লাখে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা মুনাফা দেওয়ার লোভ দেখিয়ে শতাধিক গ্রাহকের কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়েছে স্বর্ণালী সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। ০১ ফেব্রুয়ারি মেহেপুরের গাংনী উপজেলার গাড়াবাড়িয়া গ্রামে এমন ঘটনা ঘটেছে।
ভুক্তভোগীরা জানায়, গাংনী উপজেলার পুরাতন মটমুড়া গ্রামের মৃত ইসমাইল হোসেনের ছেলে মাহিরুল ইসলাম ২০১৬ সালে স্বর্ণালী সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতির কার্যক্রম শুরু করে। প্রথম থেকেই কর্মী হিসেবে তারা স্থানীয় কয়েকজনকে নিয়োগ দেয়। তারা বিভিন্ন দোকানে ক্ষুদ্র ঋণ দিয়ে প্রতিদিন সেই ঋণের কিস্তি আদায় করত।
কিন্তু ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক মাহিরুল ইসলাম গোপনে অতিরিক্ত লাভ দেওয়ার কথা বলে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ডিপোজিট করতেন। এটা স্থানীয় কেউ জানতেন না। হঠাৎ করে প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বিষয়টি এলাকার মানুষের কাছে ধরা পড়েছে।
গাড়াবাড়িয়া গ্রামের মাছ ব্যবসায়ী সবুর আলী। অতিরিক্ত লাভ পাওয়ার আশায় স্বর্ণালী সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতিতে ৬ লাখ টাকা ডিপোজিট করেছিলেন। কয়েক মাস লাখে এক হাজার ৬০০ টাকা করে লাভও পেয়েছেন। কিন্তু গত মাসে তাকে আর লাভ দেওয়া হয়নি। ১ ফেব্রুয়ারি থেকে অফিস বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন তিনি।
ওই প্রতিষ্ঠানে টাকা জমা করেছেন রবিউল ইসলাম ৩ লাখ ৭০ হাজার, ফিরোজ হোসেন সাড়ে ৩ লাখ, জারাফত আলী ২ লাখ, জলিল মন্ডল ৪ লাখ ৩০ হাজার, তোজাম্মেল হক ১ লাখ, আব্দুস সাত্তার ৪ লাখ, হানুফা বেগম ৬০ হাজার টাকা। এমন শতাধিক মানুষকে গ্রাহক বানিয়ে তাদের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা সংগ্রহ করেছেন প্রতিষ্ঠান প্রধান মাহিরুল ইসলাম।
এ বিষয়ে স্বর্ণালী সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতির সভাপতি মাহিরুল ইসলামের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে স্বর্ণালী সঞ্চয় ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেডের মাঠকর্মী সাহারুল ইসলাম বলেন, আমি মাঠকর্মী হিসেবে কাজ করছি। সংস্থার পরিচালক মাহিরুল ইসলাম সব লেনদেন করতেন। এখন মাহিরুলকে আমরাও খুঁজে পাচ্ছি না।
গাংনী উপজেলা সমবায় অফিসার মাহাবুবুল হক মন্টু বলেন, স্বর্ণালী সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি মেহেরপুর জেলা কার্যালয় থেকে ২০১৩ সালে নিবন্ধন পেয়েছে। যার নিবন্ধন নম্বর মেহের/ ০৩। গত অডিট রিপোর্টে তাদের সঞ্চয় দেখানো হয়েছে ১০ লাখ ৩৪ হাজার ৬৮০ টাকা, ঋণ দেখানো হয়েছে ১৪ লাখ ৪ হাজার ২৮৬ এবং শেয়ার দেখানো হয়েছে ৩৫ হাজার ৬০০ টাকা। সদস্য সংখ্যা ১১৮ জন।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌসুমী খানম জানান, বিষয়টি শুনেছি। তবে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্য থেকে কেউ লিখিত বা মৌখিকভাবে কোনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মেহেরপুর জেলা সমবায় অফিসার প্রখাষ চন্দ্র বালা বলেন, এসব দেখার দায়িত্ব উপজেলা সমবায় অফিসারের। কোন নিয়মে তারা সঞ্চয় গ্রহণ করেন অডিটের মাধ্যমে এগুলো জানানো হয়। তাছাড়া যারা টাকা রাখেন তারাও খোঁজ-খবর নিয়ে টাকা রাখতে পারতেন। যেহেতু একটি ঘটনা ঘটেছে সে অনুযায়ী উপজেলা সমবায় অফিসারকে প্রতিটি ব্যক্তির কাছে গিয়ে কে কত টাকা রেখেছেন তার নির্দিষ্ট টাকার পরিমাণ জানাবেন। তারপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।