নয়নাভিরাম প্রকৃতির জেলা বান্দরবানে এবার ঈদের লম্বা ছুটিতে পর্যটক সমাগমের সম্ভাবনাকে কেন্দ্র করে ভালো ব্যবসার স্বপ্ন দেখছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা। তাই হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট ও রেস্তোরাঁগুলো প্রহর গুনছে পর্যটকদের স্বাগত জানাতে।
এদিকে পর্যটকদের বরণ করতে চলছে নতুন সাজে সাজানো ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ। আর পর্যটকদের ভ্রমণ নির্বিঘ্ন করতে প্রস্তুতি নিয়েছে প্রশাসনও।
অপরূপ সৌন্দর্যের লীলভূমি বান্দরবান জেলা। এ জেলায় রয়েছে পর্যটকদের জন্য নয়ন ও প্রাণজুড়ানো সব দর্শনীয় স্থান। কিন্তু রমজানে পাহাড়ে এখন পর্যটকশূন্য। নেই কোনো কোলাহল। তবে ঈদ উপলক্ষে প্রাণচঞ্চলতায় ভরে উঠবে পর্যটন এলাকা।
প্রতিবছর ঈদ এলে পর্যটকে মুখর হয়ে ওঠে বান্দরবান। টানা ছুটি পেয়ে ঈদের আগে ও পরে বান্দরবানে ভ্রমণ করেন হাজার হাজার পর্যটক। এবারও ঈদের টানা ছুটিতে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় হবে, এমনটা আশা করছেন ব্যবসায়ীরা।
ইতোমধ্যে হোটেল, মোটেল ও রেস্তোরাঁগুলোতে চলছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ। একই সঙ্গে সাজানো হচ্ছে নতুন সাজে, চলছে রঙের কাজ। নেওয়া হচ্ছে রুম বুকিংও।
ঈদের টানা ছুটিতে এবার ভালো ব্যবসার আশা করছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা। আর পর্যটকদের সেবা দিতে সব ধরনের প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে।
হোটেল হিলটনের ব্যবস্থাপক এস এম আক্কাস উদ্দীন জানিয়েছেন, পর্যটকদের আগমনকে কেন্দ্র করে পুরো রমজান মাসজুড়ে প্রস্তুতি নিচ্ছি। হোটেলের রুমগুলো ভালোভাবে সাজানো হয়েছে। ঈদের পরের দিন থেকে পর্যটকের চাপ রয়েছে। এরই মধ্যে ৫ থেকে ৬ তারিখ হোটেলের ৮০ ভাগ কক্ষ আগাম ভাড়া হয়ে গেছে।
পর্যটন মোটেলের ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ চাকমা জানান, ঈদের পরদিন থেকে পাঁচ-ছয় দিনের জন্য সব কক্ষ ভাড়া হয়ে গেছে। বড় হোটেল মোটেল ও অবকাশকেন্দ্রগুলো পর্যটকেরা আগাম ভাড়া নিতে বেশি আগ্রহী। শহরের অধিকাংশ হোটেলগুলোতে এখন পর্যন্ত ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ কক্ষ আগাম ভাড়া হয়ে গেছে। দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে শতভাগ আগাম ভাড়া হয়ে যাবে বলে হোটেল ব্যবসায়ীরা মনে করেন। তারা বলেন, বছরের এই সময়টার জন্য আমরা এমনিতেই প্রস্তুত থাকি।
জেলা পুলিশ সুপার জেরিন আখতার বলেন, এবারের ঈদে বান্দরবানে প্রচুর পর্যটক আসবেন, এমনটাই ধারণা করছি আমরা। পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা দিতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি।
এদিকে পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে যানবাহন বিশেষ করে ভাড়া গাড়ির ব্যবসায়ী ও ট্যুর অপারেটররাও প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ফোরহুইলার গাড়ির মালিক ও চালকেরা জানিয়েছেন, জেলা ও উপজেলার তিন শতাধিক পর্যটক গাইড, দুই শতাধিক চাঁদের গাড়ির (ফোরহুইল গাড়ি) চালক অপেক্ষার প্রহর গুনছেন।
তারা বলছেন, প্রচুর গরম আর রোজার কারণে এই পার্বত্য জনপদ বান্দরবানে পর্যটকের আনাগোনা একেবারে নেই বললেই চলে। এবারে ঈদের টানা ছুটিতে পর্যটকের উপচে পড়া ভিড় থাকবে, এমনটাই আশা করছেন।
বান্দরবান আবাসিক হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে বান্দরবানে পাঁচ হাজারের বেশি পর্যটক ধারণক্ষমতা রয়েছে। টানা ছুটির কারণে এরই মধ্যে জেলার হোটেল, মোটেল ও রিসোর্টগুলোর প্রায় ৬০ শতাংশ কক্ষ আগাম বুকিং নিয়ে রেখেছেন ভ্রমণপ্রত্যাশীরা। এ ছাড়া নির্ধারিত দামের চেয়ে যাতে বেশি রুম ভাড়া নিতে না পারে, সে জন্য মনিটরিং টিম পরিচালনা করা হবে।
বান্দরবান ট্যুরিস্ট পুলিশের এসপি আব্দুল হালিম জানান, আসন্ন ঈদুল ফিতর ও টানা ছুটিতে বান্দরবানে প্রচুর পর্যটক আগমনের সম্ভাবনা রয়েছে। তাদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বান্দরবান টুরিস্ট পুলিশের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়া আগত পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বান্দরবান জেলা ট্যুরিস্ট পুলিশ সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।
রোজা ৩০টি হলে ঈদ হবে ৩ মে। ছুটি পড়বে টানা ছয় দিনের। তাই এবার অর্ধলক্ষ পর্যটকের সমাগম হতে পারে বান্দরবানে।