ইউক্রেন সীমান্তে প্রায় এক লাখ সেনা মোতায়েন করে রেখেছে প্রতিবেশী দেশ রাশিয়া। যেকোনো মুহূর্তে রুশ সেনারা দেশটিতে আক্রমণ করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এই পরিস্থিতিতে ইউক্রেন সফরে গেছেন জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস।
রাশিয়ার সম্ভাব্য আগ্রাসনের মুখে ইউক্রেনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ এবং ইউরোপে সম্ভাব্য একটি যুদ্ধ এড়াতেই সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) কিয়েভ সফরে যান তিনি। সোমবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
ইউক্রেন সীমান্তে দীর্ঘদিন ধরেই প্রায় এক লাখ সেনাসদস্য মোতায়েন করে রেখেছে প্রতিবেশী দেশ রাশিয়া। এর মধ্যে ট্যাংক ও কামানসহ যুদ্ধবিমানের বহরও ইউক্রেন সীমান্তে পাঠিয়েছে দেশটি। যেকোনো মুহূর্তে রুশ সেনারা দেশটিতে আক্রমণ করতে পারে বলেও আশঙ্কা রয়েছে। যদিও ইউক্রেনে হামলার কোনো পরিকল্পনা নেই বলে বরাবরই দাবি করে আসছে মস্কো।
তবে যুক্তরাষ্ট্র বলছে, যেকোনো মুহূর্তে ইউক্রেনে হামলা করে বসতে পারে রাশিয়া। হামলার আশঙ্কায় ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মার্কিন নাগরিকদের ইউক্রেন ছাড়ারও নির্দেশ দিয়েছে ওয়াশিংটন। বহু দেশ তাদের কূটনীতিক ও পরিবারের সদস্যদের সরিয়ে নিচ্ছে।
রয়টার্স বলছে, সংকট নিরসনে কূটনৈতিক প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে সোমবার ইউক্রেন সফরে যান জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস। মূলত আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে উত্তেজনা হ্রাস এবং ইউক্রেনে হামলা করলে রাশিয়াকে নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হতে হবে বলে মস্কোকে মনে করিয়ে দিতেই কিয়েভ সফর করছেন তিনি।
এছাড়া ইউক্রেন সফর শেষ করে মঙ্গলবার রাশিয়া সফর করবেন ওলাফ শলৎস। সেখানে তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
গত ডিসেম্বরে জার্মানির নতুন চ্যান্সেলর হিসেবে দায়িত্ব নেন ওলাফ শলৎস। যদিও এরপর থেকে ইউক্রেন সংকটের সঙ্গে খুব বেশি সংশ্লিষ্ট হননি। তবে জার্মানির মতো দেশের নেতা হয়েও কয়েক দশকের মধ্যে ইউরোপের অন্যতম বৃহৎ নিরাপত্তা সংকট নিরসনে ভূমিকা না রাখায় সম্প্রতি সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। এরপরই মূলত গত সপ্তাহে ইউক্রেন সংকটে নিজেকে সংশ্লিষ্ট করেন জার্মান চ্যান্সেলর।
রোববার ওলাফ শলৎস বলেন, ইউরোপে শান্তি নিশ্চিত করার জন্য একটি পথ খুঁজে বের করতেই কিয়েভ ও মস্কো সফরে যাচ্ছেন তিনি। তার ভাষায়, ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়া প্রায় এক লাখ সেনাসদস্য জড়ো করে রেখেছে এবং কিয়েভের জন্য এটি ‘মারাত্মক হুমকি’।
এদিকে ইউক্রেনে হামলার কোনো পরিকল্পনা নেই বলে বরাবরই দাবি করে আসছে রাশিয়া। তবে দেশটি বলেছে, পশ্চিমা দেশগুলো মস্কোর বেশ কিছু নিরাপত্তা চাহিদা পূরণ না করলে অনির্দিষ্ট ‘সামরিক-প্রযুক্তিগত’ পদক্ষেপ নিতে পারে তারা। মস্কোর নিরাপত্তা চাহিদার মধ্যে ইউক্রেনকে কখনোই ন্যাটোর সদস্য না করার অঙ্গীকার এবং পূর্ব ইউরোপ থেকে ন্যাটো বাহিনী প্রত্যাহারের দাবিও রয়েছে।
এছাড়া রোববার পৃথক এক প্রতিবেদনে রয়টার্স জানিয়েছে, রাশিয়া আগামী বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) ইউক্রেনে হামলা করার পরিকল্পনা করছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ইঙ্গিত দিয়েছে। তবে জ্যেষ্ঠ মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, বুধবারই ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার বিষয়ে যে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে তারা নিশ্চিত নন।
এর আগে গত শনিবার রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তবে দীর্ঘ এক ঘণ্টার এই ফোনালাপে চলমান ইউক্রেন সংকট সমাধানের পথে কোনো অগ্রগতিই হয়নি। আর এর একদিনের মাথায় কিয়েভ সফরে গেলেন জার্মান চ্যান্সেলর।