অনাস্থা ভোটে হেরে বিদায় নিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। দিনভর নাটকীয়তা শেষে পার্লামেন্টে ভোট অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় পরিষদের ৩৪২ জন সদস্যের মধ্যে ইমরানের বিপক্ষে ছিলেন ১৭৪ জন। পাকিস্তানের ইতিহাসে তিনিই প্রথম কোনো প্রধানমন্ত্রী যিনি অনাস্থা ভোটে হারলেন।
সুপ্রিম কোর্টের আদেশের পর শনিবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বসে। কয়েকদফা স্থগিত হয় অধিবেশন। শেষ পর্যন্ত রাতে ভোট অনুষ্ঠিত হয়। আর সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে অনাস্থায় হেরে যান ইমরান। এর মধ্য দিয়েই শেষ হয় তার শাসনামল।
জাতীয় পরিষদ এখন নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করবে। অনাস্থা ভোটে না হারলে ইমরান খান ২০২৩ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে পারতেন। এখন নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ হলে ২০২৩ সালের অক্টোবরের নির্বাচন পর্যন্ত তিনি ক্ষমতায় থাকবেন।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা মেনে দেশটির সংসদের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদের স্পিকার আসাদ কায়সারের সভাপতিত্বে শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় অধিবেশন শুরু হয়। দিনভর চলে নাটকীয়তা। কয়েক দফায় অধিবেশন স্থগিত করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করার বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ হতে পারবেন না জানিয়ে রাতে পদত্যাগ করেন পাকিস্তানের সংসদের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদের স্পিকার আসাদ কায়সার। পরে দায়িত্ব নেন আয়াজ সাদিক।
এরপর আবার ভোট শুরু হয়। ভোট শেষে ফল ঘোষণা করেন নতুন স্পিকারের দায়িত্ব নেওয়া সরদার আয়াজ সাদিক। ফল ঘোষণার পর স্পিকার শাহবাজ শরিফকে ভাষণ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানান। শাহবাজ বলেন, আল্লাহকে অশেষ ধন্যবাদ আজকের এ দিন দেখানোর জন্য।
বিরোধী সদস্যদের ধৈর্যের প্রশংসা করে সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ জারদারি, জেইউআই-এফ প্রধান মাওলানা ফজলুর রেহমানসহ অন্য দলের নেতাদের সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জানান।
ইমরানের বিদায়ের খবরে পার্লামেন্টে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন বিরোধীরা। এরইমধ্যে হেলিকপ্টারে করে ইসলামাবাদ ছেড়েছেন ইমরান।
পাকিস্তানের আর্থিক দুরবস্থা ও ভুল পররাষ্ট্রনীতির অভিযোগে ইমরানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনে বিরোধী দলগুলো। তবে এ প্রস্তাবকে ‘অসাংবিধানিক’ আখ্যা দিয়ে ৩ এপ্রিল তা খারিজ করে দেন জাতীয় পরিষদের ডেপুটি স্পিকার কাসিম খান সুরি।
সেদিনই প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেন প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি। এ পরিস্থিতিতে স্বপ্রণোদিত হয়ে নোটিশ দেন সুপ্রিম কোর্ট। বিরোধীরাও আদালতের দ্বারস্থ হন।
শুনানি শেষে সুপ্রিম কোর্ট ৭ এপ্রিল অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ ও জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে অসাংবিধানিক বলে ঘোষণা করেন এবং অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর ভোট আয়োজনের নির্দেশ দেন।