আমি মোছাঃ লিমা আক্তার, আমার বাড়ি রংপুর। ছয় ভাইবোনের মধ্যে ছোট আমি, ছোট মানেই সবার আদর, ভালোবাসার মেয়ে। বাবার স্বপ্ন ছিলো ছোট মেয়েকে এসআই বানানো। কিন্তু আমি এসএসসির গন্ডি পেরিয়ে, বাবার স্বপ্ন মাটিচাপা দিয়ে, প্রেম করে একটা বিয়ে করে নিলাম, সবার মন খারাপ, কিন্তু কি আর করার ছোট মেয়ে মেনে নিয়ে নিলো। বাবার কথা পড়াশুনা বাদ দেওয়া যাবে না। বাবার কথামত, কলেজ যাওয়া শুরু করলাম, কিন্তু প্রতিবেশিরা বললো আর পড়াশুনা হবে না, মনের মধ্যে একটা জেদ চাপলো, বিয়ে হয়ে গেছে তো কি হয়েছে পড়াশুনা শেষ করবো এবং শেষ করেছি, এর মধ্যে একটা সুন্দর ছেলে সন্তানের মা হইলাম। সংসার, সন্তান এবং পড়াশুনা ভালো চলছিলো, কারন আমার বর ভালো একটা কোম্পানি চাকুরি করতো। নিজে কখনো চাকুরী করবো এটা ভাবিনি, তবে সুখ বেশিদিন কপালে থাকে না, কোন এক কারনে বর চাকুরী টা বাদ দিলো, আর তখনি শুরু হইলো জীবনের সংগ্রাম, আমার জীবনে হয়তো ঐ খারাপ সময় টার প্রয়োজন ছিলো, পরিবারের অনেক সাপোর্ট পেয়েছি, বিশেষ করে আমার একমাত্র ভাই, যে আমার বন্ধু, সুখে দুঃখে সব সময় আমাকে বলেছে হতাশ হয়ো না, সে বলতো তুমিও তো মাস্টার্স পাশ করেছো, তুমিও তো কোথাও চাকুরির ট্রাই করতে পারো, আর তখনি অ্যাপ্লাই করলাম ব্র্যাকে, কারন ব্র্যাক বাংলাদেশের নাম্বার ওয়ান এনজিও, যেখানে নারীদের বেশি নিরাপত্তা দেওয়া হয়। ভাগ্যক্রমে আমার ব্র্যাকে চাকুরি টা হয়ে যায় এবং এখানে সহকারী এলাকা ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত আছি। তবে নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলবো মেয়েদের যতো বাধা আসুক পড়াশুনা কমপ্লিট করা উচিৎ, আসলে কখন কার বিপদ আসবে বলা যায় না। একটা সময় ছিল সন্তান, সংসার ছাড়া কিছুই বুঝতাম না, আর এখন আমি ব্র্যাকে চাকুরী করে, মানুষের সাথে কথা বলা, সকলের সাথে মিলেমিশে চলা, সংসারের দায়িত্ব নেওয়া এমন কি স্কুটি চালানো সব শিখে গেছি। আমি আমার প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক কে শতবার স্যালুট জানাই। এখন বর্তমানে আমাকে দেখে অনেকে স্কুটি চালানো শিখতেছে। আমি সবসময় নারীদের বলবো স্কুটি চালানো কোন কঠিন কাজ নয়, শুধু সাহস দরকার এবং আমি স্বপ্ন দেখি আর অল্প কয়েকদিনের মধ্যে প্রতি টা নারীর স্কুটি থাকবে, এখন রাস্তায় বের হইলে দুই একজন কে দেখা যায়, কিছুদিন পর হাজার হাজার নারী স্কুটি চালাবে। আমার স্বপ্ন রোল মডেল হওয়ার, আমাকে দেখে যেন অন্য নারীরা সাহস পায়।