লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তিনজনের বেশি কর্মকর্তা একত্রিত হয়ে শলাপরামর্শ করতে পারবে না- এমন আদেশ জারি করেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু তাহের। তবে আদেশ জারির একদিন পর আলোচনা সমালোচনার মুখে তিনি আবার সেটি সংশোধনও করে দিয়েছেন।
এ ঘটনায় উপজেলা এবং জেলাব্যাপী বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। অফিস আদেশটি কেউ একজন এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করে দিয়েছেন।
তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু তাহেরের সঙ্গে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল অফিসার ডা. রেজাউল করিম রাজিবের অভ্যন্তরীণ বিরোধের জেরে তিনি এ আদেশ জারি করেছেন।
তার আদেশের বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন বলছেন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নিজে এ আদেশ জারি করতে পারেন না।
স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু তাহের তার স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে উল্লেখ করেন, ‘ইদানিং লক্ষ্য করা যাইতেছে যে কোনো কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারীগণ তিন বা তার বেশি সংখ্যক একত্রিত হয়ে শলাপরামর্শ করে থাকেন৷ যাহা রাষ্টীয়, সামাজিক কিংবা পারিবারিক, সরকারি চাকরির আচরণ বহিভূর্ত। যদিও কোনো কাজ করার প্রয়োজন মনে করিলে নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে যৌক্তিকতার মাধ্যমে উপস্থাপন করার জন্য সবাইকে নির্দেশনা প্রদান করা গেল।
উল্লেখ্য, ইহার ব্যত্যয় হলে তাহার ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য লিখিতভাবে জানানো হইবে। ‘
আদেশের অনুলিপি লক্ষ্মীপুর সিভিল সার্জন, কমলনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার, মেডিক্যাল অফিসারগণ এবং নার্সিং সুপার ভাইজারদের দেওয়া হয়।
এদিকে হঠাৎ কেন একজন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা তার অধিনস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশ্য এ ধরনের আদেশ দিয়েছেন- তা নিয়ে সর্বত্র এখন আলোচনা এবং সমালোচনা চলছে। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু তাহেরের সঙ্গে দীর্ঘদিন থেকে মনোমালিন্য চলে আসছে তারই অধিনস্ত চিকিৎসকদের। এর কারণ হিসেবে জানা গেছে, করোনাকালীন চিকিৎসকদের জন্য আসা বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধা আবু তাহের নিজেই হাতিয়ে নিয়েছেন। এতে বঞ্চিতদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ ছিল। এছাড়া ওই সময় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভেতরে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির সাতটি গাছ প্রায় দুই লাখ টাকায় বিক্রি করে দেন ডা. আবু তাহের। এসব বিষয় নিয়ে তার অধিনস্ত চিকিৎসকরা প্রতিবাদ করায় তাদের চাপে রাখতেই গত ৭ মার্চ ‘বিতর্কিত’ একটি আদেশ জারি করেন ডা. আবু তাহের।
হাসপাতালের একটি সূত্র বলছে, আদেশটি দেওয়ার পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ডা. আবু তাহরকে তিরস্কার করেন এবং বিভাগীয় পর্যায়ে জবাব দিতে বলেছেন।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক রেজাউল করিম রাজিব বাংলানিউজকে বলেন, ডা. আবু তাহেরের অধিনে আমরা কর্মরত আছি। আমরা কেউ যদি নিয়মের বাইরে কোনো কাজ করে থাকি তাহলে আমাদের নামে সরাসরি তিনি চিঠি ইস্যু করতে পারতেন। বা আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আছে, তাদের কাছে আমাদের নামে অভিযোগ দিতে পারেন। কিন্তু নিয়ম বহির্ভূতভাবে তিনি একটি অফিস আদেশ দিয়েছেন। যা কোনো নীতিমালার মধ্যেই পড়ে না।
ডা. আবু তাহেরের সঙ্গে মনোমালিন্যের বিষয়ে তিনি বলেন, ব্যক্তিগত কারণে কারো সঙ্গে আমার সখ্যতা কম-বেশি থাকতে পারে। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সঙ্গে আমার একটু দূরত্ব আছে, এবং অন্যদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক। এটা থাকতেই পারে। কিন্তু সেটাকে পুঁজি করে তো আর অফিস আদেশ দিতে পারো না।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু তাহের বাংলানিউজকে বলেন, কারো সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত বিরোধ নেই। দেশের স্বার্থে, হাসপাতালের স্বার্থে এবং রোগীদের স্বার্থে আমি অফিস আদেশ দিয়েছি- যেন হাসপাতালে চিকিৎসকরা দায়িত্ব পালনকালে একাধিক লোক জড়ো হয়ে গল্প-গুজব করতে না পারে। হাসপাতালের কয়েকজন চিকিৎসক তাদের দায়িত্ব পালন না করে গল্প গুজব করে। এতে রোগীদের ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়। আমি মৌখিকভাবে বেশ কয়েকবার তাদের সতর্ক করলেও তারা এতে কর্ণপাত না করায় অফিস আদেশটি করেছি।
আদেশের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের তিরস্কারের বিষয়ে তিনি বলেন, অফিস আদেশটি নিয়ম মেনেই দেওয়া হয়েছে। তবে শব্দ চয়নে কিছুটা ত্রুটি ছিল, সেটা সংশোধন করা হয়েছে। দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে একাধিক ব্যক্তি একসঙ্গে বসে আলোচনা করতে পারেন, কিন্তু ব্যক্তিগত কাজে অফিস চলাকালীন একাধিক ব্যক্তি এক সঙ্গে বসে শলাপরামর্শ করতে পারে না।
ওই আদেশে স্মারক নাম্বার পড়েনি, কিন্তু এর আগেই কেউ একজন চক্রান্ত করে এটি ফাঁস করে দিয়েছে- বলেন আবু তাহের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা সিভিল সার্জন ডা. আহমেদ কবির বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এ ধরনের আদেশ দিতে পারেন না। তবে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকদের সঙ্গে তার মনোমালিন্যের বিষয়টি জানতে পেরেছি। আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে।