রংপুরে পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ঘেঁষে দুটি পাবলিক টয়লেট স্থাপন করেছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর। এতে মল-মূত্র থেকে ছড়িয়ে পড়া দুর্গন্ধে পরিবেশ দূষণ ঘটছে। সঙ্গে শহীদ মিনারের পবিত্রতা রক্ষা নিয়েও উঠেছে নানা প্রশ্ন। সচেতন মহলসহ সংস্কৃতিকর্মীরা পাবলিক টয়লেট সরিয়ে নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি দাবি জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি হলের পাশে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ঘেঁষে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর থেকে বসানো নারী-পুরুষদের জন্য আলাদা দুটি টয়লেট দেখা গেছে। টাউন হল চত্বরে ঘুরতে আসা বিভিন্ন বয়সী মানুষ সেই টয়লেট ব্যবহার করে আসছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রংপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের চার গজের মধ্যে দুটি টয়লেট রয়েছে। সেখানে কাগজে লেখা রয়েছে সৌজন্যে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর রংপুর। প্রায় এক মাস ধরে এই টয়লেট দুটি সেখানে রয়েছে। যদিও এর পাশেই পাবলিক লাইব্রেরিতে টয়লেট রয়েছে। এ ছাড়াও জেলা শিল্পকলা একাডেমির ভেতরে উন্নতমানের বেশ কিছু টয়লেট দেখা গেছে। শহীদ স্মৃতিবেদির কোলঘেঁষে এভাবে টয়লেট স্থাপন করায় অনেকই ক্ষুদ্ধ।
স্থানীয় সংস্কৃতিকর্মীদের অভিযোগ, শহীদ মিনার সব সময়ই অযত্ন-অবহেলায় পড়ে থাকে। সন্ধ্যা হলেই শহীদ বেদির ওপর জুতা পায়ে বসে অনেকই আড্ডা দেয়। জাতীয় দিবসগুলোর সময়ে একটু ধোয়া-মোছা করা হলেও বাকি সময়ে কেউই এই শহীদ বেদির পবিত্রতা রক্ষা নিয়ে ভাবে না। এখন নতুন করে শহীদ মিনারের পাশেই দুটি পাবলিক টয়লেট করে শহীদদের প্রতি অসম্মান করা হয়েছে।
রঙ্গপুর নাট্যধারার প্রচার সম্পাদক সাইফুল ইসলাম মুকুল বলেন, এটা খুবই দুঃখজনক বিষয়। এত বড় একটি চত্বরের ভেতরে ঠিক শহীদ মিনারের গা ঘেঁষে এভাবে টয়লেট স্থাপন করা কোনো ভাবেই ঠিক হয়নি। টয়লেট স্থাপনের আগে বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত ছিল। শুধু পরিবেশ দূষণই হচ্ছে না, আমরাও কষ্ট পাচ্ছি। যাদের রক্তের বিনিময়ে আমরা ভাষা এবং দেশ পেয়েছি, তাদের প্রতি এটা অসম্মান।
সংস্কৃতিকর্মী কবির চৌধুরী জয় বলেন, এখানে টয়লেট স্থাপন করাটা কোনো ভাবেই যৌক্তিক হয়নি। প্রয়োজনে অন্য কোথাও টয়লেট দুটি বসানো যেত। কিন্তু কেন এটা করা হয়েছে, আমাদের বোধগম্য নয়। পাবলিক লাইব্রেরি, শিল্পকলা একাডেমি, টাউন হলের বেতরে টয়লেট থাকার পরও শহীদ মিনারের খুব কাছে এভাবে টয়লেট স্থাপন করে শহীদদের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করা হয়েছে। এটা ঠিক হয়নি, দ্রুত টয়লেট দুটি সরিয়ে ফেলা উচিত।
রংপুর পাবলিক লাইব্রেরির কেয়ারটেকার আজিজুল ইসলাম সানু বলেন, কিছু আগে মেলা চলাকালীন শহীদ মিনারের পাশে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর থেকে এই দুটি টয়লেট স্থাপন করা হয়। কথা ছিল মেলা শেষ হলে টয়লেট সরিয়ে ফেলা হবে। কিন্তু এখন শুনতেছি, আবার নাকি মেলা হবে, এ কারণে রাখা হয়েছে। তবে শহীদ মিনারের পাশে টয়লেট স্থাপন করা ঠিক হয়নি। এটা অন্য কোথাও হলে মেনে নেওয়া যেত।
বিভিন্নজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি মাঠের মধ্যে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। বছরের তিনবার জাতীয় দিবসে এই শহীদ মিনারে স্থানীয় প্রশাসন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন সংগঠন ও সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসন এই চত্তরের দেখাভালের দায়িত্বে থাকলেও বেশির ভাগ সময়ে অযন্ত-অবহেলা ও অরক্ষিত অবস্থায় থাকে শহীদ মিনারটি।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) রংপুর মহানগর সভাপতি অধ্যক্ষ ফখরুল আনাম বেঞ্জু ঢাকা পোস্টকে বলেন, রংপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নামে মাত্র শহীদ মিনার। শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য তৈরি করা এই শহীদ মিনারের পবিত্রতা রক্ষা করা হয় না। বছরে দুএকবার রঙ করা হলেও বাকি সময় অযন্ত অবহেলায় থাকে। সম্প্রতি শহীদ মিনারের পাশে যে দুটি টয়লেট বসানো হয়েছে, তা দুঃখজনক। শহীদদের আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধার ঘাটতি থাকলেই এ ধরনের কাজ সম্ভব।
এ ব্যাপারে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী পঙ্কজ কুমার সাহা ঢাকা পোস্টকে বলেন, টয়লেট দুটি জেলা প্রশাসনের অনুরোধে অস্থায়ী হিসেবে বসানো হয়েছে। মূলত পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে সাম্প্রতিক সময়ে হয়ে যাওয়া মেলা চলাকালীন মানুষের সুবিধার্থে টয়লেট স্থাপন করা হয়েছিল। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে টয়লেট দুটি সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করব।