আগামী অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা চূড়ান্ত করেছে পরিকল্পনা কমিশন। সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনে অনুষ্ঠিত বর্ধিত সভায় আগামী অর্থবছরের জন্য এডিপি চূড়ান্ত করা হয়েছে। কাক্সিক্ষত রাজস্ব আদায় না হওয়ায় করোনার মধ্যে গত দুই বছরে এডিপির আকার খুব বেশি না বাড়লেও এবার আগের ধারায় ফিরেছে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, যেসব প্রকল্প আগামী অর্থবছরে শেষ হবে, সেসব প্রকল্প অগ্রাধিকারমূলক বরাদ্দ পেয়েছে। জাতীয় স্বার্থের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প তুলনামূলকভাবে কম বরাদ্দ পাচ্ছে। আগামী অর্থবছরে পদ্মা সেতু প্রকল্পের জন্য আর বরাদ্দ লাগছে না। তবে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মেট্রোরেল নির্মাণের মতো বড় প্রকল্পে বরাদ্দ বেড়েছে। আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) সর্বোচ্চ ২৮.৭৩ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে। মূলত দেশের পরিবহন অবকাঠামো উন্নয়নে চলমান বেশ কিছু মেগা প্রকল্পকে গুরুত্ব দিয়ে এ খাতের সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা যায়, সড়ক, রেল ও বন্দর অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পের মধ্যে কর্ণফুলী টানেল, মেট্রোরেল (এমআরটি-৬), যমুনা রেল সেতু, পদ্মা রেল সংযোগ, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দর প্রকল্প বাস্তবায়নের সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। এ কারণে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে চলতি অর্থবছরের এডিপি বরাদ্দের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে ২০২২-২৩ অর্থবছরের এডিপিতে।
চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ৫৫ হাজার ৮২৭ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির তুলনায় প্রস্তাবিত এডিপিতে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতের বরাদ্দ বেড়েছে ১৪ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের এডিপির ৭০ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে। তবে চলতি অর্থবছরের এডিপির তুলনায় বরাদ্দ কমছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে। তবু দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৯ হাজার ৪১২ কোটি টাকা বরাদ্দ এ খাতেই। এ ছাড়া শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতেও প্রস্তাবিত এডিপিতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। শিক্ষা খাতে আগামী অর্থবছরের জন্য ২৯ হাজার ৮১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আর স্বাস্থ্য খাতে ১৯ হাজার ২৭৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, চলতি অর্থবছরের এডিপিতে স্বাস্থ্য খাতে এডিপির বরাদ্দ ছিল ৭.৬৮ শতাংশ, আর প্রস্তাবিত এডিপিতে এ খাতের বরাদ্দ সামান্য বাড়িয়ে ৭.৮৩ শতাংশ করা হয়েছে। শতাংশের হিসাবে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ উল্লেখযোগ্যভাবে না বাড়লেও টাকার অংশে ১০ হাজার ৮২০ কোটি টাকা বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির তুলনায় আগামী অর্থবছরের এডিপিতে স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ বেড়েছে ৫ হাজার ৪৮০ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত এডিপিতে শিক্ষা খাতের বরাদ্দ বাড়িয়ে ১১.৮২ শতাংশ করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের এডিপির তুলনায় আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত এডিপিতে শিক্ষা খাতের বরাদ্দ বেড়েছে প্রায় ৩৬.৪৮ শতাংশ। তবে চলতি অর্থবছরের মূল এডিপিতে শিক্ষা খাতে ১০.২৯ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হলেও সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ কমিয়ে ৩.৮১ শতাংশ করা হয়।
পরিকল্পনা বিভাগের সচিব ও পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগের সদস্য প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী সময়ের আলোকে বলেন, মন্ত্রণালয়গুলোর চাহিদা অনুযায়ী খাতভিত্তিক বরাদ্দের প্রস্তাব করেছে পরিকল্পনা কমিশন। এতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ পেয়েছে পরিবহন ও যোগাযোগ অবকাঠামো খাত। এরপর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বেড়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের বর্ধিত সভায় এডিপি চূড়ান্ত করা হয়েছে তবে এনইসি সভায় বরাদ্দ পরিবর্তনও হতে পারে।
করোনার কারণে গত দুই বছর এডিপির আকার তেমন বাড়ানো হয়নি। গত দুই বছরে এডিপির আকার (সংশোধিত এডিপি ধরে) বেড়েছে ৪ থেকে ৭ শতাংশ। আগামী অর্থবছরে এডিপির আকার বাড়ছে ১৩ শতাংশের মতো। চলতি অর্থবছরে মূল এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা। কাক্সিক্ষত হারে বাস্তবায়ন না হওয়ায় এডিপির আকার সংশোধন করে ২ লাখ ১৭ হাজার ১৭৫ কোটি টাকা করা হয়। আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত এডিপির আকার বেড়েছে প্রায় ২৯ হাজার কোটি টাকা।
এদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে প্রকল্প বাস্তবায়ন গতানুগতিক ধারায় আছে। গত জুলাই-মার্চ মাস সময়ে সংশোধিত এডিপির ৪৫ শতাংশের মতো বাস্তবায়ন হয়েছে। খরচ হয়েছে ৯৮ হাজার ৯৩৪ কোটি টাকা।