মো. সাকিব হোসেইনঃ
সংবাদদাতা: কুমিল্লার তিতাসে প্রেমিকাকে ফোন করে ডেকে নিয়ে গুম করার ২মাস ৫দিন পর আদালতে স্বীকারোক্তিূলক জবানবন্দি দিয়েছে ডি.বি’র হাতে আটক প্রেমিক মুন্না।
গত ৫সেপ্টেম্বর উপজেলার সাগরফেনা গ্রামের জামাল সরকারের মেয়ে ২সন্তানের জননী জান্নাতুল ফেরদৌসকে ফোন করে ডেকে নিয়ে নিখোঁজ করে একই গ্রামের আব্দুল করিমের ছেলে প্রেমিক তারেক মাহমুদ মুন্না।
ওই ঘটনায় ভিকটিমের মা হালিমা বেগম বাদী হয়ে তিতাস থানায় প্রেমিক মুন্না ও তার মামা নাঈমসহ ৭জনকে আসামী করে গত ১১ সেপ্টেম্বর তিতাস থানায় একটি অপহরণ মামলা করেন। অপহরণ মামলা দায়ের করলেও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে জনমনে ছিলো সন্দেহ।
সবশেষ কুমিল্লা ডি.বি পুলিশের অভিযানে মামলার প্রধান আসামী মুন্নাকে আটকের পর গত ৯নভেম্বর বিজ্ঞ আদালতে জান্নাতকে হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দেয়।
কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট,২য় আদালতের বিজ্ঞ বিচারক আবিদা সুলতানা মলি’র নিকট হত্যার দায় স্বিকার করে ১৬৪ধারায় দেওয়া জবানবন্দি ও মামলা সূত্রে জানা যায়, তিতাসের জগতপুর ইউনিয়নের সাগরফেনা গ্রামের জামাল সরকারের মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌসের সঙ্গে একই গ্রামের আব্দুল করিমের ছেলে তারেক মাহমুদ মুন্নার পরকিয়া প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। বিষয়টি জানা জানি হলে ২০১৮ সালের দিকে জান্নাতের প্রথম সংসার ভেঙ্গে যায় এবং গত ২০২৩ সালে গ্রাম্য শালিসের মাধ্যমে মুন্নার সাথে ৫লাখ টাকা দেনমোহরে বিয়ের দিন ঠিক হয়। কিন্তু মুন্না জান্নাতকে বিয়ে না করে গোপনে বিদেশ চলে যায়। এর ১ বছর পর চলতি বছরের আগস্টের দিকে মুন্না দেশে আসে এবং অন্য মেয়েকে বিয়ে করে ফেলে। বিষয়টি জান্নাতকে কষ্ট দিলে দু’জনের মধ্যে অন্তর্কলহ সৃষ্টি হয় এবং জান্নাতকে হত্যার প্লান করে মুন্না। চিন্তা অনুযায়ী ৫ সেপ্টেম্বর জান্নাতকে বাসা থেকে ফোন করে ডেকে নিয়ে পার্শ্ববর্তী হোমনা উপজেলার মাথাভাঙ্গা এলাকা দিয়ে কাঁঠালিয়া নদীর পাড়ে একটি ব্রীজে নিয়ে জান্নাতকে মুন্নার জীবন থেকে সরে যেতে অনুরোধ করে। কিন্তু জান্নাত সরে যেতে না চাইলে মুন্নার ব্যাগে থাকা দা’য়ের উল্ট দিক দিয়ে মাথায় আঘাত করে। এরপর জ্ঞান হারিয়ে গেলে প্রথমে দেহ থেকে মাথা আলাদা করে এরপর হাত ও পা বিচ্ছিন্ন করে হত্যা করে মোট ৬টুকরো করে স্কুলের ব্যগে ভরে নদীতে ফেলে দেয়। এরপর বাসায় এসে রাতে দরুদ শরীফ পড়ে ঘুমিয়ে যায়।
এদিকে থানায় মামলা হলেও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে শুরু থেকেই আপত্তি ছিলো ভিকটিমের পরিবারের। আসামী মুন্নাকে আটক করার জন্য পুলিশের দ্বারে দ্বারে ঘুরে হয়রান ছিলো জান্নাতের মা, মামা ও নানা। কিন্তু আসামী গ্রেফতার না করে উল্টো জান্নাতের পরিবারকে হয়রানী করেছেন বলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক এসআই কাউসারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন তারা।
অন্যদিকে জান্নাতকে অপহরণের পর থেকেই তার ব্যবহৃত মোবাইল থেকে ফেসবুকে ও ম্যাসেঞ্জারে অপপ্রচার চালিয়ে জান্নাতকে সমাজের চোখে দুশ্চরিত্রা প্রমানের চেষ্ঠা চালায় এই ঘা/ত/ক। সেই ১০টি ফেইক আইডিও খুলে বলে ডি.বি’র তদন্তে বের হয়েছে।
মামলার বাদি ও ভিকটিমের মা হালিমা বেগম বলেন, আমার মেয়ে নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই বলে এসেছি, এই মুন্নাই আমার মেয়েকে গুম করেছে। কারন, সর্বশেষ মুন্না ই ফোন দিছিলো আমার মেয়ে জান্নাতকে। কিন্তু পুলিশ কখনোই মুন্না বা তার পরিবারকে গ্রেফতার করেনি। উল্টো, আমরা নাকি জান্নাতকে লুকিয়ে রেখে নাটক করতেছি, সে জন্য আমার ছোট মেয়ের মোবাইল নিয়ে রাখে এসআই কাউসার। আজকে পুলিশের অবহেলার কারণে আমার মেয়ের লাশটাও পাইলাম না।”
ভিকটিমের মা হালিমা বেগম কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, আমার আদরের ২টি ছোট ছোট নাতিকে এতিম করেছে মুন্না, তার মামা ও খালারা। আমার মেয়েকে হত্যায় জড়িত সকল খুনিদের বিচার চাই।
মুন্নাকে আটক ও আদালতে স্বিকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলেও তিতাস থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. কাউসার সাংবাদিকদের জানান, রহস্য উদঘাটনে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। খুব দ্রুতই জান্নাত নিখোঁজের বিষয়টি বের করা হবে।
তবে কুমিল্লা ডি.বি পুলিশের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসআই মোঃ জীবন জানান, ঘটনাটি তদন্তাধীন রয়েছে। আরো গভীরভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যে বা যারা ই জড়িত থাকবে, সবাইকেই আইনের আওতায় আনা হবে।