মিয়ানমারের প্রধান বিচারপতিসহ দেশটির একাধিক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ও সংস্থার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডা। সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের বর্ষপূর্তিতে সোমবার (৩১ জানুয়ারি) নতুন এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে দেশ তিনটি।
সোমবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা। নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসা কর্মকর্তার মধ্যে মিয়ানমারের অ্যাটর্নি জেনারেল থিডা ও, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি টুন টুন ও এবং দেশটির দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ইউ টিন ও রয়েছেন।
সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ জানিয়েছে, মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকীতে সামরিক জান্তার সাথে যুক্ত কিছু ব্যক্তি ও সংস্থার বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসা ব্যক্তিরা মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চির রাজনৈতিক ‘উদ্দেশ্য প্রণোদিত’ বিচার কাজের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সংশ্লিষ্ট। এছাড়া যুক্তরাজ্য ও কানাডাও পৃথকভাবে নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিয়েছে।
মিয়ানমারের ওই তিন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার পাশাপাশি নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত অন্য দু’টি সংস্থা হচ্ছে, কেটি সার্ভিসেস অ্যান্ড লজিস্টিক কোম্পানি লিমিটেড এবং ডিফেন্স সার্ভিসের কমান্ডার-ইন-চিফের ডিরেক্টরেট অব প্রকিউরমেন্ট। এই দু’টি সংস্থার বিরুদ্ধে মিয়ানমারের সামরিক শাসনকে সমর্থন করার অভিযোগ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
সংবাদমাধ্যম বলছে, নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা ব্যক্তি এবং সংস্থাগুলোর যুক্তরাষ্ট্রে থাকা সবরকম সম্পদ বাজেয়াপ্ত থাকবে।
অন্যদিকে মিয়ানমারের অ্যাটর্নি জেনারেল থিডা ও, দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ইউ টিন ও এবং ইউ থেইন সোয়ে নামে তৃতীয় এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা জানিয়েছে যুক্তরাজ্য। সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেইন সোয়ে মিয়ানমারের নির্বাচন কমিশনের প্রধান হিসেবে নিয়োগ পান।
এছাড়া এক বিবৃতিতে কানাডার সরকার জানিয়েছে, সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পর গত বছরজুড়ে মিয়ানমারে মানবিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতিতে কার্যত কোনো কাজই করেনি জান্তা সরকার। আর তাই ওয়াশিংটনের নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা ওই তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে কানাডাও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে।
গত বছরের ১ ফেব্রয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সুচির নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। রক্তপাতহীন এই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেন মিয়ানমারের সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লেইং। পরে অং সান সুচি ও তার দল এনএলডির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের আটক করা হয় এবং বর্তমানে সু চিসহ তাদের বেশিরভাগই গৃহবন্দি বা কারাবন্দি অবস্থায় আছেন।
পর্যবেক্ষক সংস্থা অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স (এএপিপি)-র তথ্য অনুযায়ী, সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পর থেকে জান্তা সরকারের হাতে দেশটিতে ১২০০-র বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন এবং ৭ হাজারের বেশি মানুষকে কারাগারে বন্দি করে রাখা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, মিয়ানমারের জান্তা সরকার গণতন্ত্রপন্থি বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতার নৃশংস কর্মকাণ্ডে জড়িত। গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চি, ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টসহ বিক্ষোভকারী, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীদের অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে দেশটি বলেছে, অভ্যুত্থানের পর থেকে তাদের অন্যায়ভাবে আটক রাখা হয়েছে।