সিএনএমঃ
১৯৫৯ সালের কথা। দেশে তখন চলছিল পাকিস্তানি সামরিক শাসন। দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে বাওয়ানী জুট মিলস গ্রুপের মালিক হাজী আবদুল লতিফ বাওয়ানী পূর্ব পাকিস্তান সামরিক শাসক মেজর জেনারেল ওমরাও খানের নিকট বায়তুল মোকাররম মসজিদ নির্মাণের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। ওমরাও খান মসজিদ নির্মাণের ব্যাপারে কোনো প্রকার অনীহা প্রকাশ না করে সরকারের সক্রিয় সহযোগিতার আশ্বাস দেন। ১৯৫৯ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকায় আব্দুল লতিফ বাওয়ানীর বাড়িতে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বায়তুল মোকাররম মসজিদ নির্মাণের এ সভায় উপস্থিত ছিলেন শিল্পপতি জি.এ.মাদানী, হাজী আব্দুল লতিফ বাওয়ানী, এম.এইচ. আদমজী, এস. সাত্তার, মুহাম্মদ সাদিক, এ জেড.এন. রেজাউল করিম, ইয়াহিয়া আহমদ বাওয়ানী ও মেজর জেনারেল ওমরাও খান। সভায় সর্বসম্মতিক্রমে মসজিদ নির্মাণের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এখন যে জায়গায় মসজিদটি অবস্থিত সেখানে আগে ছিল বিশাল একটি পুকুর। এই পুকুরটি সকলের নিকট পল্টন পুকুর নামে পরিচিত ছিল। পুকুর ভরাট করে মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়।
প্রথম থেকেই বায়তুল মোকাররম মসজিদ সরকার নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। পুকুর ভরাট হলে ১৯৬০ সালের ২৭ জানুয়ারি পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি ফিল্ড মার্শাল মোহাম্মদ আইয়ুব খান মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। বায়তুল মোকাররম মসজিদের ডিজাইন করেন প্রকৌশলী আবুল হোসেন থারিয়ানী। প্রকৌশলী মঈনুল হোসেন বায়তুল মোকাররম মসজিদের নির্মাণ কাজের তদারকি করেন। ১৯৬৩ সালে বায়তুল মোকাররম মসজিদের প্রথম পর্বের নির্মাণ কাজ শেষ হয়। বায়তুল মোকাররম মসজিদে প্রথম জুমআর নামাজ আদায় করা হয় সেই বছরেরই ২৫ জানুয়ারি শুক্রবার। আর তারাবীহ নামাজ হয় ২৬ জানুয়ারি শনিবার ১৯৬৩ সালে।
বায়তুল মোকাররম মসজিদের প্রথম খতিব ছিলেন মাওলানা আবদুর রহামন বেখুদ (রহ.)। এর পরে খতিব নিযুক্ত হন মাওলানা ক্বারী উসমান মাদানী (রহ.)। তিনি এ মসজিদের খতিব ছিলেন (১৯৬৩-১৯৬৪) মাত্র এক বছর। পরবর্তী খতিব ছিলেন মুফতী সাইয়েদ মুহাম্মদ আমীমুল ইহসান। তিনি ১৯৬৪-১৯৭৪ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। এরপর এ মসজিদের খতিব ছিলেন মুফতী মাওলানা মুইজ (রহ.)। তিনি দায়িত্ব পালন করেন ১৯৭৪-১৯৮৪ সাল পর্যন্ত। এর পরে বায়তুল মোকাররম মসজিদের দায়িত্ব পালন করেন খতিব মাওলানা উবায়দুল হক (রহ.)। তিনি ছিলেন দেশবরেণ্য আলেম। খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ১৯৮৪-২০০৯ সাল পর্যন্ত। তারপর ২৪ বছর যিনি এখানে ইমামের দায়িত্ব পালন করেছিলেন সেই মুফতি মাও. নুরুদ্দীন সাহেব একবছর ভারপ্রাপ্ত খতিবের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। বর্তমানে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিবের দায়িত্বে রয়েছেন প্রফেসর মাওলানা মো. সালাহ্উদ্দিন। তিনি ৫ জানুয়ারি ২০০৯ সালে এ মসজিদের খতিব নিযুক্ত হন। বিশ্বের বিখ্যাত মসজিদগুলোর একটি ঢাকা বায়তুল মোকাররম মসজিদ।