৪ লক্ষ্য-উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ৭ দলের সমন্বয়ে গঠিত নতুন রাজনৈতিক জোট গণতন্ত্র মঞ্চের ভিত্তির খসড়া তৈরি করা হয়েছে। ১৯ জুন জোটের পরবর্তী বৈঠকে তা চূড়ান্ত করার কথা রয়েছে। তারপর সেই ভিত্তিকে সামনে রেখে মাঠের কর্মসূচিতে নামার পরিকল্পনা তাদের।
যেসব দল ও ব্যক্তি জোটের এই ভিত্তির সঙ্গে একমত হবেন, তারা এই মঞ্চের সঙ্গে যুক্ত হতে পারবেন। মঞ্চেদ শরিকরা বলছেন, বর্তমান ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যবস্থার বদলে গণতান্ত্রিক কল্যাণকর রাষ্ট্রগঠন গণতন্ত্র মঞ্চের লক্ষ্য। আর তা বাস্তবায়ন করতে হলে দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার, সাংবিধানিক ও শাসনতান্ত্রিক সংস্কার, দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট চালু, এলাকাভিত্তিক সংসদ নির্বাচনের পাশাপাশি সমসংখ্যক আসনে জাতীয়ভিত্তিক ভোটের অনুপাতে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের ব্যবস্থা চালু এবং বিনা চিকিৎসায় কেউ মারা যাবে না- এই নীতির স্বাস্থ্যখাত চালু করতে হবে।
গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে যারা যুক্ত হতে চাইবেন, তাদের এইসব প্রস্তাবনা মেনে জোটে আসতে হবে। একইসঙ্গে আগামী নির্বাচনে আমরা যাদের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করব, তাদেরও এই দাবিগুলো মেনে নিতে হবে। নির্বাচনে জয়ী হয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেলে সেই সরকারকে এই প্রস্তাবনা বাস্তবায়ন করতে হবে।
গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোক্তাদের একজন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের জোট আসলে কিসের ভিত্তিতে সামনের দিকে এগোবে বা আমরা যে একটা জোট গঠন করতে যাচ্ছি তার ভিত্তি কী হবে, সেটার একটা খসড়া তৈরি করা হয়েছে। এটা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে গণতান্ত্রিক কল্যাণকর রাষ্ট্র গঠনে বেশকিছু লক্ষ্য-উদ্দেশ্য রাখা হয়েছে। খসড়া চূড়ান্ত হলে জনগণের সামনে আমরা তা তুলে ধরব।
গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোক্তা একটি দলের শীর্ষ নেতা জানান, গণতন্ত্র মঞ্চের ভিত্তির চূড়ান্ত খসড়ায় কিছু বিষয় রাখার চেষ্টা করা হবে। এর মধ্যে সরকারপ্রধান ও দলীয়প্রধান একই ব্যক্তি হতে পারবে না, এমন একটি বিষয় থাকবে। যদিও শেষ পর্যন্ত সেটা রাখা যাবে কি না আমি জানি না। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী-রাষ্ট্রপ্রতির ক্ষমতায় ভারসাম্য আনার বিষয়ে কিছু প্রস্তাবনা থাকবে।
গণতন্ত্র মঞ্চের ভিত্তির খসড়ার ৪ দফা প্রস্তাবনার প্রথম দফায় নির্বাচনের পূর্বে কী করণীয় তা উল্লেখ করা হয়েছে। এরমধ্যে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য বর্তমান সরকারকে অবশ্যই পদত্যাগ করে একটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা বলা হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় বলা হয়েছে- নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাজ কী হবে তার একটা প্রস্তাবনা দেওয়া আছে। এর মধ্যে সক্ষম নির্বাচন কমিশন নিয়োগ, প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক রদবদল, নির্বাচন আইন ও বিধিমালার যথাযথ সংস্কার এবং ইভিএম ব্যবস্থা বাতিল করে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সে নির্বাচনের ব্যবস্থার কথা উল্লেখ রয়েছে।
আর পরবর্তী দুই দফায় নির্বাচনের পরে রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে কল্যাণকর রাষ্ট্র গঠনে কী কী সংস্কার করতে হবে তার উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল, নাগরিক সেবায় ‘একটেবিল নীতি’ চালু, একই ব্যক্তি দলীয় প্রধান ও সরকার প্রধান হতে না পারার বিষয়গুলো উল্লেখ আছে।
এই জোটে রয়েছে মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্যও। নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মান্না ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের জোটের ভিত্তি বা লক্ষ্য-উদ্দেশ্য যেটাই বলেন, তার একটা খসড়া তৈরি হয়েছে। গত মিটিংয়ে সেটা চূড়ান্ত করা সম্ভব হয়নি। ১৯ তারিখে আবার আমাদের বৈঠকে বসার কথা আছে। সেই বৈঠকে হয়তো ফাইনাল হবে।
তিনি আরও বলেন, গণতান্ত্রিক একটি কল্যাণকর রাষ্ট্র বিনির্মাণ করা আমাদের লক্ষ্য। অন্যান্য দলের মতো সেটা ঘোষণার মধ্যে আমরা সীমাবদ্ধ থাকব না, সেটা জনগণের সামনে পরীক্ষা দিয়ে প্রমাণ করব। নিজেদের কমিটমেন্ট, বিচক্ষণতা ও সততা দিয়ে জোটের ভিত্তিগুলো বাস্তবায়ন করে জনগণের কাছে প্রমাণ করব, আমরা পারি।
গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জোটের ভিত্তি চূড়ান্ত হওয়ার পরে ধীরে-ধীরে মাঠের কর্মসূচিতে সক্রিয় হওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে, মাঠের কর্মসূচিতে যাওয়ার আগে কিছুটা সময় নেওয়া হবে। আর সেই কর্মসূচিতে সরকারের বাইরে থাকা সব দলকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। তখন যেসব দল কর্মসূচিতে যোগ দেবে এবং জোটের ভিত্তির সঙ্গে এতমত হবে, তাদের জোটে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক দল গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ঢাকা পোস্টকে বলেন, কর্মসূচি এবং জোটের পরিধি বাড়ানোর বিষয়ে আমাদের এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এখন আমরা নিজেদের মধ্যে ঐক্য বাড়ানোর বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছি। জোটের ভিত্তি কী হবে, তা নিয়ে এখন আমাদের কাজ চলছে।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে মঞ্চের শরিক দলের শীর্ষ এক নেতা বলেন, ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি দল গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তারা আমাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে। আমাদের জোটের সঙ্গে আওয়ামী লীগ এবং জোটের শরিকরা তো যুক্ত হবে না। বিরোধী যেসব রাজনৈতিক দল আছে, তারাই ভবিষ্যতে আমাদের সঙ্গে যুক্ত হবে।
তিনি আরও বলেন, আগামী নির্বাচনের তো এখনও প্রায় দেড় বছরের বেশি সময় আছে। এই সময়ে বাংলাদেশের রাজনীতির অনেক কিছু ঘটতে পারে, পরিবর্তনও হবে। তখন বোঝা যাবে যে নির্বাচন কোনো প্রক্রিয়ায় হবে। নির্বাচনী ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করে তখন সরকারের অনেক সঙ্গীও এদিকে আসতে পারে।