জ্বালানি তেলের উৎপাদন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সৌদি আরব। চলতি বছর থেকে আগামী ৫ বছর, অর্থাৎ ২০২৭ সাল পর্যন্ত প্রতিদিন ১৩ মিলিয়ন ব্যারেল অপরিশোধিত পেট্রোলিয়াম উত্তোলন করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।
তেলের পাশাপাশি বাড়ানো হবে গ্যাসের উৎপাদনও । আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে বর্তমানের চেয়ে অন্তত ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি করা হবে উত্তোলিত গ্যাসের পরিমাণ।
সৌদির রাষ্ট্রায়ত্ত তেল-গ্যাস উত্তোলন কোম্পানি আরামকোর কর্মকর্তারা বিবিসিকে জানিয়েছেন, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন ১০ মিলিয়ন অপরিশোধিত পেট্রোলিয়াম উৎপাদন করেছে আরামকো; কিন্তু আগামী এপ্রিল থেকে ২০২৭ সাল পর্যন্ত প্রতিদিন উৎপাদিত তেলের পরিমাণ আরও ৩ মিলিয়ন ব্যারেল বাড়ানো হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির সরকার।
উৎপাদন বাড়াতে এই খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। চলতি বছরই আরামকোতে অতিরিক্ত ৪৫ থেকে ৫০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হবে এবং সামনের বছরগুলোতে বিনিয়োগের পরিমাণ আরও বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন আরামকোর কর্মকর্তারা।
এ প্রসঙ্গে কর্মকর্তারা বিবিসিকে জানিয়েছেন, আগামী দশকের মধ্যে জ্বালানির উৎপাদন ও কার্বন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ প্রযুক্তির ব্যবহার — দুই ক্ষেত্রেই প্রাধান্য বিস্তার করতে চায় সৌদি আরব। এ খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি সেই পরিকল্পনারই অংশ।
তবে সৌদি সরকারের তেল-গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানোর নেওয়ার ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় কাজ করেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে বিবিসির প্রতিবেদেন। প্রথমত, করোনা মহামারির কারণে ২০২০ সালে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চলেছে খুব ধীর গতিতে; কিন্তু ওই বছরের শেষ পর্যায় থেকে ফের গতি পেতে শুরু করে বিশ্ব অর্থনীতি, ফলে জ্বালানি তেলের চাহিদাও বাড়তে থাকে। আন্তর্জাতিক জ্বালানি বাজারের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে বিশ্বজুড়ে জ্বালানি তেলের চাহিদা বেড়েছে ৫০ শতাংশ।।
আরামকোর গত ২ বছরের ব্যবসার খতিয়ান লক্ষ্য করলে ব্যাপারটি বোঝা যায়। কোম্পানিটির নথি-পত্র বলছে, ২০২০ সালে আরামকোর নিট মুনাফা ছিল ৪৯ বিলিয়ন ডলার, সেখানে ২০২১ সালে তা বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি— ১১০ ডলার।
দ্বিতীয়ত, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক তেলের বাজারে সরবরাহ বিষয়ক অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে, যার ফলে হু হু করে বাড়ছে তেলের দাম। বর্তমানে বৈশ্বিক বাজারে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত প্রেট্রোলিয়াম যে দামে বিক্রি হচ্ছে, তা গত ১৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, ২০২২ সালের পর থেকে তেলের দাম আরও বাড়বে।
এবং তৃতীয় যে ব্যাপারটি কাজ করেছে, তা হলো গত সপ্তাহে সৌদি আরবে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সফর। ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়ার জ্বালানি তেল ও গ্যাসের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির পর গত সপ্তাহে রিয়াদে গিয়ে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন জনসন এবং আহ্বান জানিয়েছিলেন জ্বালানির উৎপাদন বাড়ানোর।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর সফরের এক সপ্তাহের মধ্যেই তেল ও গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিল সৌদির সরকার।
সূত্র: বিবিসি