ফের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে পূর্ব এশিয়ার পারমাণবিক শক্তিধর দেশ উত্তর কোরিয়া। রোববার (৩০ জানুয়ারি) সকালে এই পরীক্ষা চালায় দেশটি। পিয়ংইয়ংয়ের নিক্ষেপ করা সর্বশেষ এই ক্ষেপণাস্ত্রটি ২০১৭ সালের পর থেকে সবচেয়ে বড় এবং এটি মধ্যমপাল্লার ব্যালিস্টিক মিসাইল (আইআরবিএম) ক্ষেপণাস্ত্র বলে মনে করা হচ্ছে।
এ নিয়ে চলতি মাসে সপ্তমবারের মতো ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালালো দেশটি। একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার মতো সর্বশেষ ঘটনায়ও তীব্র নিন্দা ও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা। রোববার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনীর জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ জানিয়েছে, স্থানীয় সময় রোববার সকাল ৭টা ৫২ মিনিটের দিকে একটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে পিয়ংইয়ং। উত্তর কোরিয়ার জাগাং প্রদেশ থেকে এই ক্ষেপণাস্ত্রটি নিজেদের পূর্ব উপকূলের দিকে নিক্ষেপ করে কিম প্রশাসন।
এদিকে সপ্তম দফায় উত্তর কোরিয়ার এই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার পর জরুরি বৈঠক করে দক্ষিণ কোরিয়ার জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল (এনএসসি)। বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন দেশটির প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে-ইন। পরে সিউলের এনএসসি জানায়, উত্তর কোরিয়ার নিক্ষেপ করা ক্ষেপণাস্ত্রটি একটি মধ্যমপাল্লার ব্যালিস্টিক মিসাইল (আইআরবিএম) এবং ২০১৭ সাল থেকে রোববারের আগপর্যন্ত পিয়ংইয়ং এই ধরনের মিসাইল আর পরীক্ষা করেনি।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে-ইন জানিয়েছেন, এই মিসাইল পরীক্ষার মাধ্যমে উত্তর কোরিয়া তার দূরপাল্লার আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) পরীক্ষার ওপর স্ব-আরোপিত স্থগিতাদেশকে সম্পূর্ণভাবে বাতিল করার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।
এদিকে রোববারের এই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার পর যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর ইন্দো-প্যাসিফিক কমান্ড এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘যুক্তরাষ্ট্র এই ধরনের কর্মকাণ্ডের নিন্দা করছে এবং আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা নষ্টের মতো কাজ থেকে বিরত থাকতে উত্তর কোরিয়ার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।’
দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনীর জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ এবং জাপানের প্রধান ক্যাবিনেট সেক্রেটারি হিরোকাজু মাতসুনো পৃথকভাবে জানিয়েছেন, রোববার উত্তর কোরিয়ার নিক্ষেপ করা ক্ষেপণাস্ত্রটি ২ হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত উচ্চতায় উঠেছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে এবং লক্ষবস্তুতে আঘাত হানার আগে ৩০ মিনিট উড়ে ৮০০ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করে।
রয়টার্স বলছে, মধ্যমপাল্লার ব্যালিস্টিক মিসাইল (আইআরবিএম) ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা সাধারণত ৬০০ মাইল থেকে সাড়ে ৩ হাজার মাইলের মধ্যে হয়ে থাকে। অন্যদিকে আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের (আইসিবিএম) পাল্লা সাধারণত সাড়ে ৩ হাজার মাইলের বেশি।
গত ৫ জানুয়ারি বছরের প্রথম ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা হিসেবে পারমাণবিক শক্তিধর এই দেশটি নিজের পূর্ব উপকূলে হাইপারসনিক মিসাইল নিক্ষেপ করেছিল। এর এক সপ্তাহের মধ্যেই দেশটি দ্বিতীয়বারের মতো শব্দের চেয়ে দ্রুতগতিসম্পন্ন এই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করে।
এরপর গত ১৪ জানুয়ারি উত্তর কোরিয়া ফের অজ্ঞাত মিসাইল নিক্ষেপ করে বলে জানায় দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের কর্মকর্তারা। এক সপ্তাহেরও বেশি কিছু সময়ের মধ্যে সেটি ছিল পূর্ব এশিয়ার এই দেশটির তৃতীয় দফায় ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ। আর এর তিনদিনের মাথায় নিজের পূর্ব উপকূলে একসঙ্গে দু’টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে দেশটি।
এরপর গত ২৫ জানুয়ারি সমুদ্রে দু’টি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে উত্তর কোরিয়া। চলতি মাসে সেটি ছিল দেশটির পঞ্চম দফায় চালানো কোনো ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা। এরপর ষষ্ঠ দফায় গত ২৭ জানুয়ারি নিজেদের পূর্ব উপকূলে দু’টি স্বল্পপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে দেশটি।
এছাড়া গত বছরের অক্টোবর মাসের শুরুতে বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালায় উত্তর কোরিয়া। এর আগে শব্দের চেয়ে দ্রুতগতিসম্পন্ন হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের প্রথম পরীক্ষা চালায় দেশটি। এছাড়া গত সেপ্টেম্বর মাসে পৃথকভাবে ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালানোরও অভিযোগ ওঠে পিয়ংইয়ংয়ের বিরুদ্ধে।
উত্তর কোরিয়ার মতো অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত দেশ কীভাবে একের পর এক এমন পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে, তা নিয়ে বহু প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। যদিও একের পর এক পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষার জন্য উত্তর কোরিয়ার ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্রসহ একাধিক দেশ।