দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সব দল-জোট রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও এ নিয়ে আলোচনা করছে। নানা দৃষ্টিকোণ থেকে পর্যবেক্ষণ করে হিসাব- নিকাশ করছে। তবে তারা এবার কারও সঙ্গে জোটবদ্ধ না হওয়ার কথা বলছে। কিন্তু এ সিদ্ধান্ত কতটুকু বলবৎ থাকে তা নির্বাচনের আগেই বোঝা যাবে। কেননা পার্টির চেয়ারম্যানের ভাষ্য নির্বাচনকালীন পরিস্থিতি বিবেচনায় সময়মতো সিদ্ধান্ত নেবে জাতীয় পার্টি (জাপা)। রাজনীতির মাঠে আওয়ামী লীগের বি-টিম হিসেবে পরিচিত জাতীয় পার্টি গেল নির্বাচনের আগে থেকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটে আছে। যদিও দলটির দাবি, তারা আর মহাজোটে নেই। স্বকীয় সত্তা নিয়েই রাজনীতি করছে। এবারের নির্বাচনে তারা কোনো জোটে না গিয়ে নিজেদের শক্তিমত্তা পরীক্ষা করতে চায়। সে লক্ষ্যে দলটি সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডও শুরু করেছে। রমজানেও তারা বিভিন্ন সাংগঠনিক এলাকা সফরসহ প্রতিনিধি সম্মেলন করেছে। আগামী জুনের মধ্যেই সব সম্মেলন শেষ করতে চায় জাপা।
দলটির নেতারা বলছেন, টানা দুবার বিরোধী দলের আসনে থাকা জাতীয় পার্টি আগামী জাতীয় সংসদেও প্রধান বিরোধী দলের অবস্থান ধরে রাখতে চায়। এ লক্ষ্যেই এগোচ্ছে দল। তবে এবার চ্যালেঞ্জ বেশি। সহজে বিরোধী দলের তকমা ধরে রাখা যাবে না। কেননা বিরোধী পক্ষ বিএনপি এবার শক্তভাবে মাঠে নামছে। নির্বাচন ও আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে সমানতালে। তাদের সঙ্গে নির্বাচনের মাঠে লড়াই করেই শক্তিশালী বিরোধী দল হতে হবে। এ ছাড়া বিকল্প কোনো উপায় দেখছেন না জাপার নেতারা। তাই নিজেদের অবস্থান মজবুত করতে চান। তবে দলে নতুন করে সঙ্কটও তৈরি হয়েছে। একে তো এরশাদ-পত্নী ও সংসদে বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদপন্থি একটি অংশ সক্রিয় রয়েছে, তার ওপর এরই মধ্যে দলের ছোট একটি অংশ তৎপর হয়েছে এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশা সিদ্দিককে ঘিরে। বিদিশার নতুন পরিচয় জাতীয় পার্টির পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। সেই সঙ্গে জিএম কাদেরকে জাতীয় পার্টির অবৈধ চেয়ারম্যান দাবি করে নিজেকে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন বিদিশা। তিনি জানান, ভবিষ্যতে তার নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি পুনর্গঠিত হবে। তার নেতৃত্বেও নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে।
সূত্র বলছে, জাতীয় নির্বাচনের আগে জাতীয় পার্টি মাথাব্যথার বড় কারণ হতে পারেন বিদিশা। কেননা ইতোমধ্যে তিনি নানা তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি সরকারের পাশে থাকতে চান। সরকারের কাছে থাকার চেষ্টা করছেন। অন্যদিকে জাতীয় পার্টির দুয়েকজন বাদে প্রায় সব এমপিই সরকারের আস্থাভাজন হওয়ার চেষ্টা করছেন। তারা মহাজোটের সঙ্গে থেকেই ভোট করতে চান। এর পেছনে তাদের যুক্তি জাতীয় পার্টি বরাবরই ক্ষমতাসীন দলের নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করে। পরিস্থিতি যদি এবারও আওয়ামী লীগের অনুকূলে থাকে তাহলে তারা বর্তমান শাসকদলের সঙ্গেই থাকতে চান। এর ব্যত্যয় হলে দলীয় ও ব্যক্তিগতভাবে তাদের ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।
টানা তিন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট এবং সমঝোতা করেই নির্বাচন করেছে জাতীয় পার্টি। সবশেষ ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরে একাদশ সংসদ নির্বাচনে জোট করে নির্বাচন করেছিল দলটি। ভোটে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের অন্যতম অংশীদার জাতীয় পার্টি আসন পায় ২২টি। ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ৩৫ বছরে প্রায় চার বছর জাতীয় পার্টির ক্ষমতায় থাকার ইতিহাস রয়েছে। পরবর্তী ৩১ বছর ক্ষমতায় যেতে না পারলেও ক্ষমতার নিয়ামক শক্তি হিসেবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে জাতীয় পার্টি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে।
আগামী নির্বাচনে কোন দিকে যাবে জাতীয় পার্টি? এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের জানান, তারা দলকে শক্তিশালী করছেন। দলীয় কাউন্সিল করতেও প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সম্ভাব্য প্রার্থীরা নির্বাচনি এলাকায় কাজ করছেন। আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনেই নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে জাতীয় পার্টি। তবে অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, যখন বিএনপি ক্ষমতায় ছিল, তখনও তারা জাতীয় পার্টিকে হাতের মুঠোয় নিতে চেয়েছিল। বিএনপি জিততে পারবে না, আমরা যদি সঙ্গে না থাকি। এজন্যই এবার নির্বাচনকালীন পরিস্থিতি এবং সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা বিবেচনায় রেখেই নির্বাচনে জোট গঠনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে জাতীয় পার্টি।
দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু সময়ের আলোকে বলেন, ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার রোডম্যাপ তৈরি করছে জাপা। যদিও এখনই এর পুরো সক্ষমতা হয়েছে- তা বলব না। তবে গেল দুই বছর ধরে এ লক্ষ্যেই কাজ চলছে।
তিনি এ-ও বলেন, নির্বাচনের ঠিক আগে প্রশ্ন আসে আমরা বিএনপিকে সমর্থন দেব নাকি আওয়ামী লীগকে। সেই জায়গায় আমাদের কিছু লোক বিএনপিকে দিতে চায় আবার কিছু লোক আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিতে চায়। এ নিয়েও অনেকের মধ্যে বিভ্রান্তি আছে। তবে এবার জাপা কাউকে সমর্থন না দিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায়।