সিএনএম ২৪ডটকমঃ
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ‘খুনি’ বলায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে ক্ষমা চাইতে হবে বলে দাবি করেছেন রাশিয়ার পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষের ডেপুটি চেয়ারম্যান কনস্ট্যানটিন কোসাশিয়ভ। বাইডেন যদি আনুষ্ঠানিকভাবে তার বক্তব্য প্রত্যাহার না করেন বা ক্ষমা না চান, সেক্ষেত্রে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি কঠিন হয়ে উঠবে বলেও হুঁশিয়ার করেছেন তিনি। খবর রয়টার্স’র।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নাম উল্লেখ না করে বৃহস্পতিবার এক ফেসবুক পোস্টে কোসাশিয়ভ বলেন, ‘এ ধরনের মূল্যায়ন কোনো রাষ্ট্রনায়কের মুখে শোভা পায় না। কোনো পরিস্থিতিতেই এই মন্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়।’
বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জো বাইডেনকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, বিরোধীদের ওপর রাশিয়ান সরকারের নির্মম আচরণের প্রেক্ষিতে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে তিনি ‘খুনি’ বলে মনে করেন কি না।
সেই প্রশ্নের উত্তরে বাইডেন বলেছিলেন, ‘হ্যাঁ (আমি তাকে খুনি বলে) মনে করি।’ পাশাপাশি ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পুতিন হস্তক্ষেপ করেছিলেন অভিযোগ করে সাক্ষাৎকারে বাইডেন বলেন, এজন্য রাশিয়াকে ‘চড়া মূল্য’ দিতে হবে।
এই সাক্ষাৎকার প্রচারের পরদিনই ওয়াশিংটন থেকে নিজেদের দূত আনাতোলি আন্তোনভকে ফিরিয়ে নেয় মস্কো। রুশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের স্পিকার ভিয়াশেস্লাভ ভ্লোদিন তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, ‘বাইডেন আমাদের দেশকে অপমান করেছেন। কারণ পুতিনের বিরুদ্ধে আক্রমণ মানে রাশিয়ার ওপর আক্রমণ।’
ভ্লোদিনের বক্তব্যকে অনুসরণ করেই বৃহস্পতিবারের ফেসবুক পোস্টে কোসাশিয়ভ বলেন, ‘আশা করছি যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এই মন্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চাওয়া হবে। যদি এমনটা না হয়, সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি এখানেই থেমে থাকবে না; জল অনেদূর পর্যন্ত গড়াবে।’
রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ক্রেমলিন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও এ বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। তবে রাশিয়ার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের সদস্য আর্থার শিলিঙ্গারভ ইতোমধ্যে হোয়াইট হাউসকে ‘কঠোর জবাব’ দিতে ক্রেমলিনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর গত শতকের পঞ্চাশের দশক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন তৎকালীন ধনতান্ত্রিক বিশ্ব ও সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বাধীন সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের মধ্যে শুরু হয় ‘শীতল যুদ্ধ’। দশকের পর দশকজুড়ে তীব্র টানাপোড়েন চলে যুক্তরাষ্ট্র ও তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে।
১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন এবং একক দেশ হিসেবে রাশিয়ার উত্থানের মধ্যে দিয়ে শেষ হয় ওই ‘শীতল যুদ্ধ’, ধীরে ধীরে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়া শুরু হয়।
কিন্তু ২০১৪ সাল থেকে ফের অবনতি ঘটতে থাকে এই সম্পর্কের মধ্যে। সম্প্রতি রাশিয়ার বিরোধীনেতা অ্যালেক্সেই নাভালনিকে গ্রেফতার ও কারাদণ্ড দেওয়ায় আরেক দফা অবনতি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রাশিয়ার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইতোমধ্যে বলেছেন, ২০১৬ সালে নির্বাচনে হস্তক্ষেপের অভিযোগে রাশিয়ার ওপর নতুন কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তুতি নিচ্ছে দেশটির সরকার।