অতিমারি করোনার কারণে গত দুই ঈদে দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় থেকে বিরত ছিলেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। প্রায় এক বছর পর এবার ঈদের দিনে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। বুধবার রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের বাসভবন যান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির সাত সদস্য। তাদের একজন সেলিমা রহমান সময়ের আলোকে বলেন, ‘ম্যাডাম আমাদের কথা শুনেছেন বেশি। বলেছেন খুবই অল্প। তবে কেমন আছেন জানতে চাইলে বলেন এই ভালো এই খারাপ হয় শরীর। এভাবে বেঁচে আছি এটাই হাজার শুকরিয়া। দোয়া করেন যাতে আল্লাহ এভাবে বাঁচিয়ে রাখেন।’
এক ঘণ্টা সাক্ষাৎ শেষে রাত ৯টায় বের হন তারা। শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে ‘ফিরোজা’র দোতলায় দলীয় প্রধানের সঙ্গে তারা ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। সেলিমা ইসলাম আরও বলেন, ইচ্ছে থাকলেও আমি কোনো খাবার রান্না করে নিতে পারিনি ম্যাডামের জন্য। কারণ চিকিৎসকদের বারণ আছে। ম্যাডাম সব কিছু খান না। অল্প পরিমাণে চিকিৎসকদের পরামর্শে খাওয়া-দাওয়া করেন। আসলে ওই সময় আমরা শুভেচ্ছা বিনিময় ছাড়া তেমন কিছু আলোচনা করিনি। মহাসচিব কিছু কথা বলেছেন জবাবে ম্যাডাম কিছু বলেননি। উনি শুধু শুনেছেন। মহাসচিবই বেশি কথা বলেছেন। আমরা তেমন বলিনি।
এ সময় স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে ঈদের দিন সকালে খালেদার বোন সেলিমা ইসলাম ও ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার তার বাসায় যান। তাদের নিয়ে তিনি দুপুরের খাবার খান।
সর্বশেষ ২০২১ সালের কোরবানির ঈদের দিন খালেদা জিয়ার দেখা পেয়েছিলেন এই নেতারা। গত রোজার ঈদে বিএনপি চেয়ারপারসন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত থাকায় দলের নেতাদের সঙ্গে দেখা হয়নি।
সাক্ষাৎ শেষে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এ সাক্ষাৎ আমরা পূর্বেও করেছি যখন তিনি কারাগারে ছিলেন না, গৃহে অন্তরীণ ছিলেন না। ওই সময় প্রতিবছরই আমরা ঘরের ভেতরে না, ঘরের বাইরে লনে বসে ঈদের দিনে আমরা সাক্ষাৎ করতাম, শুভেচ্ছা বিনিময় করতাম। আমাদের এবারকার এই সাক্ষাৎ নিঃসন্দেহে খুব বেশি আনন্দময় ছিল না। আনন্দময় যতটুকু ছিল এ জন্য যে, প্রায় বছরখানেক পর আমরা তার সঙ্গে দেখা করতে পারলাম, তার কথা শুনতে পারলাম।
খালেদা জিয়া দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা পৌঁছে দিতে সাংবাদিকদের অনুরোধ করেছেন জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশবাসীর কাছে দোয়াও চেয়েছেন এবং তিনি দেশবাসীর জন্য দোয়া করছেন। এ দেশের মানুষ যেন ভালো থাকে, সুস্থ থাকে। গণতন্ত্রকে ফিরে পায়, মানুষ তার অধিকার ফিরে পায়- এই প্রার্থনাও তিনি করেছেন।
খালেদার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, খালেদা জিয়া এখনও সুস্থ নন। ডাক্তাররা আছেন তারা এ বিষয়ে বলতে পারবেন। এটুকু আমি বলতে পারি যে, এখনও তিনি অত্যন্ত অসুস্থ আছেন। এখনও হেঁটে খাবার টেবিলে যেতেও তার খুব কষ্ট হয়। এটাই বাস্তবতা। তা হলেই আপনারা বুঝতে পারবেন তিনি কেমন আছেন।
দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্ত সাপেক্ষে সাজা স্থগিত করে সাময়িকভাবে মুক্তি দেওয়া হয় তাকে। এরপর থেকে গুলশানের ওই বাসায় থাকছেন বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত ৭৬ বয়সি খালেদা জিয়া। যেখানে দলের নেতাকর্মী, সমর্থক কেউই নেত্রীর সাক্ষাৎ পান না।