থানায় তার বিরুদ্ধে একটি সন্ত্রাস বিরোধী মামলা রয়েছে।
খন্দকার আল মঈন বলেন, মো. আবু অনলাইন শরীয়াহ গ্র্যাজুয়েশন ইনস্টিটিউট নামের প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতায় জড়িত ছিলেন। তিনি এক থেকে দেড় বছর শূরা সদস্য ও অর্থ শাখার প্রধান রাকিবের মাধ্যমে উগ্রবাদে অনুপ্রাণিত হয়। তিনি ছিলেন সংগঠনের একজন ‘ক’ শ্রেণির অর্থদাতা। তিনি ২ মাস আগে রাকিবের কাছে সাংগঠনিক কার্যক্রমের জন্য ৭ লাখ টাকা দেয়। এছাড়াও, সে প্রতি মাসে ৩০ হাজার টাকা চাঁদা প্রদান করতেন। তিনি বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে তার শরীয়াহ ইনস্টিটিউট, মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিম খানায় সহায়তার কথা বলে এ অর্থ সংগ্রহ করত। তিনি ১ মাস আগে পাহাড়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হন। কিন্তু পাহাড়ে অভিযান চলমান থাকায় সে রনির মাধ্যমে বিভিন্ন কৌশলে পার্বত্য অঞ্চলে যাওয়ার জন্য একত্রিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব কর্মকর্তা আরও জানান, রনি মিয়া স্থানীয় একটি বিদ্যালয় থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে। পরবর্তীতে সে নারায়ণগঞ্জে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ব্যবসা করত। তিনি ১ বছর আগে ছোটবেলার বন্ধু আল আমিন ওরফে আব্দুল্লাহ এর মাধ্যমে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়। আলামিনের নির্দেশে সে গত সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে আবু বক্করকে বান্দরবানে পৌঁছে দেয়। সে সংগঠনের দাওয়াতী কার্যক্রম ও হিজরতকৃত সদস্যদের বান্দরবানসহ বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে দেওয়ার কার্যক্রমে জড়িত ছিল। পার্বত্য অঞ্চলে র্যাবের অভিযান চলমান থাকায় গ্রেফতারকৃত জন ও মো. আবু সাঈদ পাহাড়ে যেতে না পারায় তারা বিভিন্ন কৌশলে পার্বত্য অঞ্চলে পৌঁছে দেওয়ার জন্য রনির শরণাপন্ন হয়ে নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় একত্রিত হয়।
র্যাব জানায়, বিগত সময়ে নিরুদ্দেশ তরুণদের বিষয়ে র্যাবের গোয়েন্দা শাখা নজরদারি করতে গিয়ে তথ্য পায় যে, নারায়ণগঞ্জ থেকে আবু বক্কর ওরফে রিয়াসাদ রাইয়ান নামে এক তরুণ গত মার্চ মাসে নিরুদ্দেশ হয়। এ সংক্রান্ত তার পরিবার সংশ্লিষ্ট থানায় একটি জিডি করে। প্রকাশিত নিরুদ্দেশ ৫৫ জনের তালিকায় আবু বক্কর এর নাম রয়েছে। গত ৩ নভেম্বর অভিযানে র্যাব সংগঠনের মহিলা শাখা সম্বন্ধে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পায় এবং জানতে পারে যে, একজন মা উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয় এবং উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হওয়া তার সন্তানকে প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে তথাকথিত হিজরতের নামে প্রেরণ করেছে। র্যাব প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ ও নজরদারির মাধ্যমে নিজ সন্তানকে প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে তথাকথিত হিজরতের নামে প্রেরণের সাথে জড়িত আম্বিয়া সুলতানা ওরফে এমিলিকে ৫ নভেম্বর উদ্ধার করে এবং তাকে পরিবারের সান্নিধ্যে রেখে গত ৪ দিন ধরে ডি-রেডিকালাইজেশনের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়ার মধ্যে রাখা হয়। এমিলি একটি স্বনামধন্য এয়ার লাইন্সে চাকরি করতেন।
জানা যায়, তার ছেলের শিক্ষক আল-আমিনের মাধ্যমে তিনি ও তার ছেলে আবু বক্কর ২০২১ সালের প্রথম দিকে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে সংগঠনে যোগদান করে। পরবর্তীতে আবু বক্কর চলতি বছরের মার্চ মাসে আল আমিনের নির্দেশনায় প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে তথাকথিত হিজরতের নামে বাড়ি থেকে বের হয় এবং সে আর বাড়িতে ফিরে আসেনি। অন্যান্য প্রশিক্ষণ শেষে গত সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝিতে আল আমিনের নির্দেশনায় গ্রেফতারকৃত রনি পাহাড়ে প্রশিক্ষণের জন্য আবু বক্করকে বান্দরবানে দিয়ে আসে। এমিলি তার ছেলে নিরুদ্দেশ হওয়ার কারণ ও অবস্থান জানলেও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের কাছে তা গোপন ছিল এবং অবু বক্করের বাবা থানায় তার ছেলের নিখোঁজের জিডি করাসহ ছেলের সন্ধানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর শরণাপন্ন হন। আবু বক্কর পাহাড়ে প্রশিক্ষণে যাওয়ার পর সন্তানের কোন খোঁজ খবর না পেয়ে তিনি সন্তানের চিন্তায় হতবিহবল হয়ে পড়েন এবং ভুল বুঝতে পেরে অনুশোচনা করতে থাকেন। পরবর্তীতে র্যাব সদস্যরা তার সন্ধান পেলে সন্তানকে ফিরে পেতে ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
র্যাব ৪ দিন ধরে ডি-রেডিকালাইজেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এমিলিকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে তার পরিবারের কাছে রাখা হয়। এ সময় তার দেওয়া তথ্য মতে র্যাব রনি সম্পর্কে জানতে পারে এবং রণিই তার ছেলে বক্করকে বাসা থেকে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে রণিকে খুঁজে বের করতে র্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে এবং গত রাতে রণিকে গ্রেফতার করা হয়।