ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম ইউনিয়নে যাতায়াতের একমাত্র সড়ক ভারতীয় তিনবিঘা করিডর পরিদর্শন করেছেন। শুক্রবার (০৬ মে) বেলা ১১টা ২০ মিনিটে তিনি সেখানে আসেন।
এ সময় বাংলাদেশিদের চলাচলের এ সড়কটি পৌনে দুই ঘণ্টা বন্ধ করে রাখে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। গেটের দুই দিকে শত শত নারী, পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধ ও দর্শনার্থী আটকা পড়েন।
পাটগ্রাম সীমান্ত সূত্রে জানা যায়, অমিত শাহ শুক্রবার সকালে বিএসএফের বিশেষ হেলিকপ্টারে করে তিনবিঘা হ্যালিপ্যাড মাঠে নামেন। এরপর কোচবিহার জেলার তিনবিঘা করিডোর সড়কপথে পরিদর্শনে আসলে তাকে স্বাগত জানান বিএসএফের ডিজি পঙ্কজ সিং, ভারতের উত্তরবঙ্গের আইজি অজয় কুমার সিং, কোচবিহারের জেলা শাসক পবন কাদিয়ান, পুলিশ সুপার সুমিত কুমার। এ সময় ভারতীয় ৬ ব্যাটালিয়নের বিএসএফ সদস্যরা করিডরের চারদিকে সামিয়ানা দিয়ে ঘিরে রাখেন।
করিডরে বিএসএফের বৈঠকখানায় প্রায় ঘণ্টাব্যাপী রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন অমিত শাহ। বৈঠকে বিএসএফের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও বিজেপির রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তিনবিঘা করিডর এলাকার বর্তমান পরিস্থিতি ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে খোঁজখবর নেন। করিডর এলাকায় তিনি একটি গাছের চারা রোপণ করেন। এ সময় তার সঙ্গে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক, রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, স্থানীয় সাংসদ সুকান্ত মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক চলাকালে করিডর সড়কের দুই দিকের গেট বন্ধ করে দেয় বিএসএফ। এ সময় বাংলাদেশি কোনো সাংবাদিক ও বিজিবিকে সেখানে কাছে ঘেঁষতে দেয়নি বিএসএফ। এতে দহগ্রামে প্রবেশ ও বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডে যাতায়াতের জন্য হাজারো লোকজন ভোগান্তিতে পড়ে।
দহগ্রাম ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ফরিদুল ইসলাম বলেন, ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসায় হাজারও লোকজন সমস্যায় পড়েন। প্রায় দুই ঘণ্টা সাধারণ জনগণের চলাফেরা বন্ধ করে দেয় ভারতীয় কর্তৃপক্ষ।
একই ইউনিয়নের সর্দারপাড়া এলাকার বৃদ্ধ আবুল হোসেন (৭০) বলেন, ভারতের মন্ত্রী আসলে কি বাংলাদেশিদের চলাফেরা করা যাবে না। অটো ভ্যানগাড়িতে বহুক্ষণ ধরে বসে ছিলাম।
দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসায় দহগ্রাম তথা বাংলাদেশিদের চলাচলের সড়কটি বন্ধ করে দেওয়ায় হাজারো লোকজন চরম ভোগান্তিতে পড়ে। সড়ক বন্ধ রাখা হবে আমাদেরকে আগে জানালে আমরা মাইকিং করে নির্দিষ্ট সময়ের পরে আসতে বলতাম। এতে মানুষের সমস্যা হত না।
তিনবিঘা আন্দোলন কমিটির সাবেক সম্পাদক রেজানুর রহমান রেজা বলেন, পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই গেট বন্ধ করে দেওয়া ঠিক হয়নি। ভারতীয়দের চলাচল স্বাভাবিক রেখে শুধু বাংলাদেশিদের চলাচল বন্ধ করা অনুচিত। নিরাপত্তাজনিত হলে উভয় দেশের সর্বসাধারনের চলাচল বন্ধ করা প্রয়োজন ছিল।
পাটগ্রাম থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওমর ফারুক বলেন, গেট বন্ধ রাখার কোনো চিঠি পাইনি। স্থানীয়দের মুখে শুনে আসছিলাম গেট বন্ধ রাখার বিষয়টি। প্রশাসনিকভাবে কোনো ধরনের তথ্য দেওয়া হয়নি।
এ ব্যাপারে রংপুর ৫১ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল এএফএম আজমল হোসেন খান বলেন, ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসবেন এটা আমাদেরকে বিএসএফ জানিয়েছে। দীর্ঘসময় করিডরের গেট বন্ধের বিষয়টি আমরা বিএসএফের কাছে জানতে চাইব। আলোচনা করা হবে।