বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালক ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেডের সাবেক পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে দুই বছর আগে প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা হয়।
দীর্ঘ সময় পর আজ (সোমবার) লোকমান হোসেন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে চার্জশিট অনুমোদন দিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অনুমোদিত চার্জশিটে মামলার তুলনায় বেড়েছে অবৈধ সম্পদের পরিমাণ। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অস্ট্রেলিয়ায় ছেলের কাছে প্রায় ৫৭ লাখ টাকা পাচারের অভিযোগ।
বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, তদন্তকারী কর্মকর্তার প্রতিবেদনের সুপারিশের আলোকে কমিশন থেকে চার্জশিট দাখিলের প্রস্তাব অনুমোদন প্রদান করা হয়েছে। শিগগিরই যা আদালতে দাখিল করা হবে।
তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, আসামি লোকমান হোসেন ভূঁইয়া বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা ও অবৈধ কার্যক্রমের মাধ্যমে ছয় কোটি ৭২ লাখ ৬৩ হাজার ৫৭৩ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত অবৈধ সম্পদ অর্জন করে নিজ ভোগ-দখলে রেখেছেন।
এছাড়া লোকমান হোসেন ভূঁইয়া তার স্ত্রী নাবিলা লোকমান ও ছেলে লাবিব জুহায়ের হোসেনের নামে অস্ট্রেলিয়ার অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড ব্যাংকিং গ্রুপ (এএনজেড), কমনওয়েলথ ব্যাংক অব অস্ট্রেলিয়া (সিবিএ) ও জেস্ ন্যাশনাল অস্ট্রেলিয়া ব্যাংক লিমিটেড (এনএবি) নামের তিন ব্যাংকের ৭টি ব্যাংক হিসাবে অস্ট্রেলিয়া ও দুবাই থেকে প্রায় এক লাখ অস্ট্রেলিয়ান ডলার নগদে ও ট্রান্সফারের মাধ্যমে জমা করেছেন।
বিভিন্ন ব্যক্তির নামে ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে বাংলাদেশি টাকায় (প্রতি অস্ট্রেলিয়ান ডলার=৫৭ দশমিক ৬৩ টাকা) ৫৭ লাখ ৬৩ হাজার ৮০ টাকা পাচার করেছেন। এসব টাকা তিনি অবৈধ কার্যক্রমের মাধ্যমে অর্জন ও পাচার করে অস্ট্রেলিয়ার ওই ব্যাংক হিসাবে জমা করেছেন।
ওই টাকা ফিরিয়ে আনতে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মিউচ্যুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর) পাঠায় দুদক। এখনও আসেনি সেই জবাব।
সার্বিক তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনায় দুদক দেখতে পায়, আসামি মো. লোকমান হোসেন ভূঁইয়ার নামে তিন কোটি ৮০ লাখ ৫৯ হাজার ২৩২ টাকার স্থাবর সম্পদ এবং ৩ কোটি ৯২ লাখ সাত হাজার ৩১৫ টাকার অস্থাবর সম্পদসহ মোট সম্পদের পরিমাণ সাত কোটি ৭২ লাখ ৬৬ হাজার ৫৪৭ টাকা । যেখান থেকে দায়-দেনা বাদ দিলে অবৈধ সম্পদের পরিমাণ পাওয়া যায় ছয় কোটি ৭২ লাখ ৬৩ হাজার ৫৭৩ টাকা।
২০১৯ সালের ২৭ অক্টোবর দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে চার কোটি ৩৪ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে লোকমান হোসেন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। সংস্থাটির সহকারী পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
মামলায় দুর্নীতি দমন কমিশন আইন , ২০০৪ এর ২৭ ( ১ ) ধারা ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ২০১২ এর ৪ ( ২ ) ও ৪ ( ৩ ) ধারায় অভিযোগ আনা হয়।
২০১৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর মতিঝিলের ঐতিহ্যবাহী মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবে অভিযান চালিয়ে দুটি রুলেট টেবিল, নয়টি বোর্ড, বিপুল পরিমাণ কার্ড, ১১টি ওয়্যারলেস সেট ও ১০টি বিভিন্ন ধরনের চাকু পেয়েছিল পুলিশ। এর তিন দিন পর ২৬ সেপ্টেম্বর লোকমান হোসেন ভূঁইয়াকে তার রাজধানীর তেজগাঁও মনিপুরীপাড়া থেকে আটক করা হয়। তার বিরুদ্ধে প্রথমে মাদক ও পরে অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা হয়। এরপর দফায় দফায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশের এলিট ফোর্স র্যাব ও দুদক।
জিজ্ঞাসাবাদে ঢাকার মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের অন্যতম পরিচালক লোকমান ভূঁইয়া র্যাবকে জানায়, ক্যাসিনো থেকে প্রতিদিন ৭০ হাজার টাকা করে নিতেন তিনি। ঢাকার বিভিন্ন ক্লাবে অবৈধভাবে ক্যাসিনো পরিচালনার সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন নেতার সম্পৃক্ততার তথ্য। তাদের কয়েকজন গ্রেপ্তারও হন। লোকমানের দাবি ছিল, রাজনৈতিক চাপের মুখে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ঘর জুয়ার জন্য ভাড়া দিতে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি।
২০১৯ সালের ৩ নভেম্বর সম্পদের মামলায় লোকমান ভূঁইয়াকে সাতদিনের জন্য রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। ২০২০ সালের ১৮ মার্চ মহানগর বিশেষ জজ আদালত থেকে জামিন পান লোকমান। ১৯ মার্চ কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি। যদিও পরে জামিনের বিরুদ্ধে আপিল করে দুদক।
দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান এ বিষয়ে ঢাকা পোস্টকে বলেন, লোকমান হোসেনে বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদের মামলা তদন্ত পর্যায়ে রয়েছে। ক্যাসিনোকাণ্ডে যাদেরই সম্পৃক্ততা রয়েছে, তাদের বিষয়ে আমাদের শক্ত অবস্থান রয়েছে। আমরা সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে প্রমাণ করে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য চেষ্টা করবো। তার জামিনের বিরুদ্ধে আমাদের আপিল অপেক্ষমাণ অবস্থায় রয়েছে। শিগগিরই এ বিষয়ে শুনানি হবে।