সিএনএমঃ
অনলাইন জুয়া খেলায় হুন্ডির মাধ্যমে হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচারের সাথে জড়িত ৯ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে গাজীপুরে মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি)। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বুধবার দিবাগত রাতে মোট্রা সদর থানায় অভিযান পরিচালানা করে তাদের গ্রেফতার করা হয়। বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০ টায় কমিশনার মোল্লা নজরুল ইসলাম তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রেসব্রিফিংয়ে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গ্রেফতারকৃতরা হলো শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলার বড়কান্দি (মৃধাবাড়ী) গ্রামের মৃত হাবিবুল্লাহ মৃধার ছেলে নাসির মৃধা (৩০), ময়মনসিংহের ফুলবাডীয়া উপজেলার গৌরীপুর (মধ্যপাড়া) গ্রামের ফরহাদ আলীর ছেলে মারুফ হাসান (২৪), ভালুকজান গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে জাহিদুল ইসলাম ওরফে রসুল (২২), গৌরীপুর (মধ্যপাড়া) গ্রামের ফরহাদ আলীর ছেলে আশিকুর রহমান @ আশিক (২৭), চৌদার গ্রামের জুলহাসের ছেলে কাউসার হোসেন (২৩), বড়–কা গ্রামের নুরুল ওয়াদুদে ছেলে রুবেল হোসেন(২৫), কয়ারচালা গ্রামের করিমের ছেলে আশিকুল হক (২৫), ভালুকজান গ্রামের সাবেদ আলীর ছেলে আকরাম হোসেন @ রিপন (২৬) এবং গৌরিপুর পৌরসভা এলাকার আলমগীর কবিরের ছেলে মুরাদ হোসেন (২৫)। তাদেরকে রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে দুপুরে গাজীপুর আদালতে পাঠানো হয়েছে।
গ্রেফতারকৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করে তারা মোবাইল, বিকাশ, রকেট ও ব্যাংক হিসাব এবং বাংলাদেশে অবৈধ অনলাইন জুয়ার প্লাটফর্ম ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসে ইন্টারনেট সংযোগ নিয়ে এড়ড়মষব পযড়ৎসব ব্রাউজার ব্যবহারের মাধ্যমে সমাজের উঠতি বয়সের যুবকদের আসক্ত করে বিদেশে পাচার করে নেয়া হচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা। তারা মালোয়েশিয়া/দুবাইয়ের মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে খুলে নিজেদের প্রকৃত পরিচয় গোপন করে যোগাযোগ করে থাকে। তাদের ব্যবহৃত সার্ভারটি াবষশর ষরাব এর প্রশাসনিক কর্মকর্তা আকাশ মালিক @ রনি (বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত দুবাই প্রবাসী) নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। আকাশ মালিক @ রনি এটিকে ওয়েব সাইটের মাধ্যমে বিদেশী নাম্বার ব্যবহার করে বাংলাদেশের ৫টি লেয়ারে তথ্য এ্যাডমিন, সাইট সাব এ্যাডমিন, সুপার এজেন্ট, মাষ্টার এজেন্ট এবং ইউজার (রুট লেভেলের ব্যবহারকারী) লেয়ারে বিভক্ত করে। প্রতিটি লেয়ার তার উপরের লেয়ারের মাধ্যমে কার্যক্রম সম্পাদন করে থাকে। তার মধ্যে একজন রুট লেবেলের আগ্রহী অনলাইন জুয়ারী প্রবেশ করে ক্লিক করলেই ১০০০ টাকার বিপরীতে ১০ টি ডিজিটাল কয়েন প্রদান করে অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়া হয়।
গাজীপুরে মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি’র) কমিশনার মোল্লা নজরুল ইসলাম জানান, গাজীপুরে মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি’র) সদর থানা পুলিশ তাদের মূল হোতা মাষ্টার এজেন্ট নাসিরকে গ্রেফতার করা হয়। তার ব্যবহৃত মোবাইলের মেসেঞ্জার, হোয়টাসঅ্যাপ চ্যাটিং ও এমএফএস (বিকাশ/নগদ /রকেট) যাচাই করে রুট লেবেলের প্রায় ৭০ জন ব্যবহারকারীর নিকট থেকে দৈনিক লক্ষাধিক টাকা সংগ্রহ করে তার ঊর্র্ধ্বতন সুপার এজেন্ট মারুফের কাছে প্রদান করে। মারুফকে গ্রেফতারের জন্য রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেলে তার সহযোগী অপর ৭ জনকে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করে। তাদের ব্যবহৃত মোবাইল চেক করে মেসেঞ্জার, হোয়টাসএ্যাপ চ্যাটিং ও এমএফএস (বিকাশ/নগদ/রকেট) দেখা যায় উর্ধ্বতন সাইট সার এ্যাডমিন হককে (ওয়েবসাইট নেম) ডাচ বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকের ১৪৮টি একাউন্টে গত নভেম্বর ২ কোটি টাকার অধিক লেনদেন হয়েছে। এক মাসেই প্রায় ১৫০০ টি মাস্টার এজেন্টের মাধ্যমে ৩ হাজার কোটি টাকার অধিক লেনদেন হয়েছে। যা বাংলাদেশ থেকে হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাচার করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা আরো স্বীকার করে ডিজিটাল কয়েন লেনদেন মুলত সারা বছরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেট, ফুটবললীগ, টেনিস এবং বর্তমানে বিশ্বকাপ ফুটবল খেলার মাধ্যমেও প্রধানত অনলাইনে জুয়া খেলা হয়। ব্যবহারকারী জয়ী হলে ডিজিটাল কয়েন ফেরত নিয়ে এর বিপরীতে আর্থিক লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে টাকা গ্রহণ করে থাকে। হারলে তার পুরো ডিজিটাল কয়েনটাই পর্যায়ক্রমে জুয়া পরিচালনাকারীর কাছে জমা হয়ে যায়। উক্ত াবষশর ষরাব এর সাইটে একজন প্রশাসন, ১৪ জন সাইট সাব প্রশাসন, ২৪০ জন সুপার এজেন্ট, ১৫০০ অধিক মাষ্টার এজেন্ট এবং সারা দেশে প্রায় দুই লক্ষাধিক ইউজার রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা রুজু এবং সিআইডি কর্তৃক মানি লন্ডারিং আইনে মামলা গ্রহণের ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।