ঢাকা: সাভারের ধামরাইয়ের মাদবপুর ইউনিয়নের আমরাইল গ্রামের শাহাদত নামে এক যুবকের সঙ্গে পারিবারিকভাবে এলাকার এক তরুণীর বিয়ে ঠিক হয়। সেই তরুণীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিল একই গ্রামের জাহিদুল ইসলাম ওরফে জাহিদের (২২)।
এদিকে নিজের প্রেমিকার শাহাদাতের সঙ্গে বিবাহ মেনে নিতে না পেরে সহযোগীদের নিয়ে তাকে হত্যা করেন জাহিদ। পরে গাছে ঝুলিয়ে রেখে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন।
মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে ঢাকার ধামরাই ও আশুলিয়া থানার আমরাইল এলাকা থেকে এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-৪।
গ্রেফতারা হলেন- হত্যার পরিকল্পনাকারী মো. জাহিদুল ইসলাম ওরেফ জাহিদ (২২), আবু তাহের (২৪) ও সবুজ হোসেন (২৮)।
বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর কাওরানবাজার নিজেদের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, ২০২১ সালের ১ আগস্ট ঢাকার ধামরাইয়ের আমরাইল গ্রামের শাহাদাত কালিয়াকৈরে নিজ কর্মস্থলে যাওয়ার পর গত ৪ আগস্ট থেকে বাড়ির সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেননি। তার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনও বন্ধ থাকায় গত ৮ আগস্ট কালিয়াকৈর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে তার পরিবার।
তিনি আরও জানান, ওই বছরের ১২ আগস্ট ধামরাইয়ের আমরাইল গ্রামের একটি কাঠ বাগান থেকে নিখোঁজ শাহাদাতের অর্ধগলিত ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ধামরাই থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়। এছাড়া গত ১২ আগস্ট ময়না তদন্ত প্রতিবেদনে জানা যায় ঘটনাটি আত্মহত্যা নয়, হত্যা। ভিকটিম শাহাদাতের মা ২৩ সেপ্টেম্বর বাদী হয়ে ধামরাই থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে ধামরাই থানা পুলিশ গত ৩০ সেপ্টেম্বর নিহত শাহাদাতের বন্ধু জাহিদকে গ্রেফতার করে। জাহিদ ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি না দেওয়ায় রিমান্ড শেষে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব কর্মকর্তা কমান্ডার খন্দকার আল মঈন
আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে মঈন বলেন, ভিকটিম শাহাদাত ধামরাইয়ের যাদবপুর ইউনিয়নের আমরাইল গ্রামের কোহিনুর ইসলামের ছেলে। কালিয়াকৈর উপজেলার বারইপাড়ায় একটি প্রতিষ্ঠিত কারখানার কর্মচারী ছিলেন। গত ১৪ আগস্ট আসামি জাহিদের প্রেমিকার সঙ্গে শাহাদাতের বিবাহের দিন ঠিক করা ছিল। নিজের প্রেমিকার অন্য জায়গায় বিবাহ মেনে নিতে না পারার জের ধরে সহযোগীদের নিয়ে পরিকল্পিত ভাবে শাহাদাতকে হত্যা করেন জাহিদ।
তিনি আরও বলেন, ভিকটিম ও আসামিরা সবাই ধামরাই থানার আমরাইল গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা। তাদের মাঝে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। এ সর্ম্পকের কারণে তাদের মধ্যে প্রায়ই দেখা সাক্ষাৎ হতো। তারা একত্রিত হয়ে ভাড়া বাসা ও নিজ এলাকায় জুয়ার আসর বসাতো। ৩ আগস্ট শাহাদাতকে চন্দ্রা থেকে গাজীপুরের কাশিমপুরের কাছে মাটির মসজিদ এলাকায় ডেকে আনা হয়। সেখানে আসার পর আসামিরা তাকে ফুসলিয়ে জুয়া খেলতে ধামরাইয়ের আমরাইল এলাকায় নিয়ে যায়। সেখানে তাকে ফুসলিয়ে ২ দিন রাখা হয়। পরে ৬ আগস্ট সন্ধ্যার সময় সবাই একত্রে শাহাদাতকে নিয়ে ধামরাইয়ের আমরাইল এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় আসেন। সেখান থেকে আশুলিয়ার একটি নির্জন এলাকায় নিয়ে হাত-পা বেঁধে ফেলেন। প্রথমে জাহিদ ভুক্তভোগীকে চর-থাপ্পড় এবং গোপনাঙ্গে ৪-৫টি লাথি মারেন। এসময় আসামিরা সঙ্গে থাকা লাঠি দিয়ে ভিকটিমের মাথায় আঘাত করে তার মৃত্যু নিশ্চিত করেন।
র্যাব মুখপাত্র বলেন, আসামিরা শাহাদাতের মরদেহ ভ্যানচালক সবুজের ভ্যানে করে ধামরাই থানার আমরাইল পুকুরিয়া সাকিনস্থ মনুমিয়ার কাঠবাগানে নিয়ে যায়। সেখানে গাছের একটি ডালে কাঁচা পাট দিয়ে ফাঁস দিয়ে ঝুলিয়ে রাখে। যাতে করে এটি একটি স্বাভাবিক আত্মহত্যা মনে করা হয়।