ময়মনসিংহ নগরীর চরপাড়া এলাকায় শরীফ চৌধুরী (২১) নামে এক যুবককে বাসার নিচে নৃশংসভাবে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। ৪৫ সেকেন্ডের সেই কিলিং মিশনে ১৮ বার ছুরিকাঘাত করে শরীফের মৃত্যু নিশ্চিত করে এলাকা ছাড়ে পাঁচ ঘাতক। পরে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তদন্তে নামে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
এরপর ঘটনার দুই-তিন দিনের মাথায় হত্যায় জড়িত তিন আসামিকে নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। ফুটপাতের অস্থায়ী দোকানে চাঁদাবাজির অধিপত্যকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে জানিয়েছে পিবিআই।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- নগরীর সানকিপাড়া এলাকার জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে শান্ত ইসলাম (২০), সদর উপজেলার পরানগগঞ্জ ভাটিপাড়া এলাকার কেরামত আলীর ছেলে আরিফুজ্জামান আরিফ (২২), তারাকান্দা উপজেলার নুর মোহাম্মদের ছেলে মো. রাকিবুল হাসান তপু (২৫)।
শনিবার (৯ এপ্রিল) দুপুরে ময়মনসিংহ পিবিআই কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস। এর আগে ভোররাত সাড়ে ৪টার দিকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ওই তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস বলেন, নিহত শরীফ চৌধুরী শান্ত ও হত্যাকাণ্ডে জড়িতরা পরস্পর বন্ধু ছিল এবং এলাকায় একসঙ্গে চলাফেরা করত। তারা নগরীর চরপাড়া এলাকায় একসঙ্গে ওই এলাকার ফুটপথে অস্থায়ী দোকান থেকে সাপ্তাহিক চাঁদা তুলত। সম্প্রতি নিহত শরীফ আলাদা গ্রুপ করে চাঁদার টাকা তোলা শুরু করে এবং চাঁদা আদায়ে নিজের আধিপত্য বজায় রাখে। সেই চাঁদার ভাগ পেতে অন্যদেরও তার সঙ্গে যোগ দিতে বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। এতে অপর গ্রুপের সদস্যরা প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে ওঠে এবং তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
তিনি আরও বলেন, বুধবার রাতের ওই কিলিং মিশনে অংশ নেয় পাঁচজন। তারা চরপাড়ার চৌধুরী ক্লিনিকের গলিতে ওঁৎ পেতে থাকে। এ সময় শরীফ বাসায় যাওয়ার জন্য গলিতে ঢুকতেই তাকে উপর্যুপরি ১৮ বার বুকে-পিঠে ছুরিকাঘাত করে ফেলে রেখে যায় তারা। তবে শরীফের মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে কিনা তা দেখার জন্য আবার ঘটনাস্থলে আসে। পরে মৃত্যু নিশ্চিত বুঝতে পেরে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায় ঘাতকরা। এরপর স্বজনরা শরীফকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত আরিফুজ্জামান আরিফের দেখানো মতে সদরের পরানগঞ্জ ভাটিপাড়ার তার নিজ বাড়ির পেছন থেকে খড়ের গাদার ভেতর থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দুটি চাকু উদ্ধার করা হয় বলেও জানান গৌতম কুমার বিশ্বাস।
এর আগে এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) রাতে নিহতের বাবা শহিদ মিয়া বাদী হয়ে কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করেন। নিহত শরীফ চৌধুরী ময়মনসিংহের গৌরীপুর সরকারি কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তার বাড়ি গৌরীপুর উপজেলার টাঙ্গুয়া এলাকায় হলেও ক্লিনিক ব্যবসার সুবাধে নগরীর চরপাড়া এলাকাতেই সপরিবারে থাকতেন। বাবা-ছেলে মিলে সেই ক্লিনিক পরিচালনা করতেন।