ইরানের পরমাণু প্রকল্পকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যেসব নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন দেশটির ওপর, তার উত্তরসূরি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সেই নিষেধাজ্ঞাসমূহ তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
শিগগিরই এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে বলে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তা আল জাজিরাকে বলেন, ‘ভিয়েনায় ইরানের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আমাদের প্রতিনিধিদের আলেচনা বর্তমানে যে অবস্থায় আছে, তা আরও এগিয়ে নিতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এটি কার্যকর হবে।’
২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া ও চীন— এই ছয় রাষ্ট্রের সঙ্গে পরমাণু প্রকল্প নিয়ন্ত্রণ চুক্তি জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন (জ্যাকোপা) স্বাক্ষর করে ইরান। এই চুক্তি প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা।
জ্যাকোপার শর্ত ছিল, ইরান ধীরে ধীরে পরমাণু প্রকল্প থেকে সরে আসবে এবং এর পরিবর্তে দেশটির বিরুদ্ধে যেসব আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা রয়েছে— সেগুলো পর্যায়ক্রমে প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে।
কিন্তু শুরু থেকেই জ্যাকোপা চুক্তির বিরোধিতা করে আসছিল ইরানের চিরবৈরী হিসেবে পরিচিত দুই দেশ সৌদি আরব ও ইসরায়েল। সেই পথ ধরে ২০১৮ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জ্যাকোপাকে ‘ত্রুটিপূর্ণ, ‘একপেশে’, ‘এর কোনও ভবিষ্যৎ নেই’ ইত্যাদি অভিযোগ তুলে চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে নিয়ে যান; এবং ইরানের ওপর আরোপ করেন একরাশ নতুন নিষেধাজ্ঞা।
যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়ার পর চুক্তির শর্তগুলো মেনে চলার ব্যাপারে ইরানও উদাসীন হয়ে পড়ে। পাশাপাশি, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ভয়াবহ বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে দেশটির অর্থনীতি। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে খাদ্য, ওষুধের মতো নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কেনার ক্ষেত্রেও সমস্যায় পড়ে ইরান।
ফলে, চুক্তিতে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয় এবং কার্যত সুতোয় ঝুলতে থাকে জ্যাকোপা।
২০২০ সালের নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ের পর জো বাইডেন বলেছিলেন, তিনি জ্যাকোপা চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে আনতে আগ্রহী।
সেই প্রতিশ্রুতি তিনি রেখেছেনও; ২০২১ সালের ২০ জানুয়ারি বাইডেন মার্কিন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণের পর অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় ইরানের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক শুরু হয় জ্যাকোপায় স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর প্রতিনিধিদের।
কিন্তু বৈঠকে মতবিরোধ দেখা দেয় দুই পক্ষের মধ্যে। ইরানের প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়- জ্যাকোপা চুক্তিকে কার্যকর করতে হলে প্রথমে ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিতে হবে।
জবাবে যুক্তরাষ্ট্রসহ চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী অন্যান্য দেশগুলোর প্রতিনিধিরা জানিয়ে দেন- ইরান চুক্তির শর্তগুলো মেনে নিতে সম্মত হলেই কেবল নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। দুই পক্ষের এই মতবিরোধে ফের শুরু হয় অচলাবস্থা।
আল জাজিরাকে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমাদের সংলাপ চলছে। খুব শিগগিরই এটি শেষ হবে- এমন কোনো লক্ষণ আপাতত নেই।’
‘কিন্তু অনন্তকাল ধরে আমরা এই সংলাপ চালিয়ে যেতে পারি না। বর্তমানে আলোচনা যে পর্যায়ে আছে, তাকে এগিয়ে নিতেই নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে একটি সিদ্ধান্তে আসার প্রয়োজন ছিল এবং বাইডেন প্রশাসন জ্যাকোপাকে পুনরায় কার্যকর করতে আন্তরিকভাবেই আগ্রহী।’