সিএনএমঃ
চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে স্ত্রীকে হত্যা করে প্লাস্টিকের ড্রামে লাশ গুম করে রাখা মামলায় ঘাতক স্বামী আবুল হোসেন @ লিটন (৪৫)’ কে দীর্ঘ ০৯ বছর পর গ্রেফতার করেছে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম।।
নিহত ভিকটিম মোছাঃ নাসিমা বেগম (২৬) বাগেরহাট জেলার বাগেরহাট সদর থানার মৌজারডাঙ্গা গ্রামের মেয়ে। গত ২০০৮ সালে নিহত ভিকটিম এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় মোঃ কামরুল ইসলাম এর সাথে বিবাহ হয়। বিবাহের ০২ বছর পর তাদের একটি কন্যা সন্তান জন্ম হয় এবং এর ২/৩ মাস পর তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায়। পরবর্তীতে ভিকটিম নিরুপায় হয়ে সন্তানকে তার নানীর কাছে রেখে চট্টগ্রামে বসবাসরত ভাই মোঃ সেলিম হোসেন এর বাড়া বাসায় থেকে স্থানীয় গার্মেন্টসে চাকুরী নেন। গার্মেন্টেসে চাকুরী করা কালে আবুল হোসেন @ লিটন এর সাথে পরিচয় হয় এবং প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। পরবর্তীতে ভিকটিম তার পরিবারের কাউকে না জানিয়ে ২০১৩ সালে আবুল হোসেন @ লিটন’কে বিবাহ করেন। বিবাহের ১৫/২০ দিন পর নিহত ভিকটিম তার বড় ভাইকে জানায় যে, আবুল হোসেন @ লিটন’কে বিবাহ করে চট্টগ্রামের পাহাড়তলী থানাধীন গ্রীনভিউ এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করছেন। বোনের বিবাহের কথা শুনে নিহত ভিকটিম এর ছোট ভাই হিরণ শেখ উক্ত বাসায় বেড়াতে আসলে তার বোনের স্বামী আবুল হোসেন @ লিটন এর পূবের্র বিবাহ এবং তার ০৭ বছরের একটি কন্যা সন্তানের কথা জানাজানি হয়। উক্ত ঘটনা নিয়ে স্বামী আবুল হোসেন @ লিটন এর সাথে ভিকটিমের ঝগড়াঝাটি হয়।
গত ৩১ মার্চ ২০১৪ইং তারিখে নিহত ভিকটিম এর ছোট ভাই ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে বার বার ফোন দিলেও ফোন রিসিভ না করা এবং পরে ভিকটিমের মোবাইল নাম্বারটি বন্ধ পায়। পরবর্তীতে বোনের স্বামী আবুল হোসেন @ লিটন এর মোবাইলে ফোন করলে জানায় যে, তোমার বোনের সাথে ঝগড়া হয়েছে সে বাহিরে আছে তখন বোন বাসায় আসলে কথা বলার জন্য অনুরোধ করেন। পরবর্তীতে ভিকটিম এর ছোট ভাই হিরণ শেখ রাতে ফোন দিলে বোন জামাই আবুল হোসেন @ লিটন জানায় যে, তোমার বোন ঘুমাচ্ছে ফোন দেওয়া যাবে না। পরদিন ফোন দিয়ে বোন জামাই আসামী আবুল হোসেন @ লিটন জানায় যে, তোমার বোন আমার সাথে ঝগড়া করে বাসা থেকে চলে গেছে।
পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে তাদের সন্দেহ হলে গত ০৪ এপ্রিল ২০১৪ইং তারিখে বাগেরহাট থেকে ভিকটিমের বড় ভাই শেখ মোঃ হুমায়ন কবির ও ছোট ভাই হিরণ এবং বড় বোন সেলিনা বেগম সকালে চট্টগ্রাম এসে সবাই একত্রে পাহাড়তলীর ০৫ নং রোডস্থ মোঃ ইসমাইল মজুমদার এর বাড়ির ৬ষ্ঠ তালার বাড়া বাসায় গিয়ে তালা বন্ধ দেখতে পায়। তখন উক্ত বাসায় ৬ষ্ঠ তলায় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়েছে এবং গত ০২ এপ্রিল ২০১৪ইং তারিখে সকাল আনুমানিক ০৭০০ ঘটিকায় ভিকটিমের স্বামী আবুল হোসেন @ লিটন তার পূর্বের স্ত্রীর ঘরের মেয়েকে নিয়ে গ্রামের বাড়ীতে গেছে বলে বাসার মালিক মোঃ ইসমাইল মজুমদার এর নিকট থেকে জানতে পারে। তখন নিহত ভিকটিম এর ভাই ও বোনেরা মিলে ঘরের দরজা বন্ধ দেখে পার্শ্বের খোলা জানালা দিয়ে ভিরের দিকে দেখতে গিয়ে ঘরের ভিতর হতে দুর্গন্ধ বেরোচ্ছিল। এ ব্যাপারে তাদের মনে সন্দেহ হলে স্থানীয় থানা পুলিশকে অবহিত করে। পুলিশ এসে মালিকের নিকট থেকে অতিরিক্ত চাবি নিয়ে বাসার তালা খোলে ভিতরে প্রবেশ করে রান্না ঘরে রংয়ের প্লাস্টিকের পানির ড্রামের ভিতর থেকে পঁচা অবস্থায় একটি মৃতদেহ বাহির করে ফ্লোরে রাখলে তখন তারা বোনের লাশ বলে সনাক্ত করেন। উক্ত নৃশংস ও জঘন্য এই হত্যার ঘটনাটি তখন ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।
পরবর্তীতে উক্ত হত্যার ঘটনায় নিহত ভিকটিমের ভাই মোঃ সেলিম হোসেন (৩৩) বাদী হয়ে চট্টগ্রাম মহানগরীর পাহাড়তলী থানায় ০১ জন এজাহারনামীয় এবং অজ্ঞাতনামা কয়েকজনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং-৬, তারিখ-০৪ এপ্রিল ২০১৪ খ্রিঃ, ধারা-৩০২/২০১/৩৪, জিআর নং-৫৩/২০১৪, পেলানকোড ১৮৬০। মামলা রুজু হওয়ার পর পুলিশ মামলাটির তদন্ত শেষে বিজ্ঞ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করলে আদালত মামলাটির বিচার কার্যক্রম শুরু করে এবং আসামী আবুল হোসেন @ লিটন এর বিরুদ্ধে বিজ্ঞ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ, ৪র্থ আদালত, চট্টগ্রাম গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেন।
র্যাব-৭, চট্টগ্রাম বর্ণিত আলোচিত ও জঘন্য হত্যা মামলার এজাহারনামীয় ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামীকে গ্রেফতারের লক্ষ্যে ব্যাপক গোয়েন্দা নজরদারি এবং ছায়াতদন্ত অব্যাহত রাখে। নজরদারীর এক পর্যায়ে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পারে যে, বর্ণিত হত্যা মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত দীর্ঘদিন পলাতক আসামী আবুল হোসেন @ লিটন (৪৫) আইন শৃংখলা বাহিনীর নিকট হতে গ্রেফতার এড়ানোর লক্ষ্যে ছদ্মনাম ধারণ করে ফেনী জেলার সোনাগাজী থানাধীন রাঘবপুর এলাকায় আত্মগোপন করে রয়েছে।
উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম এর একটি আভিযানিক দল ০১ অক্টোবর ২০২৩ইং তারিখ বর্ণিত এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে উল্লিখিত নৃশংস ও জগন্য হত্যা মামলার এজাহারনামীয় ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামী আবুল হোসেন @ লিটন (৪৫), পিতা- মৃত হাফেজ আহম্মদ, সাং-রাঘবপুর, থানা- সোনাগাজী, জেলা- ফেনী’কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
উপস্থিত সাক্ষীদের সম্মুখে গ্রেফতারকৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, সে বর্ণিত হত্যা মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামী মর্মে স্বীকার করেন। গ্রেফতারকৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায় যে, সে তার ২য় স্ত্রীকে ঝগড়াঝাটির একপর্যায়ে তাকে হত্যা করে পানি রাখার প্লাস্টিকের ড্রামের ভিতরে গুম করে রেখেছিলো যেন কেউ জানতে না পারে এবং ঘটনার পর হতেই আইন শৃংখলা বাহিনীর নিকট হতে গ্রেফতার এড়াতে ছদ্মনাম ধারণ করে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন পেশায় আত্মগোপন করে আসছিল।
গ্রেফতারকৃত আসামী সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।