আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও দলের ২২তম জাতীয় কাউন্সিলকে সামনে রেখে সাংগঠনিক গতি বৃদ্ধিতে তৎপরতা বাড়িয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।
দলীয় সূত্র বলছে, আগামী ডিসেম্বর দলের ২২তম জাতীয় কাউন্সিল। এই কাউন্সিলের আগেই তৃণমূল থেকে দলকে পুনর্গঠন করবে আওয়ামী লীগ। একইসঙ্গে দলকে ঢেলে সাজানোর কাজে সাংগঠনিক দ্বন্দ্বকে প্রধান টার্গেট হিসেবে নিয়ে তা দ্রুত নিরসনে কাজ করছেন দলটির ৮ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।
অন্যদিকে গত ৭ মে গণভবনে দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা ৮ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকদের তৃণমূল পর্যায়ের রিপোর্ট নেন। তিনি এ সময় নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব নিরসনেও তাগিদ দেন। তিনি নির্দেশনা দেন, কেন্দ্রীয় পর্যায়েও যদি নেতৃত্বে দ্বন্দ্ব থাকে, সেটি নিরসনে।
দলীয় সভাপতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে সাফ বলে দেন, দলে যেখানেই দ্বন্দ্ব-বিভেদ, গ্রুপিং-কোন্দল, সেখানেই কঠোর হস্তক্ষেপ। সে দলের যত বড়ই নেতা, মন্ত্রী-এমপি হন কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। সামনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারি-বেসরকারি গোয়েন্দা সংস্থা প্রত্যেক নেতাকর্মীর প্রোফাইল চেক করছে। কারণ আগামী নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার ক্ষেত্রে কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পেলে ছাড় দেওয়া হবে না। তাই সংগঠনকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে যেখানে যা প্রয়োজন সেটি করতে হবে। আমি কাউকে মনোনয়ন দিয়ে এমপি হিসেবে সংসদে আসার দায়িত্ব নিতে পারব না। যার যার নিজ যোগ্যতায় নির্বাচনে জিতে আসতে হবে। সবাই সাংগঠনিকভাবে দলকে শক্তিশালী করার কাজে হাত দেন।
অন্যদিকে গত ১০ মে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সঙ্গে দলের ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের বৈঠকে ইতোমধ্যে দলটির গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র সংশোধনের দায়িত্ব বণ্টন করা হয়েছে। এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দলের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সেলিম মাহমুদকে।
আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতা বলেন, সামনে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল। এই কাউন্সিলের আগেই দলকে সুসংগঠিত করতে ইতোমধ্যে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশনা দিয়েছেন। ওই নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা দলকে শক্তিশালী করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছি। ডিসেম্বরে দলের ২২তম জাতীয় কাউন্সিলের আগেই দেশের সব মেয়াদোত্তীর্ণ মহানগর-জেলা-উপজেলা-পৌর ও ইউনিয়নের সম্মেলনের মাধ্যমে দলকে ঢেলে সাজানো হবে। একইভাবে ঢেলে সাজানো হবে ঢাকা মহানগরের উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ এবং ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ। এছাড়া নতুন সদস্য সংগ্রহের কাজেও হাত দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ কাজগুলো শুরু করেছে। থানা ও ওয়ার্ডগুলোতে সদস্য সংগ্রহের কাজ চলছে। একইসঙ্গে যারা বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন, তাদের বিরুদ্ধেও শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়েছে। এই শুদ্ধি অভিযানের বড় টার্গেটই হচ্ছে সংগঠনের মধ্যে সৃষ্ট বিরোধ নিষ্পত্তি করে দলকে শক্তিশালী এবং নির্বাচনমুখী করে গড়ে তোলা। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের ভবিষ্যতে দলের কোনো মনোনয়ন বা দলীয় কোনো পদ-পদবিতেও রাখা হবে না। তারা দলে থাকবে কিন্তু কোনো পদ পাবেন না। এমন নির্দেশনা দলের সভাপতি দিয়েছেন। সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। এছাড়া দলের কাউন্সিলকে সামনে রেখে গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র সংশোধনেরও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে আগামী এক মাসের মধ্যে এটি করা সম্ভব হবে।
সম্প্র্রতি এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ যদি ঐক্যবদ্ধ থাকে আগামী নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিজয়ের বন্দরে পৌঁছাতে পারব। অপপ্রচার ও চরিত্র হনন করে লাভ নেই। দেশে-বিদেশে প্রোপাগান্ডা করে লাভ নেই। আওয়ামী লীগের শেকড় বাংলাদেশের যত গভীরে, সেটা উপড়ে ফেলা যাবে না। তাই সবার আগে দলকে সাংগঠনিকভাবে ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে হবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান সময়ের আলোকে বলেন, ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় কাউন্সিল। এছাড়া সামনে নির্বাচন। এই নির্বাচনকে সামনে রেখে সংগঠনকে গতিশীল ও বেগবান করার লক্ষ্যে দেশব্যাপী কাজ করছি। আশা করি জাতীয় সম্মেলনের আগেই মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলো জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সম্মেলনগুলো শেষ করব। আমাদের মূল টার্গেট আগামী নির্বাচন। এই নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় যা যা করা দরকার সেটি আওয়ামী লীগ করবে। এ কারণে আমাদের সাংগঠনিক তৎপরতা আরও জোরদার করা হয়েছে। আমাদের দেশব্যাপী সদস্য সংগ্রহের কাজ চলছে। এছাড়া তৃণমূল পর্যায়ে যেখানে নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব রয়েছে, সেগুলো নিরসনে সব ধরনের চেষ্টা চলছে। আশা করি তারা সবাই ঘরের ছেলে। সময়মতো সবাই এক থাকবে, দল ও দেশের স্বার্থে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক সময়ের আলোকে বলেন, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের সব ধরনের কার্যক্রম গতিশীল করা হচ্ছে। এছাড়া সামনে দলের ২২তম জাতীয় কাউন্সিল। এই কাউন্সিলকে সামনে রেখে দেশের জেলা-উপজেলা পর্যায়ের সম্মেলনগুলো শেষ করার প্রক্রিয়া চলছে। দলের জাতীয় কাউন্সিলের আগেই এগুলো শেষ করা হবে। তৃণমূলের ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পর্যায়েও দলকে শক্তিশালী করতে কমিটি গঠন করা হচ্ছে। এছাড়া যেসব এলাকায় দলের মধ্যে দ্বন্দ¦ রয়েছে, সেগুলো নিরসনের উদ্যোগ চলছে। আসলে এটি দ্বন্দ্ব নয়। এটি রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা। আর এই প্রতিযোগিতা থাকলে দল আরও শক্তিশালী হয়। আমাদের সদস্য সংগ্রহের কাজ চলছে, যেখানে যেখানে প্রয়োজন। ইতোমধ্যে দলের জাতীয় কাউন্সিলকে সামনে রেখে গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র সংশোধনের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী আবদুস সবুর সময়ের আলোকে বলেন, গত ৭ মে দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছেন জাতীয় সম্মেলনের আগেই জেলা, উপজেলা, পৌরসভা ইউনিট, ওয়ার্ড ও ইউনিয়নের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলোর সম্মেলন করতে। করোনার পর থেকেই আমাদের দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম গতিশীল করার কাজ চলছিল। তবে এখন এটি আরও দ্রুত চলছে। আমাদের সদস্য সংগ্রহের কাজ চলমান রয়েছে। আওয়ামী লীগই একমাত্র সংগঠন, যেখানে রেগুলার সম্মেলন হয়। এই সম্মেলনের মাধ্যমে যেমন দল শক্তিশালী হবে, সহযোগী সংগঠনগুলোও শক্তিশালী হবে। ইতোমধ্যে ছাত্রলীগ, যুব মহিলা লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, তৃণমূল পর্যায়ে কিছু কিছু দ্বন্দ্ব রয়েছে। সেগুলো নিরসনে ৮ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকরা কাজ করছেন।