রাজনৈতিকভাবে কিছুটা অনুকূল পরিবেশ পাওয়ায় বিএনপি তাদের সাংগঠনিক ভিত মজবুত করছে। যতদূর সম্ভব কাউন্সিলের মাধ্যমে বিভিন্ন সাংগঠনিক ইউনিটে নতুন কমিটি দেওয়া হচ্ছে। সাংগঠনিক নেতারা জানান, কমিটি পুনর্গঠনের কাজ চলছে পুরোদমে। আগামী জুনের মধ্যে সাংগঠনিক সব ইউনিটের কাজ শেষ হবে বলে তাদের প্রত্যাশা। এমনকি চলতি বছর জাতীয় কাউন্সিলও করতে চায় বিএনপি। এসব ঘিরে নেতাদের ঘরে পদপ্রত্যাশীদের কর্মী-সমর্থকদের আনাগোনা বাড়ছে।
এক যুগের বেশি সময় ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি নানা কারণে নিজেদের কাউন্সিলসহ সাংগঠনিক পুনর্গঠনের কাজ করতে পারছে না। এরই মধ্যে দুই বছর কেটে গেছে মহামারি করোনায়। ওই সময় সাংগঠনিক সব কর্মযজ্ঞ বন্ধ থাকে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় ফের শুরু হয় কর্মকাণ্ড।
বিএনপি নেতারা বলছেন, দলের হাইকমান্ডের নির্দেশনা ছিল গত বছরের ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে সব ইউনিট পুনর্গঠন করার। কিন্তু করোনা ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনসহ বিভিন্ন স্থানে প্রশাসক ও শাসক দলের বাধার কারণে সাংগঠনিক কাজ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তবে সম্প্রতি স্বাভাবিকভাবে নির্বিঘ্নেই তারা কাউন্সিল করতে পারছেন।
কেন্দ্র থেকে জানা গেছে, বিএনপির ৮০টি সাংগঠনিক ইউনিটের মধ্যে প্রায় ৬০টি ইউনিটের পুনর্গঠনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। বাকিগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ হবে। প্রায় ৫০টি কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় দেওয়া হচ্ছে আহ্বায়ক কমিটি।
অন্যদিকে সারা দেশে বিএনপির ১০টি বিভাগীয় সাংগঠনিক এলাকা রয়েছে। বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স সময়ের আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগের মতো শুধু জেলা কাউন্সিল করলে আমাদের কাজ এক সপ্তাহের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু আমরা ওয়ার্ড থেকে শুরু করে পর্যায়ক্রমে ইউনিয়ন, পৌর, থানা, উপজেলা ও জেলা কাউন্সিল করছি। কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে নেতা নির্বাচন করছি। তিনি বলেন, আমরা আগামী দুয়েক মাসের মধ্যে সব সাংগঠনিক কাজ সম্পন্ন করার তাগিদ অনুভব করছি। দেখা যাক কোনো বাধা না এলে তা করা সম্ভব হবে।
ময়মনসিংহ বিভাগের দায়িত্বে থাকা এই সাংগঠনিক সম্পাদক জানান, আগামী মাসের মধ্যে বিভাগের তিনটি জেলা কাউন্সিল করা হবে।
সূত্র জানায়, বিএনপি নির্বাচনের আগে নিজেদের সাংগঠনিক অবস্থা সুদৃঢ় করতে চায়। এ লক্ষ্যে তারা তৃণমূল থেকে শুরু করে ঢাকা মহানগর সবখানে নতুন নেতৃত্ব আনতে চায়। কেননা তৃণমূল শক্তিশালী না হলে কোনো আন্দোলনই সফল হয় না। বলিষ্ঠ নেতৃত্বের মাধ্যমে বিএনপি আগামী আন্দোলনের ফসল ঘরে তুলতে চায়। রাজপথে থাকার প্রতিশ্রুতি ও শপথ নিয়ে নেতা বানানো হচ্ছে। দলের সঙ্কটে টিকে থাকতে পারবে এমন নেতৃত্ব বাছাই করা হচ্ছে।
অন্যদিকে দলের কমিটি গঠন আর কাউন্সিল ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা ফিরে এসেছে। দিনরাত কর্মী-সমর্থকদের আনাগোনায় সরগরম থাকছে দলীয় কার্যালয়। পদপ্রত্যাশীরা সিনিয়র নেতাদের বাসায় ভিড় করছেন। তদবির আর লবিং করছেন সাংগঠনিক ও কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে।
সাংগঠনিক সব ইউনিটের কাজ শেষ হওয়ার পর রাজনৈতিক পরিবেশ-পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে দলের জাতীয় কাউন্সিল করার পরিকল্পনা আছে বিএনপির। যদি বড় পরিসরে করা সম্ভব না হয়, সে ক্ষেত্রে সীমিত পরিসরে কাউন্সিল করা হবে। জাতীয় স্থায়ী কমিটির চারটি ও নির্বাহী কমিটির অর্ধশতাধিক পদ বিভিন্ন কারণে শূন্য রয়েছে। এগুলো আগামী নির্বাচনের আগেই পূরণ করতে চায় দলটি। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ তিন বছরের জন্য দলের জাতীয় কাউন্সিল করে বিএনপি। ওই কাউন্সিলে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ভারমুক্ত হন। তবে দলের জাতীয় কাউন্সিল করা সম্ভব না হলে জাতীয় স্থায়ী কমিটি ও নির্বাহী কমিটির শূন্যপদ পূরণ করা হবে।
অন্যদিকে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি তাদের সাংগঠনিক ওয়ার্ডের কমিটি দিচ্ছে একে একে। শুধু মূল দলই নয়, অঙ্গ সংগঠনেরও নতুন কমিটি দেওয়া হচ্ছে। রমজানে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। জাতীয়তাবাদী যুবদল ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নিরব-টুকুর নেতৃত্বাধীন যুবদল পাঁচ বছরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারেনি।
এ নিয়ে সংগঠনটির নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এ কারণে যুবদলের কমিটি ভেঙে দিয়ে শিগগিরই নতুন কমিটি দেওয়া হবে। এ ছাড়া মহিলা দল ও জাসাসও সারা দেশে পুনর্গঠন কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে। এই নিয়ে পদপ্রত্যাশীরাও দৌড়ঝাঁপ করছেন।