পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান তার দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) কর্মী ও সমর্থকদের ইসলামাবাদের প্যারেড গ্রাউন্ডে জড়ো হয়ে ‘ঐতিহাসিক শক্তি’ প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন। তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে রোববার লাখ লাখ মানুষ ইসলামাবাদে জড়ো হয়েছেন বলে দেশটির গণমাধ্যমের খবরে জানানো হয়েছে।
দেশটির সংসদের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদে ইমরান খানের বিরুদ্ধে বিরোধী দলের অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়েছে। গত ০৮ মার্চ রাজধানী ইসলামাবাদে বিরোধী দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি ও মুসলিম লীগের (নওয়াজ) নেতৃত্বে ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবের আবেদন করে। সেই সময় দেশটির বিরোধীরা পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে দাবি তোলেন—‘হয় পদত্যাগ করুন, নয়তো অনাস্থা ভোটের মুখোমুখি হোন’।
শুক্রবার জাতীয় পরিষদে অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপনের তারিখ ছিল। কিন্তু শুক্রবারের অধিবেশনে সম্প্রতি জাতীয় পরিষদের মারা যাওয়া সদস্য খায়াল জামান, সাবেক প্রেসিডেন্ট রফিক তারার ও উচ্চকক্ষ সিনেটের সদস্য রেহমান মালিকের বিদেহী আত্মার প্রার্থনা করা হয়। পরে আগামীকাল সোমবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত জাতীয় পরিষদের অধিবেশন মুলতবি ঘোষণা করেন স্পিকার আসাদ কায়সার।
দেশটির ইংরেজি দৈনিক এক্সপ্রেস ট্রিবিউন বলছে, পিটিআই নেতা ইমরান খানের প্রতি সমর্থন দেখাতে রোববার ইসলামাবাদে লাখ লাখ মানুষ জমায়েত হয়েছেন। ইমরান খান আজকের এই সমাবেশকে ঐতিহাসিক হিসেবে উল্লেখ করে দলীয় নেতা-কর্মীদের ইসলামাবাদে আসার আহ্বান জানান।
রোববার স্থানীয় সময় বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে লাখো জনতার উদ্দেশ্যে ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে ইমরান খানের। সমাবেশের আগে দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দশ্যে দেওয়া এক অডিও বার্তায় ইমরান খান ২৭ মার্চের সমাবেশকে ‘পাকিস্তানের জন্য লড়াইয়ের দিন’ বলে অভিহিত করেছেন।
পাকিস্তানের এই প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমরা পিটিআইকে বাঁচাতে রাস্তায় নামিনি, আমরা পাকিস্তানের জন্য লড়াই করতে বেরিয়েছি।’ অডিওতে যানজটে যাতে অচলাবস্থা তৈরি না হয়, সেজন্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠানস্থলে চলে যাওয়ার আহ্বান জানান ইমরান খান। তিনি বলেন, ‘পিটিআই আজ ইতিহাস গড়তে বেরিয়েছে।’
গত বছরের মার্চে বিরোধীদের দাবিতে প্রথমবারের মতো অনাস্থা ভোটের মুখোমুখি হয়েছিলেন ইমরান খান। তবে সেই সময় অল্প ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়ে বিপদ উৎরে যান ক্রিকেট তারকা থেকে প্রধানমন্ত্রীর মসনদে আসীন ইমরান। পাকিস্তানের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদে আয়োজিত সেই আস্থা ভোটে জয়ের জন্য ইমরানের ১৭২টি ভোটের প্রয়োজন হলেও তিনি পেয়েছিলেন ১৭৬ ভোট।
ভোটের আগে লাপাত্তা ইমরানের দলের ৫০ এমপি
এদিকে, ইমরান খানের বিরুদ্ধে সংসদে অনাস্থা প্রস্তাবের সময় ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে দেশটির ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) ৫০ জনের বেশি মন্ত্রী আড়ালে চলে গেছেন। ইমরান খানের দলেরও ওই মন্ত্রীদের গত কয়েক দিন ধরে জনসম্মুখে দেখা যাচ্ছে না বলে শুক্রবার দেশটির ইংরেজি দৈনিক এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে এক্সপ্রেস ট্রিবিউন বলছে, নিখোঁজ মন্ত্রীদের মধ্যে ২৫ জন ফেডারেল মন্ত্রী, প্রাদেশিক উপদেষ্টা, বিশেষ সহকারী এবং চারজন প্রাদেশিক মন্ত্রী, চারজন উপদেষ্টা ও ১৯ জন বিশেষ সহকারী রয়েছেন।
প্রাদেশিক মন্ত্রীরা আড়ালে গেলেও দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের প্রতি এখনও দলীয় ফেডারেল মন্ত্রীদের সমর্থন রয়েছে বলে জানিয়েছে এক্সপ্রেস ট্রিবিউন। ক্ষমতার ভিতে কম্পন ধরায় পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশি, তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী, জ্বালানি মন্ত্রী হাম্মাদ আজহার, প্রতিরক্ষামন্ত্রী পারভেজ খাট্টাক এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ রাশিদ সেই মন্ত্রীদের মধ্যে রয়েছেন, যারা ইমরান খানকে রক্ষায় চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে, আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে দেশটির বিরোধীদলীয় আইনপ্রণেতাদের অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপনের সময় পিছিয়ে গেছে। দেশটির সংসদের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদের স্পিকার আসাদ কায়সার আগামী ২৮ মার্চ বিকেল ৪টা পর্যন্ত অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেছেন। সেই সুযোগে ইমরান খান গদি বাঁচাতে দলীয় মিত্রদের সঙ্গে জোর তৎপরতা শুরু করেছেন।