রাজশাহী প্রতিনিধিঃ
রাজশাহীর গুরুদাসপুরের উত্তর নাড়িবাড়ি এলাকার নিজ বাড়ি থেকে মঙ্গলবার (২৩ মার্চ) ববিকে আটক করে পুলিশ। আটকের পর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেন তিনি।
ঘটনার পর সিআইডির ক্রাইম সিন ম্যানেজমেন্ট টিম রাজশাহী থেকে এসে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করে। গত সোমবার রাতে ঘরটি সিলগালা করে দেয় তারা।
মঙ্গলবার সকালে পুলিশ ঘরটি তল্লাশি চালিয়ে খাটের নিচ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত রক্তমাখা ব্লেড উদ্ধার করে।
সিংড়া সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার জামিল আখতার জানান, ছয় মাস আগে মালয়েশিয়া প্রবাসী সোহেল রানার সঙ্গে অনলাইনে বিয়ে হয় ববি খাতুনের (২০)। সোহেল রানা ববির দ্বিতীয় স্বামী। বিয়ের পর ববি রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলার হাবাসপুর গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে থাকতেন। প্রবাসী স্বামী দেশে ফিরলে ববি তাকে একটি মোটরসাইকেল কিনে দেয়ার জন্য কিছুদিন আগে মা সেলিনা বেগমের কাছে টাকা চান। কিন্ত রাজি না হলে মা-মেয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়।
সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার জামিল আখতার আরও জানান, গত রোববার (২১ মার্চ) ববি তার দুলাভাই আরিফুল ইসলামের সঙ্গে নাটোরের গুরুদাসপুর যান। মায়ের কাছে পুনরায় মোটরসাইকেলের জন্য টাকা চান। মা আবারও আপত্তি জানালে দুজনের মধ্যে তীব্র বাকবিতণ্ডা হয়। চুরি করতে গেলে বাধা দেন প্রতি। কিন্ত মায়ের চোখ ফাকি দিয়ে স্বর্ণালঙ্কার নেয়া সহজ ছিল না। সোমবার (২২ মার্চ) বিকেলে অসুস্থ মাকে ঘুমন্ত অবস্থায় পেয়ে ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয় মেয়ে ববি। ড্রয়ার খুলে স্বর্ণালঙ্কার বের করতে মায়ের আঁচলে থাকা চাবি নিতে গেলে টের পেয়ে জেগে ওঠেন তিনি। বাধা দিতে গেলে ধ্বস্তাধস্তির এক পর্যায়ে সঙ্গে আনা ব্লেড দিয়ে মা সেলিনা বেগমের গলায় পোঁচ দেন ববি। এতে মুহূর্তের মধ্যেই শ্বাসনালী কেটে মৃত্যু হয় সেলিনা বেগমের।
জামিল আখতার জানান, মৃত্যু নিশ্চিতের পর মায়ের ৯ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ ১৬ হাজার টাকা নিয়ে নিজের ভ্যানিটি ব্যাগে রাখে ববি। মাকে হত্যার পর গলা থেকে রক্তের ফোঁটা তার জামা-কাপড়ে লেগে যায়। প্রমাণ লুকাতে ভিন্ন এক কৌশল অবলম্বন করেন তিনি। জামা ধোয়ার উদ্দেশ্যে বালতিতে ভিজিয়ে দেন। নতুন জামা পরে বাড়ির পাশের একটি মুদি দোকানে জিনিসপত্র কিনতে যান। ফিরেই ঘরে ঢুকে চিৎকার দিয়ে ভাবিসহ প্রতিবেশীদের জড়ো করেন ববি।
পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা বলেন, ‘সেলিনা বেগম হত্যা একটা পরিকল্পিত ঘটনা। ঘটনার পর ববির মায়াকান্না যথেষ্ট সন্দেহের অবতারণা করে। তখন অধিকতর তদন্তের জন্য সিআইডিকে তলব করা হয়।’
লিটন কুমার সাহা আরও বলেন, ‘মায়ের সঙ্গে মেয়ে ববির সম্পর্ক ভালো ছিল না। মা ববির তুলনায় ছোট মেয়ে স্বপ্নাকে বেশি ভালোবাসতেন। সেলিনা বেগম জানিয়েছিলেন কিছু দিতে হলে তিনি স্বপ্নাকে দেবেন, ববিকে নয়। সেই ক্ষোভ থেকে এই হত্যাকাণ্ড ঘটায় ববি।’