হঠাৎ করেই রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে অবস্থিত ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতাল’-এ ডায়ালাইসিস সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন রোগীরা। এ ঘটনায় আজ (বুধবার) দুপুর ১২টার দিকে শ্যামলী শিশুমেলা এলাকায় সড়ক অবরোধ করেন হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও স্বজনরা। এতে ওই এলাকায় যানজট সৃষ্টি হয়।
দুপুর দুইটার দিকে অবরোধকারীদের সঙ্গে কথা বলে তাদেরকে মূল সড়ক থেকে সরিয়ে দেয় পুলিশ। অবরোধকারীরা এরপর সড়কের পাশে অবস্থান নেন।
দুপুর আড়াইটা নাগাদ সড়কে থেমে থেমে যানচলাচল করছে বলে জানিয়েছেন শেরেবাংলা নগর থানার ডিউটি অফিসার এসআই নুরুল ইসলাম। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, দুপুর ১২টার কিছুক্ষণ আগে কিডনি হাসপাতালের রোগীদের স্বজনরা শ্যামলী শিশুমেলা ও মিরপুর রোডের সড়কের দুইপাশে অবস্থান নিয়ে অবরোধ করেন।
মোহাম্মদপুর ট্রাফিক জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) কাজী হানিফুল ইসলাম জানান, কিডনি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস সেবা বন্ধের প্রতিবাদে রোগীর স্বজনরা সড়ক বন্ধ করে অবস্থান নিয়েছিলেন। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে এসে তাদেরকে বুঝিয়ে বললে তারা মূল সড়ক ছেড়ে দেন।
ডায়ালাইসিস বন্ধ কেন?
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, হাসপাতালের কাছে কিছু টাকা বকেয়া থাকায় আদায়ের কৌশল হিসেবে সেবা বন্ধ করে দিয়েছে দায়িত্বপ্রাপ্ত ভারতীয় প্রতিষ্ঠান স্যানডোর।
বুধবার (২ ফেব্রুয়ারি) দুপুর পৌনে দুইটায় হাসপাতালটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, স্যানডোর শুধু আমাদের হাসপাতালের রোগীদেরই ডায়ালাইসিস করে না, সব হাসপাতালেই তারা ডায়ালাইসিস করে থাকে। আমাদের কাছে তাদের কিছু বিল বকেয়া আছে, সেটিও প্রসেসিংয়ের মধ্যে আছে। এখন তারা রোগীদের জিম্মি করে ডায়ালাইসিস সেন্টার তালা দিয়ে বন্ধ করে চলে গেছে। যে কারণে রোগীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে।
তিনি বলেন, এটিতো আমাদের হাসপাতালের কোনো সমস্যা নয়, স্যানডোর তালা মেরে চলে গেছে, এটা তাদের দায়। তারা বলছে টাকা না পেলে ডায়ালাইসিস সেন্টার খুলবে না। আমরা তাদের বলেছি যে, টাকাটা প্রসেসিংয়ে আছে। সরকারি টাকা পেতে তো একটু দেরি হতেই পারে। এ জন্য সেবা বন্ধ করে দেওয়াটা অন্যায়।
রোগীদের সেবায় এখন কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে- জানতে চাইলে হাসপাতাল পরিচালক বলেন, দুই-একজন জরুরি রোগীকে আমরা নিজস্ব প্রক্রিয়ায় ডায়ালাইসিস সেবা দিচ্ছি। পাশাপাশি কিছু রোগীকে অন্যান্য হাসপাতালে শিফট করে দেওয়া যায় কি না সেটি আমরা দেখছি। কিন্তু এভাবে সব রোগীদের দায়িত্ব নেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।
এ বিষয়ে স্যানডোর ডায়ালাইসিস সার্ভিসেস বিডি প্রাইভেট লিমিটেডের প্রশাসন ও বিপণন বিভাগের ব্যবস্থাপক মঞ্জুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার মুঠোফোন নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়।
জানা গেছে, ২০১৬ সালে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাথে ১০ বছরের চুক্তিতে কিডনি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস সেবা দেওয়া শুরু করে স্যানডোর। প্রতি ডায়ালাইসিসে মাত্র ৪৮৩ টাকা দিতে হয় রোগীদের। বাকি টাকা দেয় বাংলাদেশ সরকার। এই সুবিধায় বছরে ২৯ হাজার ৬০৯টি সেশনের (৪ ঘণ্টায় এক সেশন ধরে) অনুমোদন রয়েছে সরকারের। এরচেয়ে বেশি হলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হয়।