ব্যথাটা পাষানে কপাল ঠোঁকাইয়া ঢুকরাইয়া কাঁদিয়া উঠিল না। রাত্রিটার রজনীর যামিনী গতাইবার বরাত ঘটিয়াছে কাপ্তান বাজারের পুর্ণিমা বোডিংয়ে। আজ পঁচাত্তরের ১৫ই আগষ্ট।
পাকিস্তানে “লঁড়কে লেঁঙ্গের” স্বাধীনতা দিবস। মুক্ত বাঙলায় সমাবর্তন ভার্সিটির।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি পাওয়া গর্বিত ছাত্ররা মর্য্যদার সম্মান লইয়া গুরু গৃহ হইতে প্রত্যাবর্তন করিবে মায়ের আঁচলে ঢাকা পিতৃ গৃহে। ফিরিতেছিলাম সকলের তাঁজা মনটায় আগাইবার পথ ধরিয়া ঢাকা কারার ডি.আই.জি. আর জেইল সুপারের বাঙলো বাড়ির রাস্তা দিয়া। এক বৃদ্ধকালের বয়সে আক্রান্ত পুলিশের সদস্য হাতে একটা ব্রিটিশ মেডের স্টানগান লইয়া দ্রæত চলায় আমারে অতিক্রম করিয়া আসিতেছিল। কাছে আসিলে কহিল কই যাও ? তাড়াতাড়ি হাঁইটা বাড়িত্ যাও গা। বঙ্গবন্ধু নাই। ইন্ডিয়ার সৈন্যরা আসিতে পারে।”
পারে বটে সত্য, আসিল না। খবরের কাগজ তাঁর সংবাদ ছাপাইয়া সোফাসেটে বসা আনন্দ হাসির ছবি দিল লুটিপুটি হাসিতে খন্দকার মোস্তাক আর সমর সেনের। ভারত
নিষেধাজ্ঞা জারি করিল ভারতে অবস্থানরতঃ কোন বিদেশী সাংবাদিক বাঙলাদেশের খবর ভারত হইতে বিদেশে পাঠাইতে পারিবে না।
অপারেশন মজিব কিলিংয়ে আর্টিলারীর দুইশত ক্সসন্যর সম্মুখে রক্ষী বাহিনী দুর্বল।আরেক দুইশয় কর্মিটোলা স্তদ্ধ। অথচ, সে․ভাগ্যের দুঃখ বার্তা আষট্টি হাজার গ্রাম বাঙলার গাঁও হইতে একজন করিয়া আসিলেও আষট্টি হাজার মানুষের অভ্যুত্থান ঘটিত নগরী ঢাকায় গণ-মিছিলের। কেহই আগায় নাই প্রতিবাদের মিছিল লইয়া এই মাটিতে মানুষের।প্রজাতন্ত্রের
সৈনিক তো আর অই দুই ভাগের চারশই ছিল না। পুলিশ ছিল প্রজাশাসনের রায়ট পুলিশ।রক্ষা বাহিনী ছিল কাল আদমীর। উড়া জাহাজের বিমান বাহিনী, ন্যাভী নামের নৌ․’ সৈনিকও
প্রজাতন্ত্রের ছিল। প্রস্তুতির গভর্নর সদস্য ছিল বাক্শালের। দোলন, কিবরীয়া, মাহবুব ছিল। কেউ আগায় নাই অই আপারেশন মজিব হত্যায় এই মাটিতে কোন শক্তির।
আর্টিলারীর চারশত পাষন্ড হাঁয়না নিষ্ঠুরতায় দুই দিকে পথ নিল। দুইশত কুর্মিটোলায় ট্যাঙ্ক শক্তির ব্যারিকেটে। অন্য দুইশত অপারেশন কিলিং মজিবে সমাবর্তনের ছুঁতায় আনা
ট্যাঙ্ক লইয়া আর্টিলারীর। ট্যাঙ্ক কি অই চারশত ক্সসনিকে যাহা ছিল প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রটায়ও তাহাই আছিল ?
জবাবটা ইহার উত্তর কথাতেই বা কী কথা আসে ?
আক্রমনটা সেরেনিয়াবাদের বাড়িতে। মনিরে ফোন করে সেরেনিয়াবাদ। মনি ফোন ধরিলে– ফোনের ড্যাড্ লাইন অপারেশন কিলিংয়ে।
তারপর, মনির বাড়ির রক্ত ঝরাইয়া ফিরতী ট্যাঙ্কের নল ধানমন্ডির বত্রিশে। সমাবর্তন অই বছরে আর হইতে পারিল না।
বলিবে“ বাঘা ভাই, বঙ্গবীর মুক্তি যোদ্ধার ?”
বঙ্গবীর বাঘা ভাই সেই সময়ে রাজনীতির এক হঠক। কতিপয় কিছু হঠকারী লইয়া সে প্রতিবাদে অস্ত্র যুদ্ধে নামিল। পরিতীতে, ফিরিবার পথ পিছনে পিঁছাইল বঙ্গবন্ধু কন্যার।
রাজনৈতিক দল গুলি নিশীর মোরগ ডাকায় নিঃশ্চুপ। জাসদ কহিতে পারিলেও তাঁহার কহিবার কন্ঠ কথা কহিল না। বঙ্গ ভবনের পথ বন্ধ। মজিব হত্যার পরেই বন্দিহত্যায় জাতীয় নেতা নিধন। খালেদ মোশারফ আর খন্দকার মোস্তাকের মিলন চিন্তার সমজোতায় খুনীদের ব্যাঙ্কক যাত্রা রাত্রির উড়াজাহাজে। জাসদ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা নিতে দাদার সম্মতির অনীহা। আফ্রো-এশিয়ার অন্যতম রাজনৈতিক চিন্তাবিদের “সৈনিক সংস্থার” প্রভাবে বন্দি
জিয়া মুক্ত শিঙ্খলে শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে বক্তৃতার মঞ্চে। এ্যালিফেন রোর্ডে ভাইয়ের বাসায় ইনুর সামনে কপালে হাত কর্নেল তাহেরের। ভাগ্যর দুর্ভোগে নিয়তীর বিধিলিপি। ঘাতকের বুলেট বুকটারে বিদীর্ন করিয়া রক্ত ঝরাইয়া দিলে–সিঁড়ির উপর এলাইয়া পড়িল বঙ্গবন্ধু। বলিল যেন“বন্দুকের গুলীতে
মজিবকে শেষ করা যায় না। আমার এই রক্ত বাঁচিয়ে রাখিস্”
মারিতে পারে নাই মজিবের রক্ত ঘাতকেরা। মুঁছিতে পারে নাই সিঁড়ির সেই রক্ত চিহ্ন।
ম্যান্ডেলা দেখিল“আফ্রিকার বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনে মিছিলের মস্তক ভাগটায় প্যাট্রিস্ লুমুন্বার সাথে বঙ্গবন্ধুরে দেখা যায়।” মনিপুরের প্রতিটা গণমিছিলেই না’কি বাঙলার মজিব ¯শ্লোগানে আগায় চে’গুয়েবার কাঁধে হাত রাখিয়া। সময়ের আন্দোলনে বাঙলার মাটিও তাঁর বঙ্গবন্ধুরে খুঁজিবে।
“চলিবে”