নোয়াখালী-৫ (কবিরহাট-কোম্পানীগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নির্বাচনী এলাকার আট ইউপিতে দলীয় প্রতীক ছাড়া নির্বাচন হচ্ছে। এই নির্বাচনকে ঘিরে ভোটারদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনার পাশাপাশি উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও দেখা যাচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দলীয় প্রতীক ছাড়া নির্বাচন হওয়ায় উৎসবমুখর পরিবেশে প্রচারণা চালাচ্ছেন প্রার্থীরা। প্রভাবমুক্ত প্রচারণার ফলে জনগণ তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করতে পারবেন।
চরপার্বতী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মোতাহার হোসেন বাদল ঢাকা পোস্টকে বলেন, দলীয় প্রতীক না থাকায় সাধারণ মানুষ ভোটের আমেজ ঈদের আনন্দের মতো উপভোগ করেছে। প্রার্থীরা নিজেদের ব্যক্তিগত প্রতিশ্রুতি ও কর্মপরিকল্পনা নিয়ে ভোটারদের কাছে যাচ্ছে। এতে করে ভোটাররা মূল্যায়িত হচ্ছে।
চরহাজারী ইউনিয়নের বাসিন্দা এএসএম মাইন উদ্দিন পিন্টু ঢাকা পোস্টকে বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে এলাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড স্থগিত হয়ে আছে। গতবার যিনি চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি এবার নির্বাচনে নেই। এই চরহাজারী ইউনিয়নের প্রথম বিদ্যালয় স্থাপন করেছেন আমার বাবা। তিনি দীর্ঘদিন ধরে এলাকার উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার পাশে ছিলেন। এবার আমার ছোট ভাই আনারস প্রতীকে চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছে। সুষ্ঠু ভোট হলে আমরা জয়ের বিষয়ে শতভাগ আশাবাদী।
চরপার্বতী ইউনিয়নে ১০ বছর ধরে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন মোজাম্মেল হোসেন কামরুল। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে চেয়ারম্যান হয়েছি। এবার যেহেতু দলীয় প্রতীক নেই তাই আমার কোনো চিন্তা নেই। মোটরসাইকেল প্রতীকে মানুষের কাছে ভোট চাচ্ছি। আশা করি মানুষ আমাকে বিগত ১০ বছরের কর্মের মূল্যায়ন অনুযায়ী ভোট দেবে।
একই ইউনিয়নে আনারস প্রতীকে চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছের ওবায়দুল কাদেরের ভাগনে ও উপজেলা আওয়ামী লীগের মুখপাত্র মাহবুবুর রশিদ মঞ্জু। তিনি বলেন, দলীয় প্রতীক ছাড়া নির্বাচন হওয়ায় সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত পরিবেশ ভালো। এক বছর ধরে আওয়ামী লীগের বিবাদমান দুই পক্ষের বিরোধের কারণে আমরা অশান্তিতে আছি।
সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা ঢাকা পোস্টকে বলেন, মাননীয় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকায় দলীয় প্রতীক ছাড়া নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আমাদের মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নির্বাচনী এলাকায়ও দলীয় প্রতীক ছাড়া নির্বাচন হবে। প্রধানমন্ত্রী মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছেন। জনগণ যাকে খুশি তাকে ভোট দেবে। সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য প্রশাসনকে কাজ করতে হবে। না হলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনকে বর্জন করা হবে।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. রবিউল আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনে বদ্ধ পরিকর। সুষ্ঠু নির্বাচনের সব আয়োজন শেষ হয়েছে। পর্যাপ্ত পরিমাণে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মাঠে রয়েছে। চেকপোস্টে এলাকার নাগরিক ও ভোটার ছাড়া কাউকে পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
জেলা পুলিশ সুপার মো. শহীদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ভোটের দিন যাতে ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোট কেন্দ্রে যাতায়াত করতে পারে তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কেউ যাতে রাস্তায় ভয়-ভীতি, প্রতিবন্ধকা সৃষ্টি করতে না পারে সেই বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা নির্বাচন উপলক্ষে কঠোর অবস্থানে রয়েছি। প্রতি ইউনিয়নে দুই বা ততোধিক এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত থাকবে। এছাড়াও একইসঙ্গে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও পর্যাপ্ত বিজিবি, কোস্টগার্ড, র্যাব, পুলিশ ও আনসার মোতায়েন থাকবে।
উল্লেখ্য, আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি সপ্তম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে কোম্পানীগঞ্জের ৮ ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে কোনো পক্ষকেই নৌকা প্রতীক দেয়নি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। এসব ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৩৯ জন, সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ৭৯ জন ও সাধারণ সদস্য পদে ৩০৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।