বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের পয়েন্ট টেবিলে ইঁদুর-বিড়াল খেলা চলছে। কখনো কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে সরিয়ে শীর্ষে উঠছে ফরচুন বরিশাল। আবার কখনো বরিশালকে নিচে নামিয়ে শীর্ষে চলে যাচ্ছে কুমিল্লা। সমান ৯ পয়েন্ট নিয়ে রান রেটে এগিয়ে থেকে কুমিল্লা আজ (সোমবার) মুখোমুখি হয় বরিশালের। তবে সাকিব আল হাসানের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে ভর করে ভরাডুবি ইমরুল কায়েসের দলের। ৩২ রানে জয় পেয়েছে বরিশাল। এতে কুমিল্লাকে সরিয়ে আবার শীর্ষে উঠল সাকিবের দল।
বিপিএলে আজ থেকে শুরু হয়েছে সিলেট পর্ব। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আগে ব্যাট করে সাকিব আল হাসানের ফিফটির কল্যাণে স্কোরবোর্ডে ১৫৫ রান জমা করে বরিশাল। এই রান টপকাতে নেমে বরিশালের বোলিং তোপে একেবারেই সুবিধা করতে পারেনি বিপিএলের দুইবারের চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা। তাদের ইনিংস থামে ১২৩ রানে। এতে ৩২ রান জয়ের সঙ্গে ৮ ম্যাচ শেষে ১১ পয়েন্ট শীর্ষে বরিশাল। ১ ম্যাচ কম খেলে ৯ পয়েন্ট কুমিল্লার। ব্যাটিংয়ে ৫০ করার পর বল হাতে ২ উইকেট নেন সাকিব।
বরিশালের দেওয়া ১৫৬ রানের লক্ষ্য টপকাতে নেমে পাওয়ার-প্লের ৬ ওভারেই ৩ উইকেট হারিয়ে ধুকতে থাকে কুমিল্লা। অধিনায়ক ইমরুলের সামনে সুযোগ ছিল নিজেকে মেলে ধরার। আগের ম্যাচে ৮১ রানে অপরাজিত ইনিংস খেললেও আজ থামেন মাত্র ১ রানে। সাকিবের বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। ওপেনার লিটন দাস ভালো শুরু পেলেও ছন্দ হারিয়ে বসেন। জাতীয় দলের সতীর্থ সাকিবকে ডাউন দ্য উইকেটে খেলতে গিয়ে লাইন হারিয়ে স্টাম্পিং হন ১৭ বলে ১৯ করে।
মাহমুদুল হাসান জয় ৫ রান করে আউট হলে শুরুর ৬ ওভারে ৩ উইকেট হারানো কুমিল্লার সংগ্রহ দাঁড়ায় ৩৫ রান। সেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি দলটি। ইংলিশ অলরাউন্ডার মঈন আলিকে ৬ রানে থামান পার্টটাইমার নাজমুল হোসেন শান্ত। নাহিদুল ১ রান করে রান আউটে কাটা পড়লে খেই হারিয়ে বসেন একপ্রান্ত আগলে খেলা মুমিনুল হকও। সমান ৩০ বলে ৩০ করে নাঈম হাসানের শিকার হন ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে।
করিম জানাত ব্যাট চালিয়ে খেলে হারের ব্যবধান কমাতে চেয়েছিলেন। তবে ১৭ রানে থাকা জানাতকে সাজঘরের পথ দেখান ব্রাভো। পরে ভানভীর ইসলাম ১৪ বলে অপরাজিত ২১ রান ছাড়া বাকিরা সুবিধা করতে না পারলে নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ৯ উইকেট হারিয়ে ১২৩ রানে থামে কুমিল্লার ইনিংস। এতে ৩২ রানের বিশাল জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে বরিশাল। নাঈম হাসান ৩টি এবং সাকিব আর ব্রাভো নেন ২টি করে উইকেট।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নামা বরিশাল পেয়েছিল ভালো শুরু। ওপেনার মুনিম শাহরিয়ারের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের শুরুতেই বড় স্কোরের স্বপ্ন বুনে বরিশাল। তবে ব্যর্থতার ধারাবাহিকতা ভাঙতে পারেননি ক্রিস গেইল। বাঁহাতি স্পিনার তানভীর ইসলামের বলে সুমন খানের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ৮ বলে ১০ রান করে। ভালো করতে পারেননি নাজমুল হোসেন শান্ত। তানভীরের দ্বিতীয় শিকার হয়ে ফেরেন ৪ বলে ১ রানে।
তৃতীয় উইকেট জুটিতে সাকিব আল হাসানকে পেলেও মুনিম নিজে স্থায়ী হননি বেশিক্ষণ। ফিফটির পথে হাঁটতে থাকা এই ডানহাতি ৫ রানের আক্ষেপে পোড়েন। ২৫ বলে ৪৫ রান করে সাজঘরে ফেরার আগে হাঁকান ৪টি চার ও ৩টি ছক্কা। ব্যাট হাতে এই ম্যাচেও উজ্জ্বল ছিলেন সাকিব। চতুর্থ উইকেটে তৌহিদ হৃদয়ের সঙ্গে ৬৭ রানের জুটি গড়ার পথে এবারের বিপিএপে নিজের দ্বিতীয় ফিফটি তুলে নেন বাঁহাতি অলরাউন্ডার।
তবে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে নিজের ২১তম অর্ধশতক করার পর সেই ইনিংসটিকে আর বড় করতে পারেননি বরিশালের অধিনায়ক। করিম জানতের বলে আউট হলে তার ৩৭ বলে ৫০ রানের ইনিংসটি থামে ৪টি চার ও ২টি ছয়ের মারে। সাকিবের বিদায়ের পর বরিশালের রানের গতি স্লথ হয়ে যায়। ৬ বলে ১০ রান করে আউট হন ব্রাভো।
বলের সাথে পাল্লা দিয়ে রান তুলতে রীতিমত সংগ্রাম করেছেন হৃদয়। ৩৭ বলে ৩১ রান করে অপরাজিত থাকেন তিনি। ৩ বলে ৩ রান করে অপরাজিত থাকেন নুরুল হাসান সোহান। এতে নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ৫ উইকেট হারিয়ে স্কোর বোর্ডে ১৫৫ রানের সংগ্রহ পায় বরিশাল। কুমিল্লার পক্ষে তানভীর ইসলাম ২টি এবং মঈন আলি, করিম জানাত ও মুস্তাফিজুর রহমান ১টি করে উইকেট নেন।