গোয়া বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের ভরাডুবির পর দলনেতা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ব্যঙ্গ করে কয়েকদিন আগে আলোচনায় আসে বাংলা ছবির অভিনেত্রী রূপা দত্তের নাম।
নিজের টুইটার হ্যান্ডেল থেকে প্রকাশিত একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, মমতার বক্তব্যের প্যারডি করছেন তিনি।
এর দু’দিন পরই কলকাতার আন্তর্জাতিক বইমেলায় নারীদের পার্স চুরির অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় তাকে।
পুলিশ তার কাছ থেকে একটি ডায়েরি উদ্ধার করেছে বলে দাবি করেছে, যেখানে তিনি কোথা থেকে কত টাকা চুরি করেছেন তার প্রতিটা ঘটনার তথ্য আছে। আদালতে অবশ্য নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন রূপা।
কিন্তু এই ঘটনার পর প্রশ্ন উঠেছে যে, বিজেপি বহু নেতার ছবি থাকা এই অভিনেত্রী আসলে ক্লেপ্টোম্যানিয়াতে আক্রান্ত কি না। ক্লেপ্টোম্যানিয়া হলো এমন এক ধরনের মানসিক সমস্যা যাতে আক্রান্ত ব্যক্তি কোনো কিছু চুরি করার আকাঙ্ক্ষাকে দমন করতে পারেন না।
বইমেলা থেকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর রূপাকে পুলিশ হেফাজতে পাঠানো হয়েছে। শাসক দল বা বিরোধী রাজনৈতিক দল কেউই এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
তবে এই ঘটনা কয়েক বছর আগে মুক্তি পাওয়া ‘সিমরন’ ছবিতে কঙ্গনা রানাওয়াতের চরিত্রের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। ওই সিনেমাতে কঙ্গনা ক্লেপ্টোম্যানিয়াতে ভোগা একটি মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেন। এতে দেখা যায় বুবলি নামে চরিত্রটি কিভাবে অকারণে নানা জিনিস চুরি করেন।
এটা কি মানসিক সমস্যা?
রূপার এই মানসিক সমস্যা রয়েছে কি না কেউ কেউ সে প্রশ্ন তুলছেন। যদিও রূপা বা তার আইনজীবী কেউই আদালতে এমন কোনো দাবি করেননি। তবুও প্রশ্ন উঠছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আসলে এটি ইমপালস কন্ট্রোল সম্পর্কিত একটি গুরুতর মানসিক সমস্যা। যার মধ্যে এই সমস্যা তৈরি হয় তিনি আবেগ এবং আচরণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না।
এই সমস্যায় ভোগা ব্যক্তি কোনো প্রয়োজনে বা পরিকল্পিতভাবে চুরি করেন না বা এই কাজে অন্যের সাহায্য নেন না। এমনকি তিনি মানুষের কোনো শারীরিক ক্ষতিও করেন না। তিনি শুধু চুরি করতে পছন্দ করেন।
মনোবিদ ডা. সুমন্ত হাজরা বলছেন, মেলা বা অন্য জনবহুল জায়গায় ঘুরে ঘুরে মানুষের পার্স বা টাকা চুরি করে নিয়ে যাওয়া রূপার মতো অভিনেত্রীর চরিত্রের সঙ্গে মেলে না। তার ক্লেপ্টোম্যানিয়া সমস্যা হতে পারে। তবে সেটা তদন্ত করতে হবে।
কে এই রূপা দত্ত?
রূপা দত্ত বাংলা চলচ্চিত্র জগতের মোটামুটি পরিচিত অভিনেত্রী। তিনি অনেক সিরিয়াল এবং টিভি শোতেও অভিনয় করেছেন। জয় মা বৈষ্ণো দেবী নামে একটি হিন্দি ধারাবাহিকেও মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি।
মুম্বাইয়ে তার একটি অভিনয় স্কুলও রয়েছে, যেটির উদ্বোধন করেছিলেন বিজেপি নেতা সৈয়দ শাহনওয়াজ হুসেন। রূপার সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় এবং অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে ছবি রয়েছে। তার নিজের ক্যারাটে ব্ল্যাক বেল্ট রয়েছে বলেও দাবি করেছেন তিনি।
২০২০ সালে বলিউড পরিচালক অনুরাগ কাশ্যপের বিরুদ্ধে অশ্লীল মেসেজ পাঠানোর অভিযোগ এনে আলোচনায় আসেন রূপা দত্ত।
তিনি অভিযোগ করেছিলেন যে অনুরাগ কাশ্যপ তাকে অশ্লীল মেসেজ পাঠাচ্ছেন এবং এই ধরনের লোকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত কিন্তু পরে জানা যায় যে তিনি যে অনুরাগের কথা বলছিলেন তিনি পরিচালক অনুরাগ কাশ্যপ নন, অন্য কেউ ছিলেন।
আর সর্বশেষ গোয়া বিধানসভায় তৃণমূল কংগ্রেসের হার নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমালোচনা ও ব্যঙ্গ করেছিলেন তিনি।
আসলে কী হচ্ছে
কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় আবর্জনার ফেলার জায়গায় রূপাকে একটি পার্সে ফেলে দেওয়ার সময় সন্দেহের বশে তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে তল্লাশি চালায় পুলিশ।
এ সময় তার কাছ থেকে কিছু পার্স ও নগদ প্রায় ৭০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। এ নিয়ে সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেননি রূপা। এরপর তাকে আটক করে বিধাননগর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
থানার এক কর্মকর্তা বলছেন, রূপা চুরি ও পকেটমারের বেশ কয়েকটি ঘটনার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি স্বীকার করেছে যে তিনি প্রায়ই চুরি করার উদ্দেশ্যে জনবহুল জায়গায় এবং হাই-প্রোফাইল পার্টিতে যেতেন। শুধু তাই নয়, তিনি একটি ডায়েরিও সব লিখে রাখতেন।