সিএনএম প্রতিবেদকঃ
সরকার ও সরকারি সেবার বিরুদ্ধে গুজব ছড়িয়ে দেশে অস্থিশীলতা সৃষ্টির প্রচেষ্টা চালাচ্ছে একটি স্বার্থান্বেষী সংঘবদ্ধ চক্র। চক্রটির অপপ্রচার রোধ এবং এ বিষয়ে আইনগত প্রতিকার চেয়ে মামলা করেছে ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ‘নগদ’।
শুক্রবার প্রতিষ্ঠানটির হেড অব পাবলিক রিলেশনস মুহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম সজল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
হেড অব পাবলিক রিলেশনস বলেন, একটি স্বার্থান্বেষী মহল অপপ্রচার চালাচ্ছে। আইনগত প্রতিকার চেয়ে বৃহস্পতিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার সিএমএম কোর্টে অজ্ঞাতনামা ১০ হাজার জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, মামলার নম্বর ২৪৯/২১। পরে মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি আগামী ২০ এপ্রিলের মধ্যে তাদের এ বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
‘নগদ’ দাবি করছে গত কয়েকদিন ধরে একটি সংঘবদ্ধ চক্র সারাদেশে অন্তত তিন লাখ লিফলেট বিতরণ করেছে। আর এ কাজে তারা সরাসরি নিয়োজিত করেছে ১০ হাজারের বেশি কর্মী। বিষয়টি রোধ করতে অজ্ঞাতনামা সহস্রাধিক ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে।
নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের মতো করে বিভিন্ন কৌশলে এবং খুবই গোপনীয়তার সঙ্গে দেশব্যাপী সরকারবিরোধী ও সরকারি সেবার বিরুদ্ধে এসব লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। লিফলেটগুলোতে সরকারকে সরাসরি হেয় প্রতিপন্ন করা হয়েছে। লিফলেটগুলোর সঙ্গে সম্প্রতি আল জাজিরা টেলিভিশনের প্রচারিত বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদনের বাংলা কপি জুড়ে দেওয়া হয়েছে, যা ইতিমধ্যে উচ্চ আদালত দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। একইসঙ্গে সেনাপ্রধান ও সেনাবাহিনী এবং ডাক বিভাগের ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ‘নগদ’-কে হেয় প্রতিপন্ন করতে বিভিন্ন আন্ডারগ্রাউন্ড মিডিয়ার প্রতিবেদনের কপিও এতে সুকৌশলে জুড়ে দিয়েছে চক্রটি।
গত বুধবার উচ্চ আদালতও ইউটিউব, ফেসবুক, টুইটারসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে কাতারভিত্তিক আল জাজিরা টেলিভিশনের তথ্য চিত্রটি অপসারণের জন্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে নির্দেশনা দিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সারাদেশে এ ধরনের উস্কানিমূলক লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে জনগণকে বিভ্রান্ত করা এবং দেশে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। যা মূলত নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনগুলোর কর্মপ্রক্রিয়ার অংশ হয়ে থাকে। এর সঙ্গে দেশি-বিদেশি একটি কুচক্রীমহল জড়িত বলেও তথ্য পেয়েছে সংস্থাগুলো।
রাজধানী এবং এর বাইরে বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত কয়েকদিনে একটি আর্থিক কোম্পানি তাদের ডিস্ট্রিবিউটরদের মাধ্যমে এসব লিফলেট বিতরণ করিয়েছে। পরে ডিস্ট্রিবিউটরদের কর্মীরা বিভিন্ন এজেন্ট পয়েন্টে গিয়ে এজেন্টদের হাতে হাতে এসব লিফলেট দিয়ে এসেছেন। যা বিভিন্ন এজেন্ট পয়েন্টে থাকা সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে।
লিফলেট বিতরণ সংক্রান্ত বেশকিছু ভিডিও ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, যা থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় কোনো একটি কোম্পানির লোকেরা এ লিফলেট বিতরণের দায়িত্ব পালন করছেন। বিভিন্ন ভিডিওতে পারস্পরিক কথোপকথন থেকেও দেশি-বিদেশি অংশীদারিত্বে পরিচালিত আর্থিক কোম্পানিটির নাম চলে এসেছে।
কোম্পানির সূত্র বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে ‘নগদ’ যখন ব্যবসায়িকভাবে অনেক ভালো করছে, একের পর এক নতুন নতুন সেবা নিয়ে এসে বাজারে শক্ত অবস্থান তৈরি করছে তখন প্রতিহিংসার কারণে একটি চক্র নানাভাবে ভুয়া খবর রটিয়ে গ্রাহকদের বিভ্রান্ত করার কৌশল হাতে নিয়েছে।
নগদের একটি সূত্র বলছে, বহুদিন থেকে দেশি-বিদেশি শক্তিশালী সংঘবদ্ধ চক্রটি নানাভাবে দেশের অভ্যন্তরের পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। তাসনিম খলিল নামের এক প্রবাসী বাংলাদেশিকেও চক্রান্তের অন্যতম হোতা হিসেবে ইতিমধ্যে সরকারের বিভিন্ন পক্ষ থেকে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রবাসে থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে তিনি সরকার ও সরকারি সেবার বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যাচার করে যাচ্ছেন। আল জাজিরার তথ্য চিত্র নির্মাণ প্রক্রিয়ায়ও এ তাসনিম খলিল সরাসরি অংশ নিয়েছেন।
তাসনিম খলিলও দেশের ভেতরের অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির এ হীন প্রচেষ্টার সঙ্গে নানাভাবে জড়িত বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর এ চক্রের সঙ্গে জড়িত হয়ে বিদেশি মদদপুষ্ঠ আর্থিক কোম্পানিটিও এ সুযোগে লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে নিজেদের ব্যবসায়িক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করে ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে বলে ধারণা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো।