বর্তমানে বাংলাদেশ খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করলেও নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্যের সংকট রয়েছে। জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় নিরাপদ খাদ্যের যোগান নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি বলে উল্লেখ করেছেন আলোচকরা।
বুধবার (২ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস উপলক্ষে ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট কর্তৃক আয়োজিত “নিরাপদ খাদ্য যোগান : চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা” শীর্ষক অনলাইন আলোচনায় বক্তারা এ বিষয় তুলে ধরেন। ২০২২ সালে দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে- সুস্বাস্থ্যের মূলনীতি, নিরাপদ খাদ্য ও স্বাস্থ্যবিধি।
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের প্রজেক্ট ম্যানেজার নাঈমা আকতার বলেন, নিরাপদ খাদ্যের সঙ্গে স্বাস্থ্যের বিষয়টি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সুস্বাস্থ্যের জন্য যেমন আমিষ, শর্করা, ভিটামিন, দুগ্ধজাতীয় খাদ্য গ্রহণ করা প্রয়োজন তেমনি অতিরিক্ত চিনি, লবণযুক্ত খাবার, অধিক প্রক্রিয়াজাত ও প্যাকেটজাত খাবার, জাঙ্ক ফুড পরিহার করা প্রয়োজন। সামাজিক মর্যাদার ভ্রান্ত ধারণা, অস্বাস্থ্যকর খাবারের বিজ্ঞাপন ও সহজলভ্যতা, নিরাপদ খাদ্যের অধিক মূল্য প্রভৃতি নিরাপদ খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ। এ সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় হেলথ প্রমোশন ফাউন্ডেশন নামে স্বতন্ত্র একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা প্রয়োজন।
অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের ডেপুটি ম্যানেজার অমিত রঞ্জন দে বলেন, নিরাপদ খাদ্য কেবল ধনীদের অধিকার নয়। আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় ধনীরা দামী রেস্তোরায় প্রচুর খাদ্য অপচয় করছে, অপরপক্ষে দরিদ্র মানুষেরা পর্যাপ্ত খাদ্যের অভাবে পুষ্টি ও স্বাস্থ্যহীনতায় ভুগছে। খাদ্যের অধিকার নিশ্চিতের ক্ষেত্রে উৎপাদন ব্যবস্থা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ।
উবিনীগের নির্বাহী পরিচালক ফরিদা আখতার বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক গবেষণায় দেখা গেছে, অনিরাপদ খাদ্য গ্রহণের ফলে প্রায় ২০০টির মতো রোগ আমাদের শরীরে বাসা বাঁধে। প্রতি বছর মারা যায় প্রায় ৪ লাখ ২০ হাজার মানুষ, যার ৩০ শতাংশই শিশু। খাবারকে আকর্ষণীয় করতে গিয়ে কৃত্রিম রং, সুগন্ধি ব্যবহার করা হচ্ছে, যা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। দেশীয় বীজ ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণের মাধ্যমে বৈচিত্র্যপূর্ণ খাদ্য উৎপাদনের মাধ্যমে আমরা নিজেদের খাদ্য চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবো।
বিসেফ ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম সিদ্দিক রানা বলেন, পুঁজিবাদ ও শিল্পায়নের ফলে কৃষকরা জমিতে অধিকার হারাচ্ছেন। কিন্তু কৃষকদের পর্যাপ্ত প্রণোদনার বিষয়ে আমরা উদাসীন। সঠিক সময়ে বিকল্প জৈব সার ও জৈব বালাইনাশকের ব্যবস্থা করতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। আমাদের দেশে খাদ্য উৎপাদন, মজুত, পরিবহন, বাজারজাতকরণের প্রতিটি ধাপে অনেকগুলো অংশীদার রয়েছে। তাদের সবার সমন্বয়ে জনগণের নিরাপদ খাদ্য অধিকার নিশ্চিতের ক্ষেত্রে অত্যন্ত জরুরি।