পাবনা জেলা পুলিশের সহযোগিতায় হারিয়ে যাওয়ার ছয় বছর পর পরিবার ফিরে পেয়েছে মো. আমানউল্লাহ (১২) নামের এক শিশু। বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় পরিবারের সদস্যদের কাছে শিশুটিকে হস্তান্তর করে আতাইকুলা থানা পুলিশ। এ সময় হারানো সন্তানকে ফিরে পেয়ে পরিবারে তৈরি হয় এক আবেগঘন পরিবেশ।
থানা সূত্রে জানা গেছে, এসআই শহিদুর রহমান গত ১৫ ফেব্রুয়ারি পাবনা জেলার আতাইকুলা থানার আতাইকুলা ইউপি এলাকায় ডিউটি করাকালীন ৯৯৯-এর সংবাদের ভিত্তিতে আমানউল্লাহকে উদ্ধার পরে থানায় নিয়ে আসেন। বিষয়টি পাবনা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান জেলা পুলিশ পাবনার ফেসবুক পেজে প্রচার করেন।
পরে বুধবার এসআই শহিদুর রহমান শিশু আমানউল্লাহর বাবার ঠিকানা খুঁজেতে বেরিয়ে পড়েন। তাকে নিয়ে ধর্মগ্রাম গ্রামে যান। একপর্যায়ে আটঘরিয়া থানার শিবপুর বাজারে শিশুটিকে নিয়ে উপস্থিত হলে এক ব্যক্তি শিশুটিকে দেখে বলেন যে শিশুটির চেহারা সাঁথিয়া থানার নারিয়াগোদাই গ্রামে তার পরিচিত হাসান আলীর চেহারার মতো (শিশুর আপন চাচা) দেখা যায়।
পরে এসআই শহিদুর রহমান শিশুটিকে সঙ্গে নিয়ে সাঁথিয়া থানাধীন নারিয়াগোদাই গ্রামস্থ হাসান আলীর বাড়িতে যাওয়ামাত্রই বাড়ির লোকজন শিশুটিকে চিনতে পারে। শিশুটির আপন দাদি, চাচা, ফুফুসহ স্থানীয় লোকজন শিশুটিকে তাদের ছয় বছর আগে হারিয়ে যাওয়া শিশু আমানউল্লাহ হিসেবে শনাক্ত করেন।
আমানউল্লাহর চাচা মো. হাসান আলী জানান, ছয় বছর আগে শিশুটির মা তার বাবাকে ছেড়ে শিশুটিকে ফেলে রেখে অন্যত্র বিয়ে করে চলে যান।
শিশুর পরিবার জানায়, আমানউল্লার পরিবার দরিদ্র হওয়ায় তার বাবা তাকে ঢাকায় তার আপন ভাতিজা মো. রফিকের কাছে তার বাসায় কাজের জন্য রেখে আসেন। আমানউল্লাহ ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত উক্ত বাসায় থাকাকালে রাতে বিছানায় প্রস্রাব করার কারণে বাসার লোকজন তাকে বের করে দিলে সে অন্যত্র চলে যায়। এদিকে তাকে খুঁজে না পাওয়ায় ডিএমপি দারুস সালাম থানায় একটি হারানো জিডি করা হয়।
এদিকে আমানউল্লাহ বাসা খুঁজে না পেয়ে গাবতলী, সাভার, সাভারের উলাইনসহ জামালপুর জেলার বিভিন্ন জায়গায় তার মা-বাবার ঠিকানা খুঁজতে থাকে এবং পাশাপাশি বিভিন্ন লোকের দোকানে কাজকর্ম করে।
অন্যদিকে সন্তান হারানোর পর তার বাবা সিরাজুল ইসলাম ঢাকায় গিয়ে বিভিন্ন জায়গায় খুঁজতে থাকেন। তিনি সন্তাকে পেতে ঢাকার গাবতলীর বিভিন্ন কারখানায় কাজকর্ম করেন। তবু খুঁজে পাননি সন্তানকে।
তিনি বলেন, ছয় বছর আগে ছেলেকে হারিয়েছি। দিশেহারা হয়ে ঢাকার অলিতে-গলিতে খুঁজে ফিরেছি। ছেলেকে পাওয়ার আশায় গাবতলী এলাকায় শ্রমিকের কাজ করেছি। একসময় আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম। ছয় বছর পর আজ আমাদের পরিবারে শান্তি ফিরেছে।
আতাইকুলা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জালাল উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ৯৯৯ নম্বরে কল এলে আমি সেখানে পুলিশের ফোর্স পাঠিয়ে ছেলেটিকে উদ্ধার করে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছি। অনেক দিন পর ছেলেকে ফিরে পেয়ে বাড়িতে স্বজনদের মধ্যে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। ছেলেটিকে প্রকৃত পরিবারের কাছে ফিরে দিতে পেরে আমাদেরও খুব ভালো লাগছে।